লাইফস্টাইল

বডি ল্যাঙ্গুয়েজ গোপনে যা বলে

এটা হয়ত অনেকেরই জানা নেই যে কারো কথা বলার ভঙ্গি অথবা শারীরিক চলাফেরা দেখেও তার সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যায়! হ্যাঁ! অনেকটাই গোয়েন্দা গল্পের শার্লক হোমসের মতই আপনাকে দেখেই আপনার অনেক গোপন কথা বলে দেয়া সম্ভব। আপনার কোনো শারীরিক অঙ্গভঙ্গি আপনার সম্পর্কে অন্যদের কি ধারণা দেয় সে সম্পর্কে জেনে নিন।

আড়াআড়িভাবে হাত ভাঁজ করে রাখা

বারবারা এবং এলেনের লেখা ‘দ্য ডেফিনিটিভে বুক অফ বডি ল্যাংগুয়েজ’ বইয়ের তথ্যমতে,  আড়াআড়িভাবে হাত ভাজ করে রেখে কথা বলার মানে হল আপনি তেমন মিশুক না। এছাড়াও এই ভঙ্গীর দ্বারা আপনি যে উদ্বিগ্ন, জেদি এবং রক্ষণাত্মক এসবই প্রকাশ পায়। তবে আড়াআড়িভাবে হাত ভাজ করে রাখার মানেই যে ভালো কিছু না ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়, এর মধ্যেও ভালো কিছু ব্যাপার আছে। যারা এভাবে হাত ভাজ করে রাখে তারা যেকোনো কঠিন কাজ খুব সহজেই করে ফেলতে পারেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাত ভাজ রাখায় অভ্যস্ত এমন ছাত্রদের কোনো কঠিন অংক দিলে তারা সেটা সমাধান করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে, অথচ অন্যান্য ছাত্ররা যেখানে খুব সহজেই হাল ছেড়ে দেয়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আড়াআড়িভাবে হাত ভাজ করে রাখার মাধ্যমে মস্তিষ্কের উভয় পাশের সক্রিয়তা পাওয়া যায়, যা উচ্চতর জ্ঞানীয় কার্যক্রম তৈরি করে।

জোনাভারো নামে একজন সাবেক এফবিআই এজেন্ট এ সম্পর্কে বলেছেন, যারা আড়াআড়িভাবে হাত ভাজ করে রাখে, তারা অন্যের উপর নির্ভর না করে খুব সহজে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য নিজেই খুঁজে নিতে পারে। আর তাই কোনো কঠিন প্রশ্ন করার পর কাউকে যদি হাত আড়াআড়িভাবে ভাজ করে ফেলতে দেখেন তাহলে আবার এটা ভাববেন না যে, সে ব্যক্তি কোনো কারণে আপনার উপর রাগ করছে। আদতে তারা কিন্তু আপনার কঠিন প্রশ্নটির উত্তর নিয়েই চিন্তা করছে।

চোখে চোখ রেখে কথা বলা

আপনি যদি আপনার শারীরিক অঙ্গভঙ্গি দিয়ে এটা বোঝাতে চান যে আপনি অপরজনের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছেন তাহলে তার চোখে চোখ রেখে কথা শুনতে হবে। তবে একটা ব্যাপার মনে রাখবেন এক্ষেত্রে আগ্রাসীভাবে কারো দিকে তাকানো যাবে না কেননা এতে করে অপর ব্যক্তি অস্বস্তিতে ভুগতে পারেন। আগ্রাসীভাবে তাকিয়ে থাকা বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে আদতে কারো দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা। একটা গবেষণায় উঠে এসেছে যে, আপনি কারো সাথে কথা বলার ৮০ ভাগ সময় যদি তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকেন তাহলে সেটা তাকে অস্বস্তিতে ভোগাবে। অপরদিকে আপনার যদি কথা বলার সময় শুধুমাত্র ৪০ ভাগ সময় কারো দিকে তাকান তাহলে এর অর্থ হতে পারে আপনি তার কথায় খুব একটা মনোযোগ দিচ্ছেন না। তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে এক্ষেত্রে সঠিক সংখ্যাটি কি? উত্তরে বলা হয়ে থাকে কারো সাথে কথা বলার সময় আপনাকে শতকরা ৬০ ভাগ সময় তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। বাকি সময়টা অপর ব্যক্তিকে স্বস্তিতে রাখার জন্য আপনি এদিক-ওদিক তাকাতে পারেন।

