ধরুন আপনার সামনে দুইটি টি-শার্ট আছে। একই রঙের কিন্তু আলাদা নকশার। আপনি কোনটি নেবেন? সিদ্ধান্ত নিতে অনেকেই সময় নেবেন। আর এটাই হচ্ছে সিদ্ধান্তহীনতা। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, দুই বা ততোধিক অপশন থেকে যদি কোনো একটিকে বেছে নিতে হয় ঠিক তখনই যে সমস্যাটি তৈরি হয় সেটি সিদ্ধান্তহীনতা। কমবেশি সব ধরনের মানুষের মধ্যেই সিদ্ধান্তহীনতা দেখতে পাওয়া যায়।
মানুষ কেন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না: সিদ্ধান্ত নিতে না পারার অনেক কারণ থাকতে পারে। সেগুলোর মধ্যে প্রধান কারণ আত্মবিশ্বাসের অভাব। যার কারণে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায়। আরেকটি কারণ হতে পারে দুটির মধ্যে কোনটি তার জন্য ভালো এটি নিশ্চিত হতে পারে না। এসব কারণেই মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
সিদ্ধান্তহীনতায় থাকলে কী কী সমস্যা হতে পারে: যারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন তারা নতুন পদক্ষেপ নিতে পারেন না। কোন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তারা অনেক চিন্তা করেন এবং মানুষকে জিজ্ঞেস করতে থাকেন। একবারে সিদ্ধান্ত তারা কোনদিন নিতে পারেননা। একটি সিদ্ধান্ত নিলে কয়েকদিন পর আবার সেটি পরিবর্তন করেতে চান এবং সে সময়টিতে আবার নতুন সিদ্ধান্ত নেন। কারণ তার মনে হয় যে আগের সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। এরা যেহেতু তীব্র মানসিক চাপে ভোগে তাই এদের মধ্যে ডিপ্রেশন চলে আসে এবং সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে চরম অস্থিরতা কাজ করে। সিদ্ধান্তহীনতা থেকে তাদের মধ্যে হঠাৎ করে রেগে যাওয়ার সমস্যা সৃষ্টি হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ভুল হলে তারা আত্মবিশ্বাসকে একেবারে শুন্যের কোঠায় নামিয়ে নিয়ে যায়। অর্থাৎ পুরো বিষয়টা একটা চক্রের মত কাজ করতে থাকে। ফলে যে কাজ করতে যতটা প্রচেষ্টা করা দরকার এবং পরিশ্রম করা দরকার সেটি না করে ঐ ব্যক্তির ফোকাস থাকে সে কাজটি করতে পারবে কিনা তার উপর। ফলে সেই কাজটি সে আর করতেই পারে না। এ কারণে তার মধ্যে ভয় কাজ করে এবং এগুলো শরীরকে প্রভাবিত করে। দেখা যায় যে তার হাত-পা কাঁপছে, অস্থির লাগছে, হৃদস্পন্দন বাড়ছে, হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, শরীর কাঁপছে, ঘাম হচ্ছে, গলা শুকিয়ে আসছে ইত্যাদি। শারীরিক প্রভাবে ব্যক্তির আচরণেও সমস্যা দেখা দেয়।
যেভাবে এসব সমস্যার সমাধান করা যায়
সহজ ভাবে মেনে নেওয়া: প্রথমেই যেটি করতে হবে সবকিছু সহজভাবে মেনে নিতে হবে। যেকোন সময় সিদ্ধান্ত নিলে সেটি ভুল প্রমাণিত হতেই পারে তাই বলে ভুল কেন হল সেটি ভেবে আত্মবিশ্বাস হারানো চলবে না। যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় মানসিকভাবে প্রস্তত থাকতে হবে যে সিদ্ধান্তটি ভুল হতেই পারে, এটি খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা এটা মেনে নিতে হবে।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবে দেখুন, প্রস্তুতি নিন: যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন তখন সেটি সফল হলে কী কী ইতিবাচক দিক আসবে আর কী কী নেতিবাচক বিষয় ঘটতে পারে সেসব সম্পর্কে ভাবুন। তারপর নেতিবাচক বিষয়গুলো সামাল দেওয়ার মত সামর্থ্য আছে কিনা সেটি দেখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নেতিবাচক বিষয়ের প্রতি আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকলে পরবর্তীতে নেতিবাচক বিষয় সামাল দেওয়া সহজ হয়।
নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না: অনেক সময় মনে হতে পারে যে অন্য কেউ এই কাজটি করতে পারছে আমি কেন পারছি না। আবার পরিবারের মানুষেরা অনেক সময় একজনের সঙ্গে অন্যজনের তুলনা করতে পারেন। এসব বিষয় মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কমিয়ে ফেলে। এতে করে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এক ধরনের ভয় কাজ করে। তাই অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা বন্ধ করুন।
নিজের প্রশংসা করুন: জীবনে কিছু না কিছু করেছেন যেটি ইতিবাচক। শেষ পর্যন্ত ছোট বিষয় হোক না কেন তার জন্য নিজের প্রশংসা করুন দেখবেন আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে। তখন সিদ্ধান্ত নেয়াও আপনার জন্য অনেক বেশি সহজ হবে।
শিশুর প্রতি নজর দিন: মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন যে শিশু ছোট থেকে অনেক বেশি আদরে বড় হয় তার সব সিদ্ধান্ত তার বাবা-মা বা অন্য কেউ নিয়ে দেয়। এমন শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে নির্ভরতার প্রবণতাটা ছোটবেলা থেকেই চলে আসে। ফলে বড় হওয়ার পরও তাদের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার হলে তারা সেদিন নিতে পারে না। সেক্ষেত্রে শিশুদেরকে ছোটবেলা থেকেই ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। যাতে করে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। যেমন তাকে বলা যেতে পারে সকালে নাস্তায় সে কি খেতে চায়। ডিম ভাজি নাকি ডিম পোচ। এ ধরনের অভ্যাস তার মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মানসিকতা তৈরি করবে।
সূত্র: বিবিসি