লাইফস্টাইল

শিশুকে স্কুলে পাঠানোর আগে যা করবেন

করোনা মহামরির কারণে ৫৪৪ দিন পর দেশে স্কুল খুলেছে। তবে ইতিমধ্যে অনেক শিশু অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাদের একটা অংশ হয়তো স্কুলে যেতে অনীহা প্রকাশ করতে পারে। আবার অনেকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে স্কুলে প্রত্যাবর্তন করবে। বলতে গেলে তারা বেশ উপভোগই করবে বিষয়টা। কিন্তু এর বিপরীতে কেউ কেউ সহজেই স্কুলে যেতে চাইবে না। তারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগতে পারে। এসময় পরিবার ও শিক্ষকদের বিশেষ সাপোর্ট প্রয়োজন।

শিশু করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ভীত, কী করা উচিত?

করোনা মহামারিতে শিশুরা পরিবারের আতঙ্ক দেখেছে, স্বাস্থ্যবিধি কড়াভাবে মেনে চলতে লক্ষ্য করেছে। তারাও যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সে ব্যাপারে পরিবারের হুঁশিয়ারি শুনেছে। এছাড়া টিভি বা অন্য মিডিয়াতে সমাজ, দেশ ও বিশ্বের উদ্বেগজনক পরিস্থিতিও দেখেছে। এসবকিছু তাদের মনে রেখাপাত করেছে। তারা বুঝে গেছে, অসাবধান হলেই সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আছে। তারা কোভিড ফোবিয়ায় ভুগতে পারে। তাই তারা স্কুলে যেতে অনীহা দেখাতে পারে। এমতাবস্থায় কী করবেন?

চিন্তার কিছু নেই। তাদেরকে আশ্বস্ত করতে পারলে তারা খুশিমনে পুনরায় স্কুলে যাবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি সহকারে স্কুলে গেলে ও ক্লাস করলে সংক্রমণের ভয় নেই। আশ্বস্ত করতে হবে যে, মাস্ক পরলে ও সহপাঠী-শিক্ষক থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যাবে। তাদেরকে সাবান পানিতে হাত ধোয়ার গুরুত্বও মনে করিয়ে দিতে হবে। এটাও বলুন যে- লোকজনে করোনার টিকা নিচ্ছে, এখন আর আগের মতো সংক্রমণের তেমন ঝুঁকি নেই। এছাড়া অনেকদিন পর বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা হওয়াতে ভালো লাগবে, মন খুশি হবে। এই দীর্ঘসময়ে তাদের কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা জানা যাবে। স্কুলের ক্লাস আর অনলাইন ক্লাসের পার্থক্যও বোঝাতে হবে- স্কুলের ক্লাসে বেশিকিছু জানা যাবে।

* শিশু স্কুল থেকে ফিরলে যা লক্ষ্য করবেন

দীর্ঘসময় পর স্কুল খোলাতে শিশুরা হয়তো উৎসাহ-উদ্দীপনা বা অভিভাবকের আদেশে স্কুলে যাবে। কিন্তু স্কুলের সময়টা কেমন কেটেছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে পর্যবেক্ষণ করলে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। স্কুল থেকে ফেরার পর তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য, মানসিক অবস্থা, আবেগ ও আচার-আচরণ লক্ষ্য করতে হবে। যেসব লক্ষণে বুঝবেন শিশুর বাড়তি সাপোর্টের প্রয়োজন আছে-

* মনমরা ভাব

* দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে হওয়া

* রাগান্বিত মনে হওয়া

* উৎকণ্ঠা

* ক্রোধ

* দুর্বলতা

* অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে অনুৎসাহ

* হোমওয়ার্ক করতে অনুৎসাহ

* অসংলগ্ন কথাবার্তা

* ভালোমত না ঘুমানো

* খাবার খেতে না চাওয়া

* শখ বা বন্ধুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।

তাদেরকে যত্নসহকারে জানাতে হবে- অনেকদিন পর স্কুলে গেলে কেবল ভালো লাগে তা নয়, কিছু কারণে মন খারাপও হতে পারে এবং এটাই স্বাভাবিক। তাদের মেজাজ অনুসারে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে হবে- কেন মন খারাপ হয়েছে? সে বলতে পারে যে, কাছে আসাতে সহপাঠীদের কেউ কটু কথা শুনিয়েছে। এমতাবস্থায় তাকে ইন্ধন দেবেন না, অর্থাৎ এমন কথা বলবেন না যা তার রাগ বা ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়। ইতিবাচক কিছু শোনান। এভাবে বলতে পারেন- সবাই সুস্থ থাকতে চায়, তাই কেউ অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কায় কাছে যেতে নিষেধ করলে তাতে মন খারাপের কিছু নেই; বরং তোমারও নিজের সুরক্ষার কথা ভেবে নিরাপদ দূরত্বে থাকা উচিত।

