স্থানীয় পর্যায় থেকে বিশ্বব্যাপী মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে— এমন ব্যক্তিরা টেডএক্স মঞ্চে বক্তৃতা দেন। সম্প্রতি টেডএক্স-এ বক্তৃতা দিয়েছেন চাইনিজ শিক্ষাবিদ লিসা বু। তিনি জানিয়েছেন, একটি স্বপ্ন ভেঙে গেলে দ্বিতীয় স্বপ্ন কীভাবে দেখা যায়। স্বপ্নের থেকে তিনি স্বপ্ন কোথা থেকে আসে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। লিসা বু- এর বক্তৃতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।–
মানুষের সাথে অতীত ও বর্তমানে সংযোগ স্থাপন করার জন্য বই আমাকে জাদুময় শক্তি দিয়েছে। আমি জানি আমি কখনো একাকীত্ব বা শক্তিহীন অনুভব করবো না। একটি স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া মানে তেমন কিছুই না, পৃথিবীর অনেক মানুষ আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায়। বই পড়ে আমি বুঝেছি স্বপ্নই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, বরং জানা প্রয়োজন স্বপ্ন কোথা থেকে আসে। আরও জানা প্রয়োজন আবেগ কোথা থেকে আসে, সুখ কোথা থেকে আসে। এমনকি এটা জানা প্রয়োজন যে, একটি ভেঙে যাওয়া স্বপ্নও আপনার, আমার জন্য কী করতে পারে।
১৯৭০—এর দশকে আমাকে দুই বছরের জন্য চীনের হুনানে জিমন্যাস্ট হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এরপর আমি যখন প্রথম শ্রেনিতে পড়ি সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত খরচ বহন করে আমাকে ক্রিড়াবিদদের স্কুলে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আমার প্রোকৌশলী বাবা-মা তা চাচ্ছিলেন না। চীনের সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা বিশ্বাস করতেন, একটি নিরাপদ ও ভালো বেতনের চাকরি সুখের অন্যতম কারণ হতে পারে। সেই চাকরি পছন্দ হোক বা না হোক, তাতে কিছু আসে যায় না।
আমার স্বপ্ন ছিল, চাইনিজ অপেরা শিল্পী হবো। আমি কল্পনায় পিয়ানো বাজাতাম। কিন্তু একজন অপেরা শিল্পী হতে হলে অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিতে হবে, অ্যাক্রোব্যাটিক্স শিখতে হবে। এজন্য আমি অপেরা স্কুলে যাওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে শুরু করি। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে চিঠি লিখি। কিন্তু কোনো প্রপ্তবায়ষ্ক ব্যক্তি আমার স্বপ্ন পছন্দ করেননি। তারা বুঝতেও পারেননি যে আমি আমার স্বপ্নে অবিচল ছিলাম। কিন্তু আমার বন্ধুরা আমাকে সমর্থন জোগাতো, তারা ছিল আমার মতোই শিশু। তখন ছিলাম শক্তিহীন। যখন ১৫ বছর বয়সে পৌঁছলাম, ভাবলাম আর সময় নেই, এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছি। আমার স্বপ্ন আর সত্যি হবে না। তাই সুখের জন্য দ্বিতীয় স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম।
কিন্তু এটা অন্যায়। তারপরেও আমি দ্বিতীয় স্বপ্ন খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল, আমাকে শেখানোর জন্য আশপাশে কেউ নেই? ভালো। আমি বইয়ের কাছে ফিরলাম। বই পড়তে গিয়ে আমি আমি ‘রোল মডেল’ আত্মনির্ভরশীল নারীকে খুঁজে পেয়েছি। চিপার বাই দ্য দোজেন (Cheaper by the Dozen) বইটি আমাকে দক্ষ করে তোলে। আমি দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এবং The Complete Works of Sanmao থেকে ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি। ১৯৯৫ সালে আমি ইউএস-এতে আসি। এই বইটি প্রথমে আমি ইউএস-এতে পড়ি। কারণ এটি চীনে নিষিদ্ধ ছিল। চীনের কৃষকদের জীবন নিয়ে লেখা ‘দ্য গুড আর্থ’ (The Good Earth) বই। বাইবেল আমার কাছে আকর্ষণীয় কিন্তু অদ্ভূত লাগে। এটা অন্যদিন বলবো। কিন্তু এই বইয়ের পঞ্চম আদেশ আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। এখানে বলা আছে ‘তুমি তোমার বাবা মাকে সম্মান করবে।’ ‘সম্মান’ এই শব্দটা অন্যরকম। এটা আনুগত্যের চেয়ে ভালো। তাই এই বাক্যটি আমার কাছে হাতিয়ারের মতো হয়ে যায়। আমি আমার পিতামাতার সঙ্গে আবার স্বাভাবিক সম্পর্ক শুরু করতে পারি। এবং কনফুসিয়ান (চীনের একটি নৈতিক ও দার্শনিক বিশ্বাস ও ব্যবস্থা) অপরাধ বোধ থেকে বের হয়ে আসতে পারি।
বলতে পারি, খ্রিস্ট এবং বুদ্ধ উভয়ই তিনটি বিষয়ের মধ্য দিয়ে গেছেন। যীশু খ্রীষ্টের প্রাধান্য ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ে। বুদ্ধের প্রাধান্য ছিল সবই মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে। যেমন লালসা, ভয় এবং সামাজিক কর্তব্য।
আমার মনে হয়, আপনি যদি দুইটি ভাষা জানেন, একই বই দুই ভাষায় পড়া আপনার জন্য আনন্দদায়ক হয়ে উঠতে পারে। একটি মানচিত্র একটি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি বহন করে। তুলনামূলক পাঠ্যাভ্যাস আমার অন্তদৃষ্টি খুলে দিয়েছে। আমি নতুন সংস্কৃতির মুখোমুখি হওয়ার অভ্যাস শুরু করেছিলাম তুলনামূলক পড়ার মাধ্যমে।