ইসলামে কোরবানি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব ইবাদত। কেবল আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি পালনে অনেক ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে কোরবানি প্রতিপালন করতে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিস শরিফেও রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানি পালনের অনেক ফজিলত বর্ণনা করেছেন। হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই কোরবানিটা কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) জবাব দিলেন, এটা তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এর সুন্নত বা আদর্শ। এরপর তারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এতে আমাদের জন্য কী উপকার বা সওয়াব রয়েছে? তিনি বললেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম আবার জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসুল! ভেড়া, দুম্বার পশমের ব্যপারে কী কথা? তিনি বললেন, এর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি পাওয়া যাবে।’’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত শরিফ)।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘‘মানুষের আমলসমূহ থেকে কোনো আমলই আল্লাহর কাছে কোরবানির দিন কোরবানি থেকে অধিক পছন্দনীয় নয়। অবশ্যই কেয়ামতের দিন কোরবানির প্রাণী শিং, লোম ও ক্ষুর নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। যে কোরবানি শুধু আল্লাহর জন্য করা হয়, নিশ্চয়ই সেই কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর দরবারে তা কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা ভক্তি ও আন্তরিকতার সঙ্গে কোরবানি করো।’’ (তিরমিযি)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘‘রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত ফাতেমা (রা.) কে বললেন, ফাতেমা! এসো তোমার কোরবানির পশুর কাছে দাঁড়িয়ে থাক। কারণ কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়বে, তার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা তোমার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেবেন। ফাতেমা (রা.) বলেন, এ সুসংবাদ কি আহলে বায়আতের (নবী পরিবারের) জন্য নির্দিষ্ট, না সকল উম্মতের জন্য? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমাদের আহলে বায়আতের জন্যও এবং সকল উম্মতের জন্যও।’’ (জামেউল ফাওয়ায়েদ)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় দশ বছর জীবন যাপন করেছেন, সেখানে প্রতি বছরই তিনি কোরবানি করেছেন।’ (তিরমিজি)
কোরবানিতে শরিকের বিধান :
১. ছাগল, ভেড়া, দুম্বায় একজনের বেশি শরিক হয়ে কোরবানি করা যায় না। এগুলো একটা একজনের নামেই কোরবানি দিতে হবে। ২. একটা গরু, মহিষ, উটে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারে। ৩. যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নয়, বরং গোশত খাওয়া বা লোকদেখানো ইত্যাদি নিয়তে কোরবানি করে, তাকে অংশীদার বানিয়ে কোরবানি করলে সকল অংশীদারের কোরবানিই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই শরিক নির্বাচনের সময় খুবই সতর্ক থাকা জরুরি। ৪. কোরবানির পশু ক্রয় করার সময় শরিক রাখার ইচ্ছা ছিল না, পরে শরিক নিতে চাইলে ক্রেতা গরিব হলে তা পারবে না, ধনি তথা নেসাবের মালিক হলে পারবে। ৫. যার যাবতীয় উপার্জন বা অধিকাংশ উপার্জন হারাম, তাকে শরিক করে কোরবানি করলে অন্য সকল শরিকের কোরবানি অশুদ্ধ হয়ে যাবে। ৬. নিজের কোরবানিতে পরিবারের মৃত ও জীবিত ব্যক্তিদের নিয়তের মাধ্যমে শরিক করা বৈধ। ৭. মৃত ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার পক্ষ থেকে কোরবানি করার ওসিয়ত করে থাকলে ওসিয়ত বাস্তবায়ন করার জন্য মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করা জায়েয আছে।