শিশু স্কুল থেকে ফিরলে প্রথম করণীয় হলো, গোসল করানো। তারপর তাকে দুর্বল মনে হলে তৎক্ষণাৎ শক্তি যোগায় এমনকিছু খাওয়াতে হবে। অতঃপর তাকে একটু বিশ্রামে থাকতে দিন। এরপর স্বাভাবিক খাবার খেতে দিন। তার খাদ্যতালিকায় যথাসম্ভব পুষ্টিকর খাবার রাখুন।

শিশুকে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলবেন

শিশু প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় স্মরণ করিয়ে দিতে হবে, ওখানে নিয়মিত সাবান পানিতে হাত ধুতে। তারা যেন তাদের বন্ধুদেরকেও নিয়মিত হাত ধুতে মনে করিয়ে দেয়। শিশুকে কাশি-হাঁচির শিষ্টাচারও মেনে চলতে বলুন। অর্থাৎ কাশি বা হাঁচি আসলে কনুইর ভাঁজ ব্যবহার করতে হবে। শিশু তার সহপাঠী বা বন্ধুর মুখোমুখি হলে মাস্ক পরতে বলুন। শিক্ষক যখন ক্লাস নেবেন তখন মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, কিন্তু কারও মুখোমুখি হওয়ার আগে অবশ্যই মাস্ক পরে নিতে হবে। যদি স্কুলের নির্দেশনা থাকে যে সবসময় মাস্ক পরতে হবে, তাহলে তা মানতে হবে।

শিশু স্কুলে যাবেই না বলে জেদ ধরেছে, কী করবেন?

করোনাকালে লকডাউন শাটডাউনে দীর্ঘকাল স্কুল বন্ধ ছিল। এসময় অনেক শিশুই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। কেউ কেউ নার্ভাসনেসের কারণে দীর্ঘসময় পর স্কুলে যেতে চাইবে না। তাদেরকে যতই বোঝানো হোক না কেন, প্রথমদিনে স্কুলে পাঠানো সম্ভব হবে না। তাদেরকে সময় দিতে হবে। জোর করবেন না, নার্ভাসনেস কমে আসলে তারা স্কুলে যেতে আগ্রহী হবে। প্রথমদিনেই বা পরেরদিনেই স্কুলে পাঠাতে হবে এমনকোনো কথা নেই। ধীরে ধীরে স্কুলের প্রতি আগ্রহ জাগাতে অভিভাবকেরা এসব বিষয় বিবেচনা করতে পারেন-

* টিভিতে অন্য শিশুরা হাসিখুশিতে স্কুলে যাচ্ছে বা ক্লাস করছে এমন কিছু প্রচার করলে তা আপনার শিশুকে দেখাতে হবে।

* সম্ভব হলে ফোনে শিক্ষকের সঙ্গে আপনার শিশুকে কথা বলার সুযোগ করে দিন, যেন আশ্বাস পায়।

* যারা স্কুলে গেছে তাদের কাউকে আপনার শিশুর সঙ্গে কথা বলতে দিন, তাদের উচ্ছ্বলতায় তার নার্ভাসনেস কাটবে।

* প্রয়োজনে আপনার শিশুকে স্কুলের আশপাশে ঘুরিয়ে আনতে পারেন, অন্যদেরকে স্কুলে দেখে তার মনের অবস্থাও স্বাভাবিক হবে।

শিশুর ঘুমের অভ্যাস ঠিক করতে যা করবেন

যেহেতু এই মহামারিতে দীর্ঘকাল স্কুল বন্ধ ছিল, তাই অনেক শিশুরই ঘুমের অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে রাতে দেরিতে ঘুমানোর প্রবণতা বেড়েছে। স্কুল খুলেছে বলে এখন আর বেশি রাত জেগে থাকার প্রশ্নই আসে না। আগে স্কুল চলাকালীন ঘুমের অভ্যাস যেমন ছিল তাতে ফিরে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিশু পর্যাপ্ত না ঘুমালে ক্লাসে সহজেই দুর্বল হয়ে পড়বে এবং পড়াশোনাতে মনোযোগ দেওয়া কঠিন হবে।পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ক্লাসেই ঘুমাচ্ছন্নতার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে একঘণ্টা পূর্বে টিভি, স্মার্টফোন ও অন্যান্য স্ক্রিন জাতীয় ডিভাইস পরিহার করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিজিটাল ডিভাইস ঘুমের মান কমিয়ে দেয়। প্রয়োজনে স্কুলের রুটিন দেখে ঘুমের সময় পুনর্বিন্যাস করতে হবে। সারকথা হলো, স্কুলে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।