পশমিনা শাল বোনা হয় চাংথাং মালভূমিতে চড়ে বেড়ানো চাংথাঙ্গি নামক পাহাড়ি ছাগলের পশম দিয়ে। কারুশিল্পীদের হাত যত্নে বোনা এই শাল ঐতিহ্যবাহী এবং গৌরবময় শীতপোশাক। বর্তমানে সিন্থেটিক বা একাধিক উপাদানে তৈরি শাল পশমিনা শাল হিসেবে বাজারে বিক্রি হয়। এই দুই শালের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। আসল পশমিনা কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো সিন্থেটিক বা মিশ্রিত উপাদানে তৈরি শালে মেলে না। নমনীয়তা, বুননের পার্থক্য, কাপড়ের রং এইসব কিছুতেও বিস্তর পার্থক্য তৈরি হয়। পশমিনা শাল কেনার সময় যে কয়টি বিষয় খেয়াল রাখলে ঠকবেন না।
নমনীয়তা যাচাই করুন: আসল পশমিনা কাপড়ের প্রধান ও অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর নমনীয়তা, সুক্ষ্মতা এবং কোমলতা। এর ওপর হাত বুলিয়ে নিলে পাখির পালকের মতো মনে হবে। এই শাল খুবই হালকা এবং উষ্ণ।
পশমিনা শাল বোনা হয় চাংথাঙ্গি নামক পাহাড়ি ছাগলের পশম দিয়ে।
বুননের কাজ পর্যবেক্ষণ: ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে হাতে বোনা হয় পশমিনা শাল। এই শালের বুননগুলো সামান্য অসমান হয়ে থাকে। কিন্তু সিন্থেটিক শালের বুনন হয় ত্রুটিহীন কারণ এটি মেশিনে বোনা হয়। এই তারতম্য ধরতে পারলে সহজেই পশমিনা শাল চিনতে পারবেন। এই সূক্ষ্ম তারতম্যটি বোঝার জন্য শাল হাতে নিয়ে ধরে ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখতে পারেন।
কাপড়ের রং যাচাই করে নিন: পশমিনা শাল সূর্যের আলোয় ধরলে চকচক করে না। কারণ এই শাল খুব হালকা এবং সূক্ষ্ম হলেও এতে রোদ প্রবেশ করতে পারে না। অন্যদিকে সিন্থেটিক শাল সূর্যের আলোয় ধরলে চকচক করে। এ ছাড়া সিল্ক, নাইলন বা অন্যান্য কৃত্রিম উপাদানের মিশেলে যে শাল তৈরি হয় সেগুলোও রোদে আর উজ্জ্বল মনে হয়।
উলের স্থির বিদ্যুৎ সংবেদনশীলতা নিরীক্ষা: শাল কেনার আগে দুই প্রান্ত ধরে আলতোভাবে ঘষে দেখতে পারেন। যদি শালের উলের পশম দাঁড়িয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে কৃত্রিম উপায়ে বানানো হয়েছে। কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় বানানো পশমিনা শালে স্থির বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় কার ঘর্ষণের ফলে ফাইবারগুলো সংবেদশীল হয় এবং দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক পশমে বোনা শাল ঘর্ষণেও স্থির বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে না। তাই এই শালের দুই প্রান্ত আঙুল দিয়ে ঘষলেও পশম দাঁড়াবে না।
সুতা পুড়িয়ে পরীক্ষা: পশমিনা চেনার জন্য একটি ছোট সুতা টেনে পুড়িয়ে দেখতে পারেন। আসল পশমিনা হলে ধীরে ধীরে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। আর সিন্থেটিক ফাইবারের হলে ধীরে ধীরে গলতে শুরু করবে এবং প্লাস্টিকের মতো গন্ধ ছড়াবে। তবে এই পরীক্ষাটি করার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, পশমিনা শাল আসল নাকি নকল তা চেনার জন্যি এই শালের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর দিকে খেয়াল রাখাই যথেষ্ট। সুক্ষ্মতা, নমনীয়তা, সূর্যালোক শুষে নেওয়া এবং স্থির বিদ্যুতের প্রতি অসংবেদনশীলতাই এর মূল বৈশিষ্ট্য। এই সব বৈশিষ্ট্য পশমিনাকে অনন্য করে তুলেছে।
সূত্র: ইউএনবি