লাইফস্টাইল

৫২ পদের মসলার হান্ডি ও লাল ভুনার খোঁজে

রাজধানীর ভোজনরসিকদের জন্য নতুন রেসিপি হান্ডি বিফ বা মাটন। খাবারটি সারা ফেলেছে। স্বাদ নিতে অনেকেই ঢুঁ দিচ্ছেন পছন্দের রেস্তোরাঁয়। কিন্তু সবখানে মিলছে না এই রেসিপি। মিললেও স্বাদে রয়েছে বিস্তর ফারাক। 

ভালো হান্ডি কোথায় পাওয়া যায়? এই অনুসন্ধানে নামার পর সবচেয়ে বেশি যে নামটি শুনেছি সেটা হলো মিরপুর দশ নাম্বারের আপ্যায়ন রেস্তোরাঁর কথা। শুধু এ পদই নয়, অন্যান্য খাবারের জন্যও রেস্তোরাঁটি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সুনাম কুড়িয়েছে। 

মিরপুর ১০ মেট্রোরেল স্টেশনে নামলে বেনারসী পল্লীর পাশেই এই রেস্তোরাঁর অবস্থান। পুরোনো ঢাকা থেকে যেতে যেতে সূর্য মধ্যগগণে। খুঁজে পেতে খুব বেশি কষ্ট হলো না। রেস্তোরাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সুঘ্রাণ নাকে এলো। এই ঘ্রাণ সাক্ষ্য দিচ্ছে ভালো রান্নার। চারপাশে ভোজনরসিকদের জটলা বলে দিচ্ছে চাহিদাও নেহায়েত কম নয়। কেউ পার্সেল নিচ্ছেন, কেউ অপেক্ষা করছেন সিট খালি হওয়ার। তারা রেস্তোরাঁয় বসে খাবেন। 

ভেতরে সবগুলো টেবিল লোকে ভরপুর। ওয়েটারদের ব্যস্ততা দেখার মতো। দুদণ্ড কথা বলারও যেন সময় নেই। গ্রাহকের অর্ডার বুঝে প্রতি টেবিলে ডেলিভারি দিচ্ছেন তারা। জিজ্ঞেস করছেন আরো কিছু লাগবে কিনা? 

আপ্যায়ন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু হয় গত ৯ এপ্রিল। উদ্যোক্তা দুজন। জাহিদুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান। ভোজনরসিক জাহিদুল ইসলাম ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে খাবারের স্বাদ নিতেন। বন্ধুদের নিয়ে কখনো ছুটে যেতেন মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেতে, আবার হান্ডি খেতে মিরপুর। শহরের যেখানে নতুন কোনো রেসিপির কথা শুনতেন স্বাদ নিতে তিনি ছুটে যেতেন। রেস্তোরাঁ দেবেন এই ভাবনা তার শুরু থেকেই ছিল। হোটেলে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা থেকে মেহেদী হাসানকে পার্টনার করে তিনি শুরু করেন এই ব্যবসা।

এখানকার হান্ডির বিশেষত্ব হলো বাহারী মসলা। ৫২ ধরনের মসলায় ম্যারিনেট করে রান্না করা হয় হান্ডি। এই রেসিপি সিক্রেট। এমনকি মসলার নামও জানার উপায় নেই। সরিষার তেল দিয়ে সারি সারি হাড়ি সাজিয়ে কয়লার চুলোয় হয় রান্না। প্রতি হাড়িতে ৩.৫ কেজি হান্ডি একেবারে রান্না হয়। এভাবে দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত  চলতে থাকে রান্না। এ ছাড়াও বিখ্যাত গরুর মাংস রান্না হয় মেজবানের মতো। বিশেষ এই রান্নার জন্য রয়েছে চট্টগ্রামের বাবুর্চি। এ ছাড়াও ভর্তার আইটেম রয়েছে। যেগুলো হাতে পিসে এবং স্পেশালভাবে রান্না হয় করা হয়। 

প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ কেজি বিফ হান্ডি, ২০-২৫ কেজি খাসির হান্ডি এবং ৩০-৪০ কেজি বিখ্যাত গরুর মাংস বিক্রি করেন তারা। আবহাওয়া যত ঠান্ডা থাকে ততই এই খাবারের চাহিদা বাড়ে ভোজনরসিকদের মধ্যে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে বিক্রি চলে রাত দুইটা পর্যন্ত। খাবার শেষ হয়ে গেলে বন্ধ করে দেয়া হয় গেট। তবে সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, মাওয়া, মুন্সিগঞ্জসহ নানা জায়গা থেকে অনেকেই খেতে আসেন। 

খেতে কেমন পরখ করে দেখতে অর্ডার দিলাম আমরাও। প্লেটে খাবার দিতেই হান্ডির সুঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছিল। রসুনের সঙ্গে ঝোল দিয়ে খেতে বেশ ভালোই লেগেছে। দামটাও নাগালের মধ্যেই। ভাত ২৫ টাকা , নান ৩০ টাকা, পোলাও ৫০ টাকা, মুগ ডাল ৩০টাকা, হান্ডি গরু ২২০টাকা,  বুটের ডাল ৩০ টাকা, হান্ডি খাসি ২৫০ টাকা, সবজি ৩০ টাকা, গরুর মাংস ২০০ টাকা, লাউ চিংড়ি ৮০ টাকা, ভর্তা (আলু/কলা/মাছ) ৩০ টাকা, খিচুড়ি ৫০টাকা, খুদের ভাত ৫০টাকা, ল্যাটকা খিচুড়ি ৫০টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে স্পেশাল দই, যার দাম ৬০ টাকা।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ভালো খাবার বিক্রি করার চেষ্টা করি সবসময়। একদম ফ্রেশ খাবার গ্রাহককে দিয়ে থাকি। প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন শেষ হয়ে যায়। আমাদের সব বাবুর্চি হান্ডি ও বিফ রান্নায় অভিজ্ঞ।