লাইফস্টাইল

কোরবানির পশুর বিধি-বিধান

কোরবানি আরবি শব্দ। এর অর্থ ত্যাগ স্বীকার করা, বিসর্জন দেয়া, উৎসর্গ করা। মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও তাঁর ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট নিয়মে পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় নবীকে কোরবানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরানে তিনি বলেছেন, ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন ও কোরবানি করুন’ (সুরা কাওসার : ২)। 

এ আয়াতে নামাজ আদায় করতে এবং কোরবানির পশু জবেহ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) সারা জীবন কোরবানি সম্পর্কে অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন।

কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি পালন করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্তেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না, তার ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যার কোরবানি করার সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম, আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)। 

এটি বান্দা তাঁর প্রভুর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। প্রথম মানুষ ও আদিপিতা হজরত আদম (আ.) এর পুত্র হাবিল কাবিল থেকে শুরু করে মুসলিম মিল্লাতের জনক হজরত ইবরাহিম (আ.) পর্যন্ত প্রত্যেক নবীর উম্মতরাই বিভিন্ন পদ্ধতিতে কোরবানি করেছেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করার পূর্ণ প্রচেষ্টায় আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হয়ে এর স্থলে পশু কোরবানির নির্দেশ দিয়েছেন। তখন থেকেই পশু কোরবানির বর্তমান নিয়মের সূচনা, যা অপরিবর্তিতভাবে আমাদের জন্যও বিধানসম্মত করা হয়েছে। এই হিসাবে কোরবানি হজরত ইবরাহিম (আ.) এর মহান সুন্নত। এই কোরবানি করতে গিয়ে সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি না জানার কারণে আমরা অনেকেই বিভিন্নি ভুল-ত্রুটি করে থাকি। এমনকি কোরবানির যে মূল উদ্দেশ্য নিয়ত পরিশুদ্ধ করা, তাও অনেকের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে চক্ষুলজ্জা, লোকদেখানো ইত্যাদি প্রাধান্য পাচ্ছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর গোশত কিংবা রক্ত পৌঁছায় না; বরং তাঁর কাছে কেবল তোমাদের তাকওয়া পৌঁছায়।’ (সুরা হজ : ৩৭)

তাই আমাদের বিশুদ্ধ নিয়তে কোরবানি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় দশ বছর অবস্থান কালে প্রতি বছর কোরবানি করেছেন এবং সাহাবিদেরকে কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন।

কোরবানির পশুর বিধান

ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট- এই ছয় ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে, এ ছাড়া অন্য কোনো পশু দ্বারা কোরবানি বৈধ নয়। ১. ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কমপক্ষে পূর্ণ এক বছর বয়সের হতে হবে। এর চেয়ে কম বয়সের ছাগল, ভেড়া, দুম্বা যদি এমন মোটাতাজা হয় যে, এক বছর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলে তাদের চেয়ে ছোট মনে না হয়, তাহলে এর দ্বারা কোরবানি জায়েয আছে। তবে অন্তত ছয় মাস বয়স হতেই হবে। ২. গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে।  ৩. উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে।  ৪. কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। ৫. যে পশু লেংড়া অর্থাৎ যা তিন পায়ে চলতে পারে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও ভর করতে পারে না, যে পশুর একটিও দাঁত নেই, যে পশুর কান জন্ম থেকে নেই, যে পশুর শিং মূল থেকে ভেঙে যায়, যে পশু দুই চোখের কোনো চোখেই দেখে না বা একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশি নষ্ট, যে পশুর একটি কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ কিংবা এর চেয়ে বেশি কেটে গেছে, যে পশু জবেহ করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে নাÑ এ ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি হবে না।  ৬. পছন্দসই ভালো পশু কেনার পর এমন দোষত্রুটি দেখা দিয়েছে যার কারণে কোরবানি বিশুদ্ধ হয় না, এমন হলে সেটি দিয়েই কোরবানি চলবে।  ৭. গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েয। যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সে বাচ্চাও জবেহ করে দিতে হবে। তবে প্রসবের নিকটবর্তী পশু কোরবানি দেয়া মাকরুহ।  ৮. বন্ধ্যা পশু কোরবানি করা জায়েয আছে।