রাজধানীর হাজারীবাগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) পৃথক অভিযান চালিয়ে খুলনার ডুমুরিয়া ও ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন—মো. নাইম খান, মো. জাহিদুর রহমান রিফাত ও মো. আবু তাহের শিকদার শাওন। নাইম খানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
ডা. এ কে এম আব্দুর রশিদ অধিকাংশ সময় যুক্তরাজ্যে থাকতেন। মাঝে-মধ্যে তিনি বাংলাদেশে আসতেন। গত ১৫ নভেম্বর রাতে হাজারীবাগ থানাধীন পশ্চিম ধানমন্ডির রোড নং-৮/এ এর ২৯৪/১ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলায় তিনজন দুষ্কৃতকারী ঢোকে। ডা. আব্দুর রশিদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। আব্দুর রশিদের স্ত্রী সুফিয়া রশিদ পাশের কক্ষ থেকে এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে একজন তার মুখ চেপে ধরে। একপর্যায়ে দুষ্কৃতকারীরা ধারালো চাকু দিয়ে ডা. আব্দুর রশিদের বুকে একাধিকবার আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এ সময় সুফিয়া রশিদের চিৎকারে দুষ্কৃতকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। ডা. আব্দুর রশিদকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ডা. আব্দুর রশিদের চাচাতো ভাই মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে গত ১৫ নভেম্বর হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ, ঘটনার আগে বিভিন্ন সময়ে ওই ভবনে থাকা মেসে বসবাসকারীদের তথ্য সংগ্রহ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। ২৯ নভেম্বর দুপুরে খুলনার ডুমুরিয়ার শাহপুর বাজার এলাকা থেকে নাইম খান ও জাহিদুর রহমান রিফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। হাজারীবাগ থানার অপর একটি দল ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আবু তাহের শিকদার শাওনকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক তদন্ত ও গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, ডা. আব্দুর রশিদের বাসার একটি ফ্ল্যাটের মেসে বসবাস করতেন নাইম খান ও জাহিদুর রহমান। বকেয়া ভাড়া নিয়ে ডা. আব্দুর রশিদের স্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে তাদের মনোমালিন্য হয়। এতে তারা আব্দুর রশিদ ও তার স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হন।
নাইম খান ও জাহিদুর রহমান রিফাত বাড়ির মালিকের বাসায় ঢুকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক তারা গত ১৫ নভেম্বর রাতে আবু তাহের শিকদার শাওনকে সঙ্গে নিয়ে সীমানা প্রাচীর টপকে ডা. আব্দুর রশিদের বাসায় প্রবেশ করেন।
এ সময় ডা. আব্দুর রশিদ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য উঠলে ওই তিনজনের উপস্থিতি টের পান। আব্দুর রশিদ তাদের বাধা দিতে গেলে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ডা. আব্দুর রশিদের বুকে ধারালো চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়।