কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি পালন করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না, তার ব্যাপারে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে ‘যার কোরবানি করার সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম, আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)। নিম্নে কোরবানি সংক্রান্ত কিছু বিধি-বিধান উপস্থাপন করা হলো :
কোরবানি যাদের ওপর ওয়াজিব
১. জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ফজর থেকে ১২ জিলহজের সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থাৎ কোরবানির দিনগুলোতে যাদের কাছে নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত শরয়ী নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। নেসাবের পরিমাণ হলো, সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা এ পরিমাণ অর্থের মালিক হওয়া। কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে সম্পদ এক বছর পর্যন্ত নেসাবের মালিকের কাছে থাকা জরুরি নয়। বর্তমান বিশ্ব বাজারে রুপার মূল্য স্বর্ণের মূল্যের তুলনায় কম হওয়ায় নেসাবের ক্ষেত্রে রুপার মূল্যই গণ্য হবে। প্রত্যেক দেশে সেখানকার বাজার মূল্য ধর্তব্য হবে। ২. মুসাফিরের ওপর (সফরে থাকলে) কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। ৩. কারো ওপর কোরবানি ওয়াজিব না হলেও কোরবানি করলে নফল কোরবানির সওয়াব পাওয়া যাবে। ৪. কোরবানি শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়। সন্তানাদি, মাতা-পিতা ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় না, তবে তাদের পক্ষ থেকে করলে তা নফল কোরবানি হবে। ৫. যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয় সে কোরবানির নিয়তে পশু কিনলে সেই পশু কোরবানি করা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়। ৬. কোনো উদ্দেশ্যে কোরবানির মানত করলে সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে গরিব হোক বা ধনী হোক তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। ৭. যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব সে কোরবানির দিনগুলোতে কোরবানি না করলে কোরবানির দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটা বকরির মূল্য সদকা করা ওয়াজিব।
কোরবানির পশুর বিধি-বিধান
ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট- এই ছয় ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো পশু দ্বারা কোরবানি করা বৈধ নয়। ১. ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কমপক্ষে পূর্ণ এক বছর বয়সের হতে হবে। এর চেয়ে কম বয়সের ছাগল, ভেড়া, দুম্বা যদি এমন মোটাতাজা হয় যে, এক বছর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলে তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে এর দ্বারা কোরবানি জায়েজ আছে। তবে সেক্ষেত্রে অন্তত ছয় মাস বয়স হতেই হবে। ২. গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। ৩. উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। ৪. কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। ৫. যে পশু লেংড়া অর্থাৎ যা তিন পায়ে চলতে পারে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও ভর করতে পারে না, যে পশুর একটিও দাঁত নেই, যে পশুর কান জন্ম থেকে নেই, যে পশুর শিং মূল থেকে ভেঙে যায়, যে পশু দুই চোখের কোনো চোখেই দেখে না বা একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশি নষ্ট, যে পশুর একটি কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ কিংবা এর চেয়ে বেশি কেটে গেছে, যে পশু জবেহ করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না- এ ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি হবে না। ৬. পছন্দসই ভালো পশু কেনার পর এমন দোষ-ত্রুটি দেখা দিয়েছে যার কারণে কোরবানি বিশুদ্ধ হয় না, এমন হলে সেটি দিয়েই কোরবানি চলবে। ৭. গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েজ। যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সে বাচ্চাও জবেহ করে দিতে হবে। তবে প্রসবের নিকটবর্তী পশু কোরবানি দেয়া মাকরুহ। ৮. বন্ধ্যা পশু কোরবানি করা জায়েজ আছে।
সূত্র : ফাতওয়া আলমগীরী, ফাতওয়া শামী, ইমদাদুল ফাতওয়া প্রভৃতি