শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) বাড়ানোর জন্য সবারই সচেতন হওয়া উচিত। অসুস্থতার প্রবণতা কমানোর জন্য কেবল খাওয়ার আগে হাত ধোয়া, রাতে পর্যাপ্ত ঘুমানো ও নিয়মিত শরীরচর্চা করলেই হবে না, পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারও খেতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়ায় এমন খাবারের তালিকা করতে গেলে ভিটামিন সি উপরের দিকে থাকবে। এছাড়া আয়রন, জিংক, আয়োডিন ও অন্যান্য পুষ্টিও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে। এ প্রতিবেদনে ভিটামিন সি এর সুপারিশকৃত দৈনিক মাত্রা, সমৃদ্ধ উৎস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো।
ভিটামিন সি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা
ইন্টারন্যাশনাল ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিলের সায়েন্স কমিউনিকেশনের সাবেক পরিচালক এবং অণুজীববিজ্ঞানী-রোগতন্ত্র বিশেষজ্ঞ মেগান মেয়ার বলেন, ‘ভিটামিন সি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে। এটি স্নায়ুতন্ত্র, বিপাক ও রোগপ্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’ ইনসাইডারের একটি প্রতিবেদনে ভিটামিন সি এর পাঁচটি স্বাস্থ্য উপকারিতা উল্লেখ করা হয়েছে- সংক্রমণ মোকাবেলার শক্তি বাড়ায়, কোষের ক্ষতি এড়ায়, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়, ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে ও শরীরে আয়রন শোষণে সহায়তা করে। এর বাইরেও পুষ্টিটি শরীরের অনেক উপকার করে।
প্রতিদিন কতটুকু ভিটামিন সি দরকার?
ডা. মেয়ার জানান, ‘বয়স ও লিঙ্গের ভিত্তিতে অধিকাংশ লোকের ক্ষেত্রে দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রা (আরডিএ) হলো ১৫ মিলিগ্রাম থেকে ১২০ মিলিগ্রাম।’ ১-৩ বছরে ১৫ মিলিগ্রাম, ৪-৮ বছরে ২৫ মিলিগ্রাম, ৯-১৩ বছরে ৪৫ গ্রাম, ১৪-১৮ বছরে ৬৫-৭৫ মিলিগ্রাম, ১৯ বছর বা তদোর্ধ্ব নারীদের ৭৫ মিলিগ্রাম, ১৯ বছর বা তদোর্ধ্ব পুরুষদের ৯০ মিলিগ্রাম, গর্ভবতী নারীদের ৮৫ মিলিগ্রাম ও বুকের দুধ পান করানো নারীদের ১২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন সি এর উৎস
ডা. মেয়ার বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাকসবজিতে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।’ এই পুষ্টিতে ভরপুর খাবারের একটি তালিকা হলো- কমলা, লেবু, মোসাম্বি, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, আমলকি, আঙুর, আপেল, লিচু, পেঁপে, টমেটো, বাধাকপি, ফুলকপি, পালংশাক, অন্যান্য সবুজ শাক, আলু ও কাঁচা মরিচ। শাকসবজি কীভাবে খেলে শরীরে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি যোগানো যাবে তা জেনে নিতে হবে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করা উচিত?
ইন্টারন্যাশনাল ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিলের রিসার্চ অ্যান্ড নিউট্রিশন কমিউনিকেশনসের ঊর্ধ্বতন পরিচালক আলি ওয়েবস্টার বলেন, ‘সর্বোচ্চ ইমিউন ফাংশনের (রোগদমন কার্যাবলি) জন্য ভিটামিন সি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি। তবে শরীরে যতটুকু ভিটামিন সি লাগে তার চেয়ে বেশি গ্রহণে বাড়তি উপকার নেই। আমাদের শরীর একবারে মাত্র কয়েকশ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি শোষণ করতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীর দৈনিক সুপারিশকৃত মাত্রা যথাক্রমে ৯০ মিলিগ্রাম ও ৭৫ মিলিগ্রাম। এর বেশি গ্রহণ করলে প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে আসে।’
অতিরিক্ত ভিটামিন সি ক্ষতিকারক?
সাপ্লিমেন্ট সেবন না করলে সাধারণত আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর ওভারডোজ হয় না। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার ও সাপ্লিমেন্ট একসঙ্গে গ্রহণ করলে ওভারডোজ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রশ্ন হলো, অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীরের ক্ষতি করে? এ প্রসঙ্গে ডা. মেয়ার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিকসের ইনস্টিটিউট অব মেডিসিনের অন্তর্গত ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড ভিটামিন সি এর সহনীয় সর্বোচ্চ গ্রহণ মাত্রা (ইউএল) নির্ধারণ করেছে এবং জানিয়েছে যে, দীর্ঘসময় ধরে এর বেশি গ্রহণে স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে।’ আরডিএ’র মতো ইউএল-ও বয়স ও লিঙ্গের ওপর নির্ভর করে। ১৯ বছর ও তদোর্ধ্ব নারী-পুরুষের ভিটামিন সি ইউএল হলো ২,০০০ মিলিগ্রাম। ভিটামিন সি ইউএল’র পূর্ণাঙ্গ তালিকা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের সাইটে পাওয়া যাবে।
কিছু চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হয়। ডা. মেয়ার জানান, ‘ভিটামিন সি স্টাটিন, কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপির সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া করতে পারে। ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট সেবনের পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত। তিনি চিকিৎসার ইতিহাস ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনাপূর্বক পরামর্শ দেবেন।’
তথ্যসূত্র: রিয়েল সিম্পল