স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হবেই। সমস্যা মেটাতে যেকোন একজনকে আগে উদ্যোগ নিতে হয়। কখনো ক্ষমা, কখনো চুপ থাকা, কখনো বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, কখনো পছন্দের খাবার বা উপহার দিয়ে সঙ্গীর রাগ ভাঙাতে হয়। আর এসবই ভালোবাসার বার্তা বহন করে। স্ত্রীর রাগ ভাঙাতে স্বামী কী করেন- তাই নিয়ে এই আয়োজন।
২৬বছরের দাম্পত্য অভিজ্ঞতা থেকে মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘শুরুতে ঝগড়া হলে সেও বলতো সমানতালে আমিও বলতাম। ঝগড়া অনেক সময় বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যেত। সন্তান হওয়ার পরে দেখলাম স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করলে সন্তানদের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ওদের দিকে তাকিয়ে একজন বলার সময় অন্যজন চুপ থাকাকে রপ্ত করেছি। স্ত্রী রেগে গেলে তাকে খুব বেশি বোঝাতে যাই না, বোঝাতে গেলে আরও রাগে। তার পছন্দের খাবার নিয়ে গিয়ে বলি, ছেলে মেয়েদের সঙ্গে ভাগ করে খাও। ধীরে ধীরে তার রাগ কমে এলে স্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। ভুল দুইজনেরই থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নিজে চুপ থাকার চেষ্টা করি। এখন বুঝি চুপ থাকটাই স্ত্রীর রাগ কমানোর মোক্ষম অস্ত্র।’
সাড়ে চার বছরের দাম্পত্য অভিজ্ঞতা থেকে আরাফ বলেন, ‘আমার স্ত্রী চিংড়ি মাছ আর ইলিশ মাছ বাদে কোনো মাছ খায় না। ফলে আমারও এর বাইরে তেমন কোনো মাছ খাওয়ার সুযোগ হয় না। একটা সন্তান আমাদের তারও এই খাদ্যাভাস তৈরি হয়েছে। আমার মনে হয় যে, এতে আমাদের সন্তান প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে না। স্ত্রীকে এ কথা বললেই রেগে যায়। নিজেকে দায়ী ভাবে। ফলে পরিবারে অশান্তি তৈরি হয়ে যায়। অন্য কোনো মাছ আনলে তার বাড়তি কষ্ট হয়, কারণ সেগুলো আলাদা করে রান্না করতে হয়। কিন্তু আমি এ নিয়ে কিছুই বলতে পারি না, আবার সবসময় মেনে নিতেও কষ্ট হয়। কিছু বললে ঝগড়া শুরু হয়। এতে আমারও অভিমান হয়। দেখা যায় যে দুই দিন কথা না বলেই চলে যাচ্ছে। চুপ থাকলে ও স্বাভাবিক হয়ে আসে। তারপরেও সব যে ঠিক হয়ে যায় না তা না। এরপর কোথাও বেড়াতে নিয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যায়। স্ত্রী রেগে গেলে প্রথমে বিষয়টা স্বাভাবিক পর্যায়ে নেওয়ার জন্য ঘুরতে নিয়ে যাওয়াকে সব থেকে ভালো উপায় মনে হয় আমার।’
১০ বছরের দাম্পত্য অভিজ্ঞতা থেকে এস এম প্রিন্স রহমান বলেন, ‘জীবন সঙ্গিনীর রাগ ভাঙ্গানোর অনেক উপায় থাকলেও আমার কাছে সবচেয়ে সহজ উপায় মনে হয়েছে যে, তাকে তার পছন্দের খাবার গিফট করলে তাৎক্ষণিক ফলাফল মেলে। আমার স্ত্রী মিষ্টি জাতীয় খাবার ভীষণ পছন্দ করে। এর মধ্যে ব্ল্যাক চকলেট বা চকোলেট ফ্লেভারড কেক। কোনো কারণে তার মন-মেজাজ খারাপ হলে বাসায় ফেরার সময় অথবা বাসায় থাকলে দ্রুত বাসার আশেপাশে থেকে এসব এনে দেই। আর বড় আকারের ঝগড়া বা তীব্র মন কষ্টের কিছু করে ফেললে নিজের দোষ মেনে নিয়ে চুপচাপ থাকি। ঝগড়ার উত্তর না দিয়ে নীরবে বাসায় শুয়ে থাকা, বা ফোন নিয়ে বসে থাকলে খানিকবাদে এমনিতেই পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে মোড় নেয়। তবে, দাম্পত্য জীবনে নানান চড়াই-উৎড়াই থাকবেই এটা মেনে নিলে কলহ বেশিরভাগ সময় মাত্রা ছাড়িয়ে যায় না। আর সংসারে কলহ ভয়াবহ রূপ নিলে দিন শেষে নিজেদেরই নানান ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। যা পরবরর্তীতে কাটিয়ে উঠতে অনেকসময় বেগ পেতে হয়। এ কারণে অনেক দম্পতি বৈবাহিক সম্পর্ক যত পুরনো হয় ঝগড়া বা মনোমালিন্যে ততটাই সতর্ক থাকেন। আমার বিয়ের বছর দুয়েকের মধ্যে এমনই এক ভয়াবহ ঝগড়া প্রায় বিচ্ছেদের দিকে রূপ নিচ্ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম নানান ক্ষতির পর। এতে অবশ্য একটি পজিটিভ দিক বেরিয়ে এসেছে, তা হলো সে-ই থেকে পারিবারিক কলহ বা মন খারাপের বিষয়টি এখন পর্যন্ত মাত্রাতিক্ত লেভেলে যায়নি বা দুজনেই সতর্ক থেকেছি।’