আহমদ নূর : ফয়সাল আহমেদকে শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা বেশি দিন পাইনি। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের প্রফেশনাল মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। নিয়মিত ক্লাসও করত না। ক্যাম্পাসে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই আমাদের পরিচিত। তবে অল্প যে ক’দিন ক্লাসে এসেছিল সে ক’দিনেই ও সবার মন জয় করেছিল। গত সোমবার নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন বেসরকারি টেলিভিশন বৈশাখী টিভির সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ। তার স্মৃতিচারণ করে বুধবার কথাগুলো বলছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক তপন মাহমুদ লিমন। তপন মাহমুদ লিমন বলেন, ফয়সাল সব সময় হাসি-খুশি থাকত। ও যখন রাগ করত তখনো যেন হাসত। ওর হাসি মাখা মুখ যেন চোখের সামনে ভাসছে। ‘আমাদের এই ক্যাম্পাসে ও অল্পদিন পড়লেও এখানে অনেকের সঙ্গেই তার চমৎকার সম্পর্ক ছিল। খুব সাধারণ জীবনযাপন ছিল ওর।’ এর আগে বুধবার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশ পথেই ফয়সালের স্মরণে একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে। বিভাগের সেমিনার কক্ষেও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরো একটি শোক ব্যানার টাঙানো হয়েছে। ব্যানারগুলোতে ফয়সালের অকাল প্রয়াণে শোক জানানো ও তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়েছে। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষর্থী রাকিব হাসান বলেন, ফয়সাল ভাই পেশাগত জায়গা ও মানুষ হিসেবে ছিলেন অনেক ভালো ও উদার মনের। তার স্নেহ পেয়েছি। কোনো কারণে আমাদের মন খারাপ থাকলে তিনি উৎসাহ দিয়ে মন ভালো করে দিতেন। যখন স্ট্যামফোর্ডের জার্নালিজমের কোনো শিক্ষার্থী তার কাছে যেত তখন তিনি যথাসম্ভব উপকারের চেষ্টা করতেন। অথচ তিনি শুধু আমাদের ডিপার্টমেন্টে মাস্টার্স কোর্স করেছিলেন।
বৈশাখী টিভির সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ
ঢাকার বাইরে যাচ্ছি বৃহস্পতিবার বিকেলে ফয়সালের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার পরিবার গ্রামের বাড়ি গেছেন। ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী মো. সোলাইমানের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, রোববার রাতে ঢাকার বাইরে কোনো একটি কাজে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ফয়সাল। মো. সোলাইমান বলেন, অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন ফয়সাল। তার মতো মানুষ হয় না। আমার সাথে কত সুন্দর করে কথা বলত। কখনো বাসার দারোয়ান মনে করেনি। সোলাইমান বলেন, এই বাসার লিফট বন্ধ হয়ে যায় সাড়ে ১১টায়। তিনি বেশির ভাগ সময় বাসায় আসতেন দেরি করে। লিফট বন্ধ করে দিলেও কোনো দিন লিফটটা চালু করানোর ব্যাপারে বলেননি। লিফট চালু না থাকলে তিনি হেঁটেই ওপরে চলে যেতেন। নিহত আহমেদ ফয়সালের বাইক দেখিয়ে মো. সোলাইমান বলেন, এই যে দেখছেন ফয়সাল মামার বাইক। কোনো দিন এভাবে ঢেকে রেখে যায় না। সেদিন যাওয়ার সময় কাপড় দিয়ে ঢেকে গেছেন। রাত বাড়লেই মনে হয় এই বুঝি ফয়সাল মামা গাড়ির হর্ন দিচ্ছে। এত ভালো মানুষ ছিল বলেই হয়তো আল্লাহ তাকে নিয়ে গেল। ফয়সালের কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তিনি ঘুরতে পছন্দ করতেন। কাউকে না জানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতেন। সেখানে পৌঁছে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে সবাইকে ‘সারপ্রাইজ’ দিতেন। তার সহকর্মী যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার রাব্বি সিদ্দিকী বলেন, প্রায়ই ওর কর্মকাণ্ডে ‘সারপ্রাইজড’ হতাম। কিন্তু এবার সে এভাবে চলে যাবে সেটা মেনে নিতে পারছি না। সোমবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ইউএস-বাংলার একটি বিমান ৪ জন ক্রু ও ৬৭ আরোহী নিয়ে বিমানটি কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। ফ্লাইটের পাইলট-ক্রুসহ ৩৬ বাংলাদেশি ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের তালিকায় বৈশাখী টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ফয়সাল আহমেদও রয়েছেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ মার্চ ২০১৮/নূর/সাইফ/এসএন