প্রত্যাশা থাকা ভালো কিন্তু অতিরিক্ত প্রত্যাশা আপনাকে হতাশ করে দিতে পারে। অতিরিক্ত প্রত্যাশা একজন মানুষকে কোন কোন পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে সেই বিষয়ে রাইজিংবিডির সাথে কথা বিস্তারিত কথা বলেছেন, জাতীয় মানসিক সাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেসিডেন্ট ডা. তানজিরা বিনতে আজাদ।
তিনি বলেছেন, ‘প্রত্যাশা শব্দটি শুনে যতটা সহজবোধ্য মনে হয়, বাস্তবে তার ব্যাপকতা অনেক। আমরা যখন অন্যের কাছ থেকে কোন কিছু পাওয়ার আশা করি তা হচ্ছে “প্রত্যাশা” । শব্দটা অনেক অর্থে অলীক বা কাল্পনিক ইচ্ছার সাথে জড়িত। তাই অনেক সময়ই আমাদের আকাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ হয় না। তবে কোনোরকম প্রত্যাশা ছাড়া জীবন চালানো প্রায় কঠিন কাজ, কিন্তু অসম্ভব না। বিশ্বকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই লক্ষ্য অর্জন করা যায়। যেকোন সম্পর্কের ক্ষেত্রেই আমরা নিজের দোষটা আগে দেখি না। নিজের দোষ আগে দেখা এক বিশেষ গুণ। এবং পাশের মানুষটির গুণ খোঁজা একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করা, অল্প ভালোবাসাকে বড় করে দেখা, অল্পে সন্তুষ্ট থাকা, কৃতজ্ঞ থাকা, ধৈর্য ধরা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে ক্ষমা করে দেওয়া।’
‘প্রত্যাশা তত্ত্ব’ হচ্ছে প্রত্যাশার ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তি বিশেষকে এমনভাবে কার্যে পরিচালিত করে যাতে প্রদত্ত ফলাফলের অনুসরণে কার্য সাধন করা হয় এবং ব্যক্তিকে ঐ ফলাফল অর্জনে আকর্ষিত করে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিক্টর ভ্রুম এ তত্ত্বের প্রবক্তা। ভ্রূম তার তত্ত্বে বলেন, ‘প্রেষণা দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। এর একটা হলো কেউ কোনো জিনিস কতটুকু পরিমাণে পেতে চায় এবং অপরটি হলো উক্ত জিনিসের কতটা সে পেতে পারে।’
অতিরিক্ত প্রত্যাশা কমাতে ডা. তানজিরা বিনতে আজাদের পরামর্শ
১. নিজের প্রতি মনোযোগ বাড়ানো ২. জীবনে কী অর্জন করতে চাই সে লক্ষ্য নির্ধারণ করা ৩. নিজের সাথে সৎ থাকা ৪. আত্ম-মূল্য বৃদ্ধি করা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানো ৫. সবসময় অন্যদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা না করা ৬. চাওয়ার সীমা নির্ধারণ করা ৭. আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা ও আবেগ সম্পর্কে সচেতন থাকা ৮. নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকা ৯. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ১০. অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির গুরুত্ব বাড়িয়ে না বলা ১১. স্বার্থপর না হওয়া ১২. ক্ষমার অভ্যাস গড়ে তোলা ১৩. নিয়মের মধ্য থেকে জীবনযাপন করা
ডা. তানজিরা বিনতে আজাদ জানান, জীবনে কারো থেকে সবসময় বেশি বা অতিরিক্ত কিছু প্রত্যাশা করা প্রায়ই কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের নিজের কাজ নিজে করা উচিত। কেউ নিঃস্বার্থভাবে আসলে খুব একটা সাহায্য করবেনা। তাই কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করার আগে ভাবা উচিত, নিজের কাছে এমন কী আছে, যার বিনিময়ে সে কিছু দেবে। যদি এমন হয় তাকে সহায়তা করার জন্যে কোনো প্রয়োজনে আসার যোগ্যতা সে রাখে, তাহলেই প্রত্যাশা করা উচিত।