লাইফস্টাইল

দিনশেষে প্রিয়তী একজন মা 

মাকসুদা আখতার প্রিয়তী একজন পাইলট, আন্তর্জাতিক মডেল এবং একজন মা। তিনি মনে করেন একজন নারীর প্রধান লক্ষ্য থাকে মাতৃত্ব। তারও তাই। দুইটি সন্তান রয়েছে প্রিয়তীর। ছেলের আবরাজ, মেয়ের নাম মৌনীরা। আবার মা হতে চলেছেন প্রিয়তী। ওই অবস্থায় সম্প্রতি ফ্রান্সের ৭৭ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের লাল গালিচায় হাঁটতে দেখা গেছে প্রীয়তিকে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই মডেল বসবাস করেন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। সেখান থেকে ফ্রান্সের কানযাত্রা যে মোটেও সহজ ছিল না, তা বুঝতে কষ্ট হয় না। তবে প্রিয়তীকে কানে দেখা গেছে গর্জিয়াস এবং হাসিখুশি লুকে। সব সামলিয়ে প্রিয়তী প্যারেন্টিংটা কীভাবে ঠিক রাখেন এবং নিজেকে ভালো রাখেন— জানতে চেয়েছিল রাইজিংবিডি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রিয়তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন ক্যারিয়ার আর প্যারেন্টিং ব্যালেন্সের গল্প।

প্রিয়তী বলেন, সন্তানদের লুক আফটার করে বাকি সব কাজ ‘কেয়ার আউট’ করতে হয়। আগে থেকে প্রি প্ল্যান থাকলে টাইম ম্যানেজমেন্টটা ঠিকঠাক মতো করা যায়। কমিটমেন্টগুলো রাখা যায়। প্রায়োরিটি অনুযায়ী আমি আমার কাজগুলো ভাগ করে নেই। ফ্লাইং আর অভিনয় দুইটি কাজ একসঙ্গে করা যায় না। অভিনয় করে সংসার চালানো সম্ভব হয় না। মূল অর্থ আসে ফ্লাইং থেকে। এই কাজ থেকে ছুটি নিয়ে ফাঁকে ফাঁকে অভিনয় করি। আয়ারল্যান্ডে সব কাজ নিজেকেই করতে হয়। বাইরের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরি বাচ্চাদের জন্য রান্না করি। একসঙ্গে বসে খাই। 

মাতৃত্বের শক্তিতে বিশ্বাস করেন প্রিয়তী। প্রিয়তী বলেন,  প্ল্যান গত বছরেই করা ছিল। কিন্তু হঠাৎ প্রেগনেন্ট হয়ে যাওয়া— আগের পরিকল্পনাগুলো একটু পরিবর্তন করে দিয়েছিল। এই বছরের শুরুর দিকে বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাওয়ার কথা ছিল। প্রেগনেন্সির শুরুর দিকে একটু অসুস্থ থাকায় আর যাওয়া হয়নি। প্রেগনেন্সির তিন মাস অতিক্রম হওয়ার পরে শরীর আস্তে আস্তে একটু ঠিক হলো। এরপর আগে থেকেই যে কাজগুলো করার পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম সেগুলোতে একটু ফোকাস করার চেষ্টা করেছি। কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেওয়া তারই অংশ। মোর ওভার কাজের জন্য এই মোটিভেশনটা আমার দরকার ছিল।

প্রিয়তী মনে করেন, শরীর, মন এবং অভ্যাস এই সবকিছু মিলিয়ে প্রতিটি মানুষই আলাদা। মন ভালো রাখার জন্য কাঁটায়-কাঁটায় সব কিছু মেনে চলা অনেক সময় সম্ভব হয় না। এই সময় অনেক হরমোনাল ও শরীরিক পরিবর্তন আসে। একবার ভালোলাগে আরেকবার খারাপ লাগে। প্রত্যেক গর্ভবতী মা এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান। তবুও নিজেকে ভালো রাখার জন্য কিছু করা উচিত। যেমন— প্রতিদিন আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করা। বাইরে হাঁটতে যাওয়া জরুরি। এতে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং শিশুর ওপরও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

প্রিয়তী বলেন, আমি জানি যে এই সময় আমার পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। কিন্তু প্রত্যেক গর্ভবতী মায়েরই এই সময়টাতে বিশেষ কিছু খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। আমিও ব্যতিক্রম নই। তবে যা কিছুই খাই না কেন সেই খাবারটি যাতে ক্ষতির কারণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি।

প্রিয়তী বিশ্বাস করেন, গর্ভবতী হওয়া মানে অসুস্থ হওয়া নয়। গর্ভাবস্থায় শরীরে একটা পরিবর্তন আসে। কিছুটা দুর্বলতা আসে। তাই বলে কাজ করা যাবে না, ব্যায়াম করা যাবে না তা নয়। শরীর বুঝে কাজ করতে হবে। এই সময়ে শরীরের শক্তি থাকা দরকার। ঘরের কাজ, বাইরের কাজ এবং শিশুদের ঠিকমতো দেখাশোনা— এসব কিছু ঠিকঠাক মতো করার জন্য মায়েদের উচিত নিজের জন্য আলাদা একটু সময় বের করা। নিজের ভেতর থেকে খুশি থাকা। পজেটিভ থাকা এবং পজেটিভ চিন্তা করা। এর বাইরে আমরা যতই স্বাস্থ্যকর খাবার খাই না কেন, আমরা যদি নিজেরা হ্যাপি না থাকি তাহলে পৃথিবীর সমস্ত প্রাচুর্যও আমাদের হ্যাপি ফিল দিতে পারবে না। 

মোট কথা— হ্যাপি প্যারেন্টিংয়ের জন্য মায়েরও উচিত নিজেকে হ্যাপি রাখা।