সুইডেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গোথেনবার্গ। সাজানো গোছানো ছবির মতো এই শহরটিতে যখন পা রাখি তখন শহরময় ঝিরঝির বৃষ্টি। সামার সিজনের সেই ভেজা রাতে শহরের পিচঢালা পথে প্রায় নিঃশব্দে চলছিল বাসটি। যে বাসে শুধু চালক বসে থাকেন, হেলপারের প্রয়োজন হয় না। এয়ারপোর্ট থেকে বাসটি ছাড়ার আগে যাত্রীরা লাইন ধরে টিকিটের বারকোড স্ক্যান করে যাত্রীরা উঠছিলেন একে একে। ভিড় নেই, ঠেলাঠেলি নেই। শেষ যাত্রী উঠানোর আগে চালক একবার দেখলেন সিট খালি আছে কিনা। কেননা, এ শহরে বাসে দাঁড়িয়ে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নাই।
সিটিং যাত্রী পূর্ণ হতেই বাসের যাত্রা শুরু। টানা তিরিশ মিনিটের মতো চলার পরে বাসটি গিয়ে থামল গোথিয়া টাওয়ারের সামনে। গোথিয়া টাওয়ারেই এখানেই কয়েকদিন থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
গোথেনবার্গ শহরেই এ বছর ‘গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স’ বা জিআইজেসি ২০২৩-এর আসর বসেছিল; যা সারা বিশ্বের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ বলে পরিচিত। এ বছর ১৩০টি দেশ থেকে দুই হাজারেরও বেশি সাংবাদিক এই কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন। একজন স্পিকার হিসেবে আমি এই কনফারেন্সে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। কনফারেন্সের আয়োজক গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক (জিআইজেএন) আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। প্রি-কনফারেন্স কর্মশালাসহ এই কনফারেন্সের মেয়াদকাল ছিল চারদিন; ১৯-২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩। আমি প্রি-কনফারেন্স কর্মশালায় বাংলাদেশের উপকূলের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের গল্প উপস্থাপন করি।
স্পিকার হিসাবে আমন্ত্রণ পাওয়ার সুবাদে একই সাথে আমি কনফারেন্সের একজন অংশগ্রহণকারী। এবারই প্রথমবার আমি এ কনফারেন্সে যোগ দিয়েছি। এখান থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছি। এই আসরে যোগদান করতে না পারলে হয়ত সাংবাদিকতা পরিপূর্ণ হত না। অনুসন্ধানের নানান টুলস, টেকনিক এখানে থেকে রপ্ত করতে পারেন সাংবাদিকেরা। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের নেটওয়ার্কিংয়ে যুক্ত হওয়ার বড় সুযোগ রয়েছে এই কনফারেন্স থেকে।
গ্লোবাল ইসভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে প্রি-কনফারেন্স কর্মশালায় প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন রফিকুল ইসলাম মন্টু
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে আরও ধারালো করতে, শাণিত করতে, এই কনফারেন্স অফুরন্ত রসদ যোগাতে পারে। কি শিখেছি, কি জেনেছি- সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে গোথেনবার্গ শহরে পৌঁছানোর গল্পটা না হয় কিছুটা আলোকপাত করা যাক।
বৃষ্টিভেজা রাতে গোথেনবার্গ শহরে টার্কিশ এয়ারলাইনসের ১৭৯৯ ফ্লাইটটি গোথেনবার্গ এয়ারপোর্টে অবতরণ করেছিল সন্ধ্যা ৭টায়। গোথেনবার্গে যখন সন্ধ্যা ৭টা বাজে, বাংলাদেশ সময় তখন রাত এগারটা। অর্থাৎ দুই দেশের মধ্যে সময়ের ব্যবধান চার ঘণ্টা। যদিও আবহাওয়াজনিত কারণে গন্তব্যে অবতরণে বেশ খানিকটা বিলম্ব হয়েছিল। রানওয়ে থেকে বৃ্ষ্টিতে ভিজেই খানিক পথ পায়ে হেঁটে এয়ারপোর্টে প্রবেশ করতে হয়েছিল। গোথেনবার্গ এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর আগে প্রায় আট ঘণ্টা কেটেছে টার্কিশ ফ্লাইটে। এর আগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরও প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে টার্কিশ এয়ারলাইনসের ৭১৩ ফ্লাইটের যাত্রা শুরুর কথা ছিল