আমরা কাজ করতে করতে হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে ফেলি। আবার কারও কথা শুনতে শুনতে অন্যকিছু ভাবতে শুরু করি। এতে কিছু সময়ের জন্য বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। এটি এমন একটি পরিস্থিতি যাকে ‘জোন আউট’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
স্যার এইচএন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মেহেজাবিন দোর্দি বলেছেন, মাঝে মাঝে ‘জোন আউট’ বা হঠাৎ মনোযোগ কমে যাওয়া গুরুতর সমস্যা নয়। কিন্তু এটি এমন একটি সমস্যা যা আপনার দৈনন্দিন জীবন, কর্ম এবং সম্পর্কের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পারে।
‘‘যদি আপনি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা কথোপকথনের সময় হঠাৎ বেখেয়াল হয়ে পড়েন তবে এর পেছনে বেশ কিছু কারণ দায়ী থাকতে পারে। যেমন মনোযোগের ঘাটতি, উদ্বেগ বা বিষণ্নতা।’’— যোগ করেন দার্দি।
এই মনোবিদ জানিয়েছেন, জোন আউট সব সময় খারাপ নয়। আসলে, এটি আপনার মস্তিষ্কের ফোকাস থেকে মানসিক বিরতি হিসেবে কাজ করতে পারে। আপনার মস্তিষ্কের রিচার্জ করার জন্য সময় প্রয়োজন। বিশেষ করে আপনি যখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে পারেন না তখন মস্তিষ্ককে বিরতি দেওয়ার জন্য জোন আউট হতে পারে। এই অবস্থা সৃজনশীলতা বাড়ায় এবং দক্ষতা উন্নয়ন করে। জোন আউট আপনার আবেগগুলো প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা দিতে পারে। এবং আবেগগুলো প্রকাশের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
জোন আউট কখন খারাপ—
যদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা কথোপকথনের সময় বার বার মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে উদ্বেগ বা বিষণ্নতার মতো সমস্যাগুলো থেকে এই অবস্থা তৈরি হতে পারে। অনেক সময় ট্রমা বা মানসিক চাপের কারণ ব্যক্তি বাস্তবতা থেকে নিজের বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে।
সমস্যা মোকাবিলায় করণীয়
ই-মেইল লগ আউট: সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ই-মেইল বা ইনবক্স দেখা বন্ধ রাখুন। ছুটির দিনটা একেবারে অফিশিয়াল কাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এতে মানসিকভাবে রিচার্জ হতে পারবেন এবং নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করতে পারবেন।
মননশীলতা অনুশীলন করুন: আপনার চিন্তাভাবনার ওপর সচেতনতা এবং নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে ধ্যান বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। যা জোন আউটের প্রবণতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
বিরতি নিন: কাজ বা পড়ার সময় নিয়মিত বিরতি নিন। এতে মানসিক ক্লান্তি মোকাবিলা করা সহজ হবে।
কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দিন: সারাদিনের কী কী কাজ করবেন, কীভাবে করবেন, কোন সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে তা ঠিক করে নিন। এবং সেই অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নিন। এতে জোন আউটের সমস্যা
উল্লেখ্য জোন আউট কখনো কখনো স্বাভাবিক। তবে বার বার জোন আউট হলে ব্যক্তি বাস্তব জীবনের সঙ্গে ভারসাম্য তৈরি করতে ব্যর্থ হন। এই পরিস্থিতি দেখা দিলে অবশ্যই মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র: ইণ্ডিয়া এক্সপ্রেস