আইন ও অপরাধ

রায়ে বলা হয়েছে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ: শিশির মনির

২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা মামলায় আপিলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রবিবার (১ ডিভেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালাসের রায় দেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের বিচারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত।

রায়ের পর সাংবাদিকদের এ বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘‘ঘটনা ঘটেছে ২০০৪ সালে। তৎকালীন সরকারের অধীনে একটা তদন্ত কমিটি হয়েছিলো তবে তদন্ত রিপোর্ট হয়নি। ২০০৮ সালের ৯ জুন প্রথম একটি তদন্ত রিপোর্ট সাবমিট হয়। সেখানে ২৮ জনকে আসামি করা হয়। ৬১ জন সাক্ষী হয়ে যাওয়ার পর আবার তদন্ত করা হয়। এই তদন্তে এসে আরও ৩০ জনকে নতুন আসামি করা হয়। দ্বিতীয় তদন্ত করা হয় মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে। আদালতের সামনে প্রথম প্রশ্ন, মুফতি হান্নান যে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন উপমহাদেশের ৪০০ বছরের ফৌজদারি ইতিহাসে এই ধরনের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তি হয় কি না। আর হলে এর ওপর কোনো সাজা হয়েছে কি না।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা আদালতকে দেখিয়েছিলাম, এই ভারতীয় উপমহাদেশে বিগত ৪০০ বছরে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিকে ভিত্তি করে এই ধরনের সাজা কাউকে দেওয়া হয়নি। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো বাবর, পিন্টুসহ যাদের পরবর্তীতে চার্জশিটে আনা হয়েছে এ চার্জশিটের মূল ভিত্তি ছিলো রাজনৈতিক বিবেচনা। রাজনৈতিক বিবেচনায় তারা বিচার করেছে। কাকে কাকে আসামি করলে রাজনৈতিকভাবে দোষারুপ করা যাবে। প্রকৃত আসামি তারা খুঁজতে যায়নি।’’

তিনি বলেন, ‘‘আদালতের সামনে দুইটা মূল প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে। মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া যাবে কি না? আদালত বলেছে, ‘নো।’ মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে কাউকে সাজা দেওয়া যাবে না। প্রথমটা দাঁড়িয়েছে ফারদার ইনভেস্টিগেশন যে হয়েছে সেই রিপোর্ট আমলে গ্রহণকারী আদালত কোনটা হবে। আমলে গ্রহণকারী আদালত হয়েছে ট্রায়াল কোর্ট। অথচ আইনে আছে আমলে গ্রহণ করবে সব ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এখন দেখা গেছে আমলী আদালত আমলে গ্রহণ না করে বিচারিক আদালত আমলে গ্রহণ করেছে। হাইকোর্ট ডিভিশন বলেছেন, এটা বাংলাদেশের সব সিদ্ধান্তের আলোকে অবৈধ হয়েছে এবং এই জন্য এই ট্রায়ালকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।’’

শিশির মনির বলেন, ‘‘২১ আগস্টে যা হয়েছে আমরা ব্যথিত। আমরাও চাই ২১ আগস্টের বিচার হোক। কিন্তু যাকে ইচ্ছে আসামি করা যাবে না। এটা আরেক শিক্ষা। এভিডেন্স যদি না থাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় কারো ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে যদি বিচার করা হয় তাহলে তার শেষ পরিণতি ভালো হয় না। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’’

তারেক রহমান দেশে ফিরে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘তারেক রহমানকেও এ মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও তার মামলা আছে। আরেকটি মামলা আমরা করছি, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা। এই ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার শুনানি শেষ পর্যায়ে এসেছে। আমরা আশা করবো, ওই মামলায়ও একই ধরনের ফলাফল পাবো।'’

এক প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, ‘‘২১ আগস্টে যারা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন তাদের প্রতি আমরা অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। কিন্তু প্রকৃত অপরাধী যদি রাষ্ট্রপক্ষ বের করতে না পারে তাহলে বিচারটা হবে কার। ১০০ মানুষ খালাস পেলেও একজন নিরাপরাধকে আমরা সাজা দিতে পারি না। যারা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন সবার প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু এই বলে বাবর, তারেক রহমান, মুজাহিদ, সেলিম, পিন্টু যাকে ইচ্ছা তাকে সাজা দিত পারেন না। কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না। এজন্য যারা আহত হয়েছেন তাদের উচিত ছিলো সুনির্দিষ্ট আসামি খুঁজে বের করা। সুনির্দিষ্ট আসামি না খুঁজে আমরা খুঁজেছি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তাদের খুঁজতে গিয়ে সুনির্দিষ্ট আসামিরা ফাঁকতালে বেরিয়ে গেছে। আমরা খুঁজতেও যাইনি। এজন্য এইভাবে টর্চার করে ক্রিমিনাল জুরিসপ্রুডেন্স ব্যবহার করে যাকে ইচ্ছা তাকে সাজা দেওয়ার যে নীতি, এই নীতি কোনো সরকারের আমলে কারো জন্যই প্রযোজ্য হওয়া উচিত না।’’

ভিকটিমরা বিচার পাবে কিভাবে এমন প্রশ্নে শিশির মনির বলেন, ‘‘যারা ভিকটিম হয়েছেন তাদের জন্য প্রোপার ইনভেস্টিগেশন হবে কি না তা টোটাললি ডিপেন্ড করছে রাষ্ট্রের ওপর। রাষ্ট্র সেটি দেখবে। আমাদের কথা হলো কাউকে আপনি পান না? কে আসামি হবে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে তা যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে। তবে যদি প্রকৃত আসামি খুঁজে না পান এর অর্থ এই না যে যাকে ইচ্ছে তাকে সাজা দিবেন।’’