লাইফস্টাইল

প্রেম কেন ভেঙ্গে যায়? যেভাবে হৃদয় ভঙ্গের বেদনা সামলাতে পারেন

প্রেম দুইজন মানুষের আবেগীয় সম্পর্ক। যেকোন একজন যদি এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকেন তাহলে সম্পর্কটি ভেঙে যায়। কারও কারও পক্ষে এই সম্পর্কের প্রভাব কাটিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্ক কখন ভেঙে যায় আর কীভাবে প্রেম ভেঙে যাওয়ার বেদনা কাটিয়ে ওঠা যায়, সে বিষয়ে রাইজিংবিডির সাথে কথা বলেছেন জাতীয় মানসিক সাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এফসিপিএস পার্ট ২ ট্রেইনি মনোবিদ ডা. মুনিরা হোসেন মনি।

কবি হেলাল হাফিজের কবিতা ‘হয়তো তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি/ নয়তো গিয়েছি হেরে/ থাক না ধ্রুপদী অস্পষ্টতা/ কে কাকে গেলাম ছেড়ে’ উল্লেখ করে মনোবিদ ডা. মুনিরা হোসেন মনি বলেন, আমাদের জীবনে যেমন প্রেম, ভালোবাসা রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিচ্ছেদ। নানা কারণে বিচ্ছেদ হতে পারে। যেমন—

অসঙ্গতি: দুজনের মধ্যে যদি মিলের চেয়ে অমিল বেশি থাকে, দুইজনের কথা ও কাজের মধ্যে যদি অনেক বেশি পার্থক্য ধরা পড়তে থাকে, তবে সেই সম্পর্ক বিচ্ছেদের দিকে যেতে পারে।    ভুল বোঝাবুঝি: অনেক সময় ভুল বোঝাবুঝি বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যেতে পারে।  আপনি যদি আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে বিশ্বাস করতে না পারেন, বিচ্ছেদ হতে পারে। এ ছাড়াও মাদকাসক্তি, মানসিক নির্যাতন এবং পারিবারিক কারণে প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে।

প্রেমের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে হৃদয় ভেঙে যায়। এই বেদনা কাঠিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে অসম্ভব নয়। এজন্য কী কী করতে হবে জানিয়ে দিয়েছেন ডা. মুনিরা হোসেন মনি।

১. নিজেকে ভালবাসুন। কিছুদিন নিজেকে সময় দিন। বিচ্ছেদ পরবর্তী যে আবেগের ইনটেনসিটি (তীব্রতা) থাকে সেটা অনেকাংশে কমে যাবে।

২. দৈনন্দিন জীবনে কাজকর্ম মেইনটেইন করে চলুন। অনেক সময় দেখা যায় যে বিচ্ছেদ হলে অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে দেন, চাকরি-বাকরি ছেড়ে দেন। যেটা মোটেও করা যাবে না। সর্বোপরি আপনার নিয়ম মেনে দৈনন্দিন কাজ করতে হবে।

 ৩.  সাস্থ্যকর উপায়ে চিন্তা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যেমন— আপনি আপনার লাইফস্টাইল এ চেঞ্জ আনতে পারেন, বাইরে কোথাও হাঁটতে যেতে পারেন, অথবা আপনি ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ শুরু করতে পারেন।

৪. পরিবারের সাথে আত্মিক বন্ধন বাড়াতে পারেন। পরিবারের সাথে অ্যাটাচড থাকলে বিচ্ছেদের যে কষ্ট তা অনেকাংশে লাঘব হয়।

৫. আপনার যেভাবে ভালোলাগে সেভাবে কষ্টগুলো ভেন্টিলেট করতে পারেন।

৫. বিচ্ছেদ যদি একপাক্ষিক হয়, এক্ষেত্রে  মনের মধ্যে একটা অশান্তি, অস্থিরতা থেকে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনারা একসাথে বসে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অস্থিরতা অনেকাংশই কমে যাবে।

৬. মোকাবিলা কৌশল বাড়াতে হবে। বিচ্ছেদের পর ভুলবশত অনেকে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করা, নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, কাজে মন দিতে না পারা, মাদকাসক্ত হওয়া  ইত্যাদি। আপনাকে আপনার সমস্যা মোকাবেলার কৌশল আয়ত্ব করতে হবে।

ডা. মুনিরা হোসেন মনির পরামর্শ হচ্ছে, সমস্যা মোকাবিলার কৌশল আয়ত্ব করার জন্য আপনাকে আপনার সমস্যার দিকে ফোকাস দিতে হবে। আপনি রিলাক্সেশন টেকনিক মেইনটেইন  করতে পারেন। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বাইরে ঘুরে আসতে পারেন। একসাথে কোথাও খেতে যেতে পারেন। পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম অতিবাহিত করতে পারেন। খাওয়া দাওয়া ঘুম ঠিক রাখতে হবে।  দীর্ঘদিনের জন্য দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন।

উল্লেখ্য, প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হলে, মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে, দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিতে অপারগ হলে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে কাউন্সিলিং ও সাইকোথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।