বাণিজ্যিক ফ্লাইটের যাত্রা প্রথম যখন শুরু হয়েছিল, তখন যাত্রীদের মধ্যে স্যুট বা এ ধরনের আকর্ষণীয় পোশাক পরার রীতি ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে ভ্রমণকারীদের পোশাক-আশাকের চিত্রটা সম্পূর্ণ বিপরীত। এখন যাত্রীদের মধ্যে আরামদায়ক পোশাক জনপ্রিয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সময়ের এই ট্রেন্ড হয়তো কম আকর্ষণীয় কিন্তু এই পরিবর্তনটি সবচেয়ে ভালো- বিশেষ করে যখন জুতার প্রসঙ্গ আসে।
পডিয়াট্রিস্টদের (পা ও গোড়ালি বিশেষজ্ঞ) মতে, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় বিমান ভ্রমণে ৫ ধরনের জুতা কখনোই পরা উচিত নয়।
* হাই হিল: বিমান ভ্রমণে নারীদের হাই হিল জুতা পরা নিয়ে একটা সময় খুব বেশি মাথা ঘামানো হতো না। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের জুতা পরে বিমান ভ্রমণে সতর্ক করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একজন অর্থোপেডিক সার্জন এবং হাইপার আর্চ মোশনের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার মৌরিসিও গার্সিয়া জানান, হাই হিল পরার কারণে অনেকসময় রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, ফলে পায়ের আঙুল ফুলে জুতা টাইট হয়ে যায়। গেইট থেকে বিমান পর্যন্ত পৌছাঁতে অনেক পথ হাঁটার প্রয়োজন পড়ে, ফলে এ ধরনের জুতা অস্বস্তিকর মুহূর্ত তৈরি করতে পারে।
দ্য স্কোটেনস্টাইন সেন্টারের পডিয়াট্রিস্ট জুলিয়া স্কোটেনস্টাইন জানান, হাই হিল জুতা অস্বস্তিকর হওয়ার পাশাপাশি জরুরি পরিস্থিতিতে সুরক্ষা ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। জরুরি প্রয়োজনে দৌড়াতে হলে হিল জুতা পায়ে থাকলে বিপদ।
আন্তর্জাতিক একটি বিমানের পাইলট ও ‘বিহাইন্ড দ্য ফ্লাইট ডেক ডোর’ বইয়ের লেখক ব্রেট ম্যান্ডারসের মতে, বিমান জরুরি অবতরণের সময় হাই হিল জুতা ব্যবহারকারীকে বিপদে ফেলতে পারে।
* টাইট কিংবা পয়েন্টেড টো জুতা: অর্থোপেডিক সার্জন মৌরিসিও গার্সিয়ার মতে, দীর্ঘ বিমানযাত্রায় টাইট বা পায়ের আঙুল চেপে থাকে এমন জুতা পরা উচিত নয়। কেননা এতে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে পা ফুলে যেতে পারে।
* নতুন জুতা: বিমান ভ্রমণে নতুন জুতা পরা আরেকটি কমন ভুল, যা বেশিরভাগ মানুষজন করে থাকে। এ প্রসঙ্গে মৌরিসিও গার্সিয়া বলেন, ‘বিমান ভ্রমণে নতুন জুতা পরা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ আপনি জানেন না যে, এটি কখন আপনার পায়ে ফোস্কা ফেলে দিবে। বিশেষ করে, যদি ফ্লাইট ধরতে আপনাকে তাড়াহুড়া করে হাঁটতে হয়।’
নতুন জুতার পরিবর্তে পুরোনো পছন্দের জুতা পরার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এতে পায়ে ফোস্কা পরার ঝুঁকি থাকবে না। এ প্রসঙ্গে মৌরিসিও গার্সিয়া বলেন, ‘পরিচিত সেই জুতাটি পরুন, যেটি ভ্রমণ জুড়ে আপনাকে আরামদায়ক এবং নিরাপদ রাখবে বলে আপনার জানা রয়েছে।’
* ফ্লিপ-ফ্লপস এবং স্যান্ডেল: বিমান ভ্রমণে ফ্লিপ-ফ্লপস বা দুই ফিতা ওয়ালা জুতাও ভালো নয় বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। মৌরিসিও গার্সিয়ার মতে, ফ্লিপ-ফ্লপসগুলোতে আর্চ সাপোর্ট কম থাকে, ফলে বিমানবন্দরে হাঁটার পর পায়ে ক্লান্তি অনুভব হতে পারে। এছাড়া ফ্লিপ-ফ্লপস খোলামেলা হওয়ায় বিমানে পা ঠান্ডা হয়ে অস্বস্তিবোধ হতে পারে। অন্যদিকে জরুরি পরিস্থিতি দৌড়ানোর প্রয়োজন হলে এ ধরনের স্যান্ডেল বিপদে ফেলতে পারে।
* অতিরিক্ত টাইট জুতা: বিমান ভ্রমণে খোলামেলা ফ্লিপ-ফ্লপস যেমন ভালো নয়, তেমনি অতিরিক্ত টাইট জুতা পরাটাও ভালো নয়। কেননা এ ধরনের জুতা পায়ে ঘামের কারণ হলে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
মৌরিসিও গার্সিয়ার মতে, বিমান ভ্রমণে এমন জুতা নির্বাচন করা উচিত, যা আরামদায়ক ও নিরাপদ রাখবে। চওড়া, ভালো আর্চ সাপোর্ট ও সহজ অ্যাডজাস্ট সুবিধা রয়েছে, এমন জুতা বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তথ্যসূত্র: বেস্ট লাইফ