বিয়ের আগের সময়টাতে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া, গাড়িভাড়া, বাড়িঘর পরিচ্ছন্নতা এবং সাজানো-গোছানো সেইসব নিয়ে থাকে নানা ঝক্কিঝামেলা। সেই ঝক্কি-ঝামেলা কিছুটা কমাতে একটু চোখ বুলিয়ে নিন এই আয়োজনে। বিয়ের গাড়ি সাধারণত বরকে বহনের জন্য প্রাইভেটকারই বহুল প্রচলিত। যারা ভাড়ার প্রাইভেট কার ব্যবহার করতে চান, তাদের জন্য টয়োটার নরমাল প্রাইভেটকারগুলোই সহজলভ্য। সাধারণমানের এই প্রাইভেটকারগুলোর ভাড়া প্রতিদিন পনের’শ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। তবে যাদের আর্থিক সচ্ছলতা বেশি তারা অনেকেই একটু বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করতে চান। বিলাসবহুল গাড়িগুলোর ভিতরে ঢাকা শহরে ভাড়া পাওয়া যায় মার্সিডিস ব্রেঞ্জ, মিৎসুবিসি ল্যান্সার জিএল এক্স, টয়োটা করোলা জিএক্স ইত্যাদি এই গাড়িগুলোর ভাড়া প্রতি ১০ ঘণ্টার জন্য ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া জিপ গাড়ির ভেতরে পাওয়া যায় টয়োটা প্রাডো, হ্যারিয়ার, পাজেরো ইত্যাদি। এই গাড়িগুলোর ভাড়া পড়বে প্রতি ১০ ঘণ্টায় ১৫ হাজার টাকা। তবে বিয়েতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় মাইক্রোবাস। অধিক আসন থাকায় এবং সহজলভ্য হওয়ায় মাইক্রোবাসগুলো বেশি জনপ্রিয়। এবং মাইক্রোবাসগুলোর সুবিধা হচ্ছে খুব সাধারণভাবে এগুলো ব্যবহার করা যায়। ঢাকার মধ্যে এবং ঢাকার বাইরে মাইক্রোবাসের ভাড়ার পরিবর্তন হয়। নয় সিটের মাইক্রোবাসগুলো ঢাকার মধ্যে ভাড়া ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। আর ঢাকার বাইরে ভাড়া ৫ হাজার টাকা। ১২ সিটের মাইক্রোবাসের ভাড়া ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া টয়োটা নোয়া ও ভক্সির ভাড়া ঢাকার মধ্যে প্রতি ১০ ঘন্টায় ৪ হাজার টাকা এবং ঢাকার বাইরে সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা। এই গাড়িগুলো সাধারণত ৯ সিটের হয়ে থাকে। যেহেতু সময় হিসাবে গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় সেহেতু কতক্ষণের জন্য গাড়ি ভাড়া নিবেন সেই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে নিন। গাড়ি ভাড়া করতে হলে কমপক্ষে দু’দিন আগে বুকিং দেওয়া উচিত। গাড়ির জন্য আনুষঙ্গিক খরচ যেমন- টোল, পার্কিং চার্জ ইত্যাদি নিজেকেই বহন করতে হবে। জ্বালানি খরচ যিনি গাড়ি ভাড়া নেন, তার নিজেকেই বহন করতে হয়। (তবে অনেক সময় প্যাকেজ চুক্তিতেও গাড়ি ভাড়া নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে আনুষঙ্গিক কোনো খরচ যিনি ভাড়া করেন তাকে বহন করতে হয় না।) গাড়ি সাজানো বিয়ের সানাই একসময় বিয়ে মানেই সেই অনুষ্ঠানে সানাই বাজত। গ্রামেগঞ্জের বিয়েতে এখনো সানাইবাদকের কদর রয়েছে। যুগের চাহিদায় শহুরে বিয়েতে সেই সানাইয়ের বদলে এখন ডিস্ক জকি (ডিজে), ব্যান্ড পার্টি জায়গা করে নিয়েছে। এখন ব্যান্ডের বাদ্যবাজনা ছাড়া বিয়ের কথা কল্পনাই করা যায় না। বিয়েতে ব্যান্ডের জনপ্রিয়তাভেদে সাউন্ড সিস্টেমসহ খরচ পড়বে ১৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।বিয়ে বা হলুদের অনুষ্ঠানে ডিজে আনতে হলে অন্তত ১০ দিন আগে থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নিশ্চিত হলেই ডিজেরা নির্দিষ্ট সময়ে গায়ে হলুদ ও পুরো বিয়ে বাড়ি মাতিয়ে তুলবে ছন্দে আর গানে। আলপনা বিয়েবাড়ি মানেই সেই বাড়ির দেয়াল থেকে শুরু করে ঘরের মেঝে, এমনকি সিঁড়িতেও রংবেরঙের আলপনা আঁকা থাকবে।আলপনা আঁকানোর খরচটা নির্ভর করে বিয়েবাড়ির কতটুকু জায়গায় আলপনা আঁকানো হবে এর ওপর। দুই ধাপ সিঁড়ি আর দুটি মেঝেতে আলপনা করতে খরচ পড়বে পাচ হাজার টাকার মতো। আলপনা আঁকানোর জন্য চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আর তাদের বিয়ের দুই দিন আগে জানালেই তারা রং আর তুলির আঁচড়ে সুন্দর করে আলপনা এঁকে দেবে আপনার বিয়েবাড়িতে। বিয়ের মঞ্চ সাজানো বর-কনের মতোই বিয়ের আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে বিয়ের মঞ্চ। বর-কনে একসঙ্গে সেই মঞ্চে বসে থাকে। আর বিয়েটা মূলত সেই মঞ্চেই অনুষ্ঠিত হয়। যাঁরা গায়ে হলুদের মঞ্চ এবং বাসরঘর সাজান, তাঁরাই বিয়ের মঞ্চ সাজিয়ে দেন। বিয়ের মঞ্চ সাধারণত তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়। মঞ্চে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে অল্প কিছু কৃত্রিম ফুলও ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া লাল সালু কাপড় ও টিস্যু কাগজ ব্যবহার করা যায়। ডিজাইনভেদে বিয়ের মঞ্চ সাজাতে খরচ পড়বে দুই হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফুল দিয়ে ঘর সাজানো বিয়েতে ঘর সাজানো একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত—সবাই বিয়েতে বাসর ঘরটিকে ফুলে ফুলে সাজিয়ে দিতে চায়। গাঁদা ফুল, গোলাপ, টিউলিপ, রজনীগন্ধা ও বেলিসহ বাহারি সব ফুল দিয়ে বাসরঘর সাজানো হয়। একটা বাসরঘর সাজাতে খরচ পড়বে দুই হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাসরঘর সাজানোর দামও নির্ভর করে ডিজাইন আর দেশি-বিদেশি ফুলের ওপর। শাহবাগ, কাঁটাবনের ফুলের দোকান ছাড়াও ধানমন্ডি এবং গুলশানে বেশ কিছু ভালো প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বাসরঘর সাজিয়ে দেয়। তবে ১০-১৫ দিন আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ জানুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