দুই পা দুই দিকে ছড়িয়ে বসা

একটা গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষ তার নিজের জায়গা আলাদা করে রাখার জন্য এবং কর্তৃত্বভাব প্রকাশ করার জন্য সাধারণত দুই পা দুইদিকে ছড়িয়ে বসে। এছাড়া আরেকটি গবেষণায় এটা উঠে এসেছে যে, যারা বেশি ক্ষমতার অধিকারী তারা সাধারণত একটু বেশি জায়গা নিয়ে এভাবে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

পায়ের ওপর পা তুলে বসা

আপনি যদি পা আড়াআড়িভাবে একটার উপরে একটা রেখে ভাঁজ করে বসেন তাতে এটা বুঝা যায় যে আপনি অনেকখানি স্বনির্ভর এবং কর্তৃত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। সাধারণত ছেলেদের তুলনায় মেয়েদেরকেই এভাবেই বেশি বসে থাকতে দেখা যায়। এভাবে পায়ের উপরে পা ভাঁজ করে থাকাকে ‘এঙ্কেল লক’ বলা হয়ে থাকে, এর মাধ্যমে এটাও বুঝা যায় যে আপনি ভাবনায় পেছনে আটকে আছেন, ভয় পেয়েছেন বা অনিশ্চিত যা চাকরির ইন্টারভিউয়ের ঘটে।

এছাড়া কোনো ব্যক্তির কাছে মেয়েরা আবেদন সৃষ্টি করতে পারে এভাবে বসে। একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, সাধারণত ছেলেরা মেয়েদেরকে এভাবে বসে থাকতে দেখতেই বেশি পছন্দ করে।

কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ানো

আপনি মনে করতে পারেন যে এই পোজটি আপনার আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে। তবে এটাও মাথায় রাখবেন যে, কখনো কখনো এই একইভাবে দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে আপনার আগ্রাসী মনোভাবের প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। কোমরে দুই হাতের কনুই দুই পাশে থাকার মাধ্যমে এটা প্রকাশ হতে পারে যে, আদতে আশেপাশের কাউকে আপনি নিজের কাছাকাছি আসতে দিতে চান না।

হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়া

এইভাবে হ্যান্ডশেক করে একজনের সাথে আরেকজনের মত বিনিময় করাটা প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। প্রথমদিকে মানুষ একজন আরেকজনের পুরো হাতটাই ধরত। তবে বর্তমানে হ্যান্ডশেক বলতে শুধুমাত্র হাতের তালু ধরে রাখাটাকেই বুঝায়।

তবে কারো সাথে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়ার আগে আপনাকে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে একটু ভাবতে হবে। কেননা হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে এটা প্রকাশ পায় যে যার সাথে আপনি হাত মেলাতে যাচ্ছেন তিনি আদতে আপনাকে স্বাগতম জানাতে চাচ্ছেন। অথচ অপরদিকে চিন্তা করলে দেখা যেতে পারে যে সেই মানুষটি আপনাকে দেখে তেমন একটা খুশি নাও হতে পারেন, তাই হাত মেলানোর জন্য আগে থেকেই হাত বাড়ানোর আগে আপনাকে এই বিষয়গুলো একটু ভেবে নিতে হবে।

সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখে থাকা

কারো সাথে কথা বলার সময় এবং মনোভাব প্রকাশ করার সময় সদা হাস্যোজ্জ্বল থাকার মাধ্যমে অনেক ভালো কিছু প্রকাশ পেতে পারে। কেননা যখনই আপনি কারো দিকে তাকিয়ে হাসছেন, আপনি তার সাথে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কটি নিজের অজান্তেই হয়ত আরো একটু ভালো করে ফেলছেন। এছাড়া স্বাস্থ্যগত দিকে তাকালে দেখা যায়, হাসি আপনার শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে বাঁচিয়ে রাখে।

দুই হাতের আঙুল একসঙ্গে করে রাখা

অন্য কারো সাথে কথা বলার সময় দুই হাতের আঙুল এক সাথেই এভাবে ভাঁজ করে রাখার মাধ্যমে রোমান্টিকতা প্রকাশ পায়। তবে আপনি যখন একদমই একা এভাবে বসে থাকবেন, তখন আপনাকে কেউ দেখলেই মনে করতে পারে যে আপনি বেশ খানিকটা মানসিক চাপে ভুগছেন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট ঢাকা/ফিরোজ