দেশে ৬৯টি কারাগার আছে। এগুলোর বন্দি ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার। ৫ আগস্টের পর ৫০ হাজারের বেশি বন্দি ছিল কারাগারগুলোতে। বর্তমানে ৬৫ হাজার কারাবন্দি আছে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে কারা সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।
তিনি বলেছেন, “কারাগারগুলোর মধ্যে ১৭টি অনেক পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো অতিদ্রুত সংস্কার, মেরামত ও পুনঃনির্মাণ করা দরকার।”
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, “৫ আগস্ট ও পরবর্তী সময়ে ২ হাজার ২০০-এর বেশি কারাবন্দি পালিয়েছিল। ১ হাজার ৫০০ জনকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক।”
এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, “বিভিন্ন মামলায় দাগি আসামি বা যাদেরকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে, তাদের ১১ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। জঙ্গি সদস্য যাদের বলা হচ্ছে, যারা জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, তাদের মধ্যে ১৭৪ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। জঙ্গি সদস্যদের মধ্যে এখনো পলাতক ৭০ জন। তাদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “চারজন জেল সুপারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে বেশকিছু অভিযোগের বিষয়ে পর্যালোচনা ও তদন্ত চলছে। নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কোন মামলার কোন আসামি জামিন পাচ্ছেন, তা আমরা জানানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা একটি হটলাইন চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। সেটি চালু হলে জানতে সুবিধা হবে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক বন্দির ওপর হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যখন আমরা কোনো বন্দিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই, কারাগারের বাইরে হলেও সে জায়গাটা কিন্তু কারা অধিদপ্তরে নিয়ন্ত্রণে বা আওতায়। কারণ, সেখানে নিরাপত্তায় কারারক্ষী থাকেন। নিরাপত্তা দুর্বলতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দির ওপর হামলা হয়েছিল। সেখানে কারারক্ষী ছিল ও তাদের হস্তক্ষেপের কারণেই ঘটনাটি বেশি দূর গড়াতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সেটা হচ্ছে, কারা হাসপাতাল। কারা হাসপাতালের কাজটি সম্পন্ন হলে কারাবন্দিদের আর সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন হবে না, তখন নিরাপত্তাহীনতাও থাকবে না।”
‘নানা মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে’ কারা অধিদপ্তরের লোগো পরিবর্তনের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার আমাদেরকে কারা অধিদপ্তরের লোগো পরিবর্তনের পরামর্শ বা মতামত দেয়নি। গত ৫ আগস্টের পর আমরা জনসাধারণের প্রচুর ফিডব্যাক পেয়েছি। সেটির মূল বিষয় ছিল—কারা অধিদপ্তর লোগো পরিবর্তন করা।”
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, “৫ আগস্ট-পরবর্তী কারাগারের প্রতিটি ঘটনা পর্যালোচনা করেছি। আমাদের কারাগারের অবকাঠামোগত দুর্বলতা ছিল। আরেকটি বহিঃনিরাপত্তা, যেটি পুলিশ সদস্যরা দিয়ে থাকেন। বহিঃনিরাপত্তার অনুপস্থিতির কারণে আমরা কারাগার থেকে পালানো ঠেকাতে পারিনি। আমরা অভ্যন্তরীণ ও বহিঃনিরাপত্তার কিছু দুর্বলতা শনাক্ত করেছি, সেগুলো সরকারকে জানানো হয়েছে।”
রাজনৈতিকভাবে যারা ডিভিশন পাওয়ার উপযুক্ত, তারা সবাই ডিভিশন পাচ্ছেন কি না, জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, “ডিভিশন পাওয়ার দুটি বিধান আছে। একটি হচ্ছে প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা, আরেকটি হচ্ছে সমাজের গণমান্য ব্যক্তি, মন্ত্রী-এমপিরা। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে হয়। এটা তাদের এখতিয়ার। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ডিভিশনের নির্দেশ দেন। অনেকে ডিভিশন পেয়েছেন। অনেকের ডিভিশন পাওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।”
চিকিৎসাধীন বন্দিদের নিরাপত্তা সম্পর্কে তিনি বলেন, “কোনো সরকারি হাসপাতালে কিন্তু প্রিজন সেল নেই৷ এটা আমাদের দুর্বলতা। সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে প্রিজন সেল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে।”
কারা কর্মচারীদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কারা বিষয়টি তো সার্ভিস। সিভিল সার্ভিস বিধানের আলোকে কারা কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির, উপ-মহাপরিদর্শক মনির আহমেদ, সহকারী মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মো. আবু তালেব, সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন ও মিডিয়া) মো.জান্নাত উল ফরহাদসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।