একাত্তর সালের আজকের (৬ মার্চ) দিনেও বঙ্গবন্ধুর ডাকে সকাল ছ’টা থেকে দুপুর দু’টা পর্যন্ত হরতাল ছিলো। এই দিন দুপুরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তার ভাষণের পুরোটা জুড়েই ছিলো হুমকি ও ধমকি। ছিলো সামরিক বাহিনী দিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি।
অন্যদিকে বেপরোয়া বাঙালীরাও তখন স্বাধীনতার স্বপ্নে উদ্দীপ্ত এবং বিক্ষুব্ধ। সবার মনেই জল্পনা, পরদিন ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেবেন বাঙালীর মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- ভাষণে তিনি কী বলবেন? বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার ঘোষণা তার বর্জকন্ঠে উচ্চারিত হবে কি? এ নিয়ে তখন জল্পনা-কল্পনার অন্ত ছিল না।
পরিস্থিতি এ রকম- একদিকে স্বাধীনতা ঠেকাতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানি সামরিক হানাদাররা, অন্যদিকে যে কোন আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে অটুটবন্ধনে বীর বাঙালীরা। সভা, মিছিল, কারফিউ ভঙ্গ, গুলিতে বাঙালী হত্যা- সব মিলিয়ে অগ্নিগর্ভ সময়, বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৬ মার্চের হরতালও সারাদেশে সর্বাত্মকভাবে পালিত হয়। গত কয়েকদিনে সেনাবাহিনীর নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এই ক’দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য বঙ্গবন্ধু ও বাংলার জনগণকে দায়ী করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বেতারে ভাষণ ছিলো আগের দিন (৫ মার্চ) ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো ৫ ঘণ্টা গোপনে বৈঠক করে যে খসড়া তৈরি করেছিলেন তারই প্রতিফলন।
অন্যান্য ঘটনাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙ্গে ৩৪১ জন কারাবন্দী পলায়নকালে পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়।
এদিন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক শাসক লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে সরিয়ে তদস্থলে ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ খ্যাত লে. জেনারেল টিক্কা খানকে উভয় পদে নিযুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে এয়ার মার্শাল আসগর খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “পরিস্থিতি রক্ষা করার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। বাকি বিষয় আগামীকাল শেখ মুজিবের বক্তৃতায় জানতে পারবেন।”
কার্যত, সারা দেশের মানুষ এদিন থেকে অধীর আগ্রহে প্রহর গুনতে থাকে ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে পরবর্তী দিকনির্দেশনা জানার।