শীতকালে ফ্লু, ঠান্ডাজ্বর, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের ভালো যত্ন নেওয়া জরুরি। এটি বছরের এমন একটা সময়, যখন সুস্থ থাকতে শরীরের অবশ্যই বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া উচিত। অন্যথায় নানা রোগ শরীরকে সহজেই কাবু করে ফেলতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়েটে সেসব খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যা শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে সংক্রমণকে সহজেই পরাস্ত করতে পারে। এমন একটি খাবার হলো, ছোলা। আমাদের দেশে এটি সহজলভ্য খাবার।
রমজানে ঘরে ঘরে ইফতারে ছোলা খাওয়া হয়। বছরের অন্য সময়টাতে ছোলার চাহিদা রমজানের মতো প্রবল নয়। কিন্তু ছোলা আমাদের শরীরে এমনকিছু চমকপ্রদ উপকার করে,যা বিবেচনায় এটা শীতকালেও নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। এখানে ছোলার ছয়টি স্বাস্থ্য উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।
* হার্টের সুরক্ষা দেয়: শীতকালকে হার্ট অ্যাটাকের মাস বলা হয়। হার্টকে সুরক্ষিত রাখতে শীতকালে নিয়মিত ছোলা খেতে পারেন। প্রোটিন ও ফাইবার ছাড়াও ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে, যেমন- ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও সেলেনিয়াম। গবেষণায় দেখা গেছে, পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম হৃদস্পন্দনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখে। সেলেনিয়াম প্রদাহ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
* রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে: গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) কোনো কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর কেমন গতিতে রক্ত শর্করা বাড়ে তা নির্দেশ করে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুখবর হলো- ছোলার জিআই কম, যার স্কোর হলো ২৮। স্কোর ৫৫ বা এর কমকে লো জিআই ফুডস বলা হয়। এসব খাবার থেকে ধীরে ধীরে শর্করা নিঃসরিত হয়। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়াবেটিক ডায়েটে ছোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
* ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়: ছোলার কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর ক্ষমতা আছে। ছোলা খেলে শরীর বিউটাইরেট নামক শট চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে, যা শরীর থেকে অসুস্থ ও মুমূর্ষু কোষ অপসারণে সাহায্য করে। এর ফলে ক্যানসার প্রতিরোধ হয়। এই খাবারে লাইকোপিন, বায়োচেনিন ও স্যাপোনিনও রয়েছে। এসব ডায়েটারি বায়োঅ্যাক্টিভ কম্পাউন্ডও ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
* পেশি মেরামত করে: পেশি মেরামত, হরমোন কার্যক্রম ও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রোটিন প্রয়োজন হয়। যদি কেউ শরীরে প্রোটিন সরবরাহ বাড়াতে চান, তাহলে তিনি অনায়াসে খাদ্যতালিকায় ছোলা অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এক আউন্স (২৮.৩৫ গ্রাম) ছোলা থেকে ৩ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়া ছোলার প্রোটিনের মান বেশি, কারণ এতে মিথিওনিন ব্যতীত প্রায় সকল এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে।
* রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে: আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যার ফলে দুর্বলতা ও ক্লান্তিতে ভুগতে হয়। নিয়মিত ছোলা খেলে রক্তশূন্যতা এড়ানো সম্ভব হবে। ১০০ গ্রাম ছোলাতে ৬.২ মিলিগ্রাম আয়রন রয়েছে। এছাড়া ছোলার ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সহায়তা করে। কিছু মাছ ও মাংসে প্রচুর আয়রন থাকে, কিন্তু যারা এসব খাবার কম খান তাদের বেশি করে ছোলার মতো আয়রন সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ খাবার খাওয়া উচিত।
* দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখে: ছোলাতে কেবল উচ্চমানের প্রোটিন নয়, প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও আছে। প্রতি আউন্স ছোলাতে ২ গ্রাম ফাইবার পাবেন। প্রোটিন ও ফাইবারের সমন্বয় পেটকে দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখে। উভয় পুষ্টি ধীর হজমে সহায়তার জন্য একত্রে কাজ করে, যার ফলে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা অনুভূত হয় না।
তথ্যসূত্র: রিয়েল সিম্পল