লাইফস্টাইল

অবসর রাঙিয়ে দেবে রোমাঞ্চকর কায়াকিং

ঢাকার শহরে বসবাসরতদের অনেকে অবসর কাটানোর জন্য প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে চান, পেতে চান গ্রামীণ ছোঁয়া। ইট-পাথরের নগরের নামী-দামী রেস্তোরাঁয় অবসর কাটানোর সুযোগ থাকলেও প্রকৃতির মতো সতেজতা আর স্নিগ্ধতা সেখানে মেলে না। দুই চার দিনের ছুটি পেলে কেউ কেউ রাঙামাটি কিংবা দেশের বিভিন্ন জায়গায় কায়াকিং করতে চলে যান। সুখের খবর হচ্ছে, কায়াকিং করতে আর রাঙামাটি যেতে হবে না। ঢাকার কাছেই নিতে পারবেন কায়াকিং এর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে মিলবে কায়াকিং এর সুবিধা। 

উত্তরার দিয়াবাড়ি সংলগ্ন উত্তরা সেন্টার স্টেশনের পাশেই এই কায়াকিংস্পট। দিনে দিনে যার জনপ্রিয়তা বাড়ছে ঢাকাবাসীর কাছে। ছুটির দিনগুলোতে এখানে কায়াকিং করতে ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ। অনেকেই আবার মেট্রোরেলে ভ্রমণের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে আসেন লেকের পানিতে কায়াকিং করতে। পাশে রয়েছে পার্ক ও খাবারের দোকান। বাহারী খাবার পাওয়া যায় এসব রেস্তোরাঁয়। এক অপূর্ব বিকেল কাটাতে চাইলে এই কায়াকিংস্পট হতে পারে মনের মতো জায়গা। ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে চলে যেতে হবে উত্তরা সেন্টার স্টেশনে। মেট্রোরেল স্টেশন থেকে হাতের বাম পাশেই বিডি কায়াকিং সেন্টার। মেট্রোরেলের ঠিক ১৭৩ নাম্বার পিলারের পাশেই মাঝারী একটি লেক। সেখানেই অবস্থিত বিডি কায়াকিং সেন্টার। 

টিকেট কাউন্টারে দুই ধরনের টিকেট পাওয়া যায়। দুই জন বসে কায়াকিং করার জন্য টিকেট এবং ৩ জন বসে কায়াকিং করার জন্য টিকেট। ২ সিটের কায়াকে ৩০ মিনিট কায়াকিং করতে গুনতে হবে ২০০ টাকা এবং ৩ সিটের কায়াকে ৩০ মিনিট কায়াকিং করতে গুনতে হবে ৩০০ টাকা। সাধারণত জনপ্রতি ৩০ মিনিট ১০০ টাকা এবং ৬০ মিনিট ১৫০ টাকা নেওয়া হয়। টিকেট নেওয়ার সময়ে টিকেটে দেওয়া থাকবে সিরিয়াল নাম্বার যেই সিরিয়াল নাম্বার অনুযায়ী কায়াকিংয়ের সুযোগ পেতে একটু অপেক্ষা করতে হয় আগ্রহীদের। দুই সিটের কায়াকের চেয়ে তিন সিটের কায়াক এখানে বেশি। তাই দুই সিটের কায়াকের জন্য অপেক্ষা করতে হয় বেশিক্ষণ। মূলত বিকেলের পর ভিড় বাড়তে থাকে এই কায়াকিংস্পটে। কায়াকিং এর সিরিয়াল এলেই মাইক দিয়ে ডাকা হবে সিরিয়াল নাম্বার। এরপর সিরিয়ালের টোকেন দেখালেই কায়াকে ওঠার জন্য আপনাকে সাহায্য করবে সেখানকার তত্ত্বাবধানে থাকা কর্মীরা। ব্যস্ততায় সিরিয়াল নাম্বার মিস করলেও পরে এসে আপনার গত হয়ে যাওয়া সিরিয়াল দেখালেই উঠতে পারবেন কায়াকে। 

কায়াকিং শুরুর সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মূহুর্ত হচ্ছে কায়াকে ওঠা। দুই পা ভেতরে দিয়ে বসার জন্য বেশি লম্বা ও মোটা মানুষদের জন্য বেশ ঝামেলা পোহাতে হবে। কোন ব্যক্তি যদি ৬ ফুটের বেশি লম্বা ও ১০০ কেজির বেশি ওজন হয় তবে সেখানে বসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন না। কায়াকিং শুরুর সময় চাইলে লাইফ জ্যাকেট নিতে পারবেন সেফটির জন্য। 

কায়াকিং করার নিয়ম লেখা রয়েছে রাইড টিকিটে। সেসব হলো— লাইফ জ্যাকেট পরিধান করতে হবে, দাঁড়ানো অবস্থায় কায়াকিং করা যাবে না, প্যাডেল বা বৈঠা হারিয়ে ফেললে ১৫০০ টাকা জরিমানা। কায়াকিং করার সময় চাইলে দুইটি বৈঠা নিতে পারবেন এবং কেউ একটি বৈঠাও নিতে পারবেন। তবে তিন জনের কায়াক ভালোভাবে চালানোর জন্য দুইজনকে বৈঠা ব্যবহার করতে হবে। এখানে চাইলে সবাই কায়াকিং করতে পারবেন। খুব সহজেই কায়াককে পরিচালনা করা যায়। এই শরৎয়ে কায়াকিং করতে করতে দেখতে পারবেন কাশফুল ও আকাশের সৌন্দর্য, মেট্রোরেলের ছুটে চলা। 

কায়াকিং করতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন বন্ধু আরমান আর আরিফের সাথে কথা হয় রাইজিংবিডির। তারা জানায়, নতুন এই অভিজ্ঞতা বেশ ভালো লাগলো। 

বিজয় সরণি থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন রোমান আহমেদ। রাইজিংবিডিকে তিনি জানান, পরিবার নিয়ে ঢাকায় রেস্টুরেন্টে ছাড়া কোথাও যাওয়া হয় না। এই জায়গাটা বেশ ভালো লেগেছে। মেয়েটা বেশ ঘুরতে যেতে চায় সবসময়। ওরও বেশ ভালো লেগেছে এখানে এসে। মনে হলো ঢাকার কোন জায়গা নয় প্রকৃতির খুব কাছাকাছি এসেছি। 

কায়াকিং-এর তত্ত্বাবধান করছেন বেশ কয়েকজন। আহমেদ আলী নামের একজন বলেন, আমরা এটা চালু করার পর যত দিন যাচ্ছে ততই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেক সময় এমনো হয় লোকের চাপের জন্য টিকেট বন্ধ রাখতে হয়। অনেকেই অনেক দূর থেকে আসেন আমাদের এখানে। কায়াকিং করলে প্রাকৃতিক পরিবেশে মন রিফ্রেশ হয় তাই সবাইকে আসার অনুরোধ করবো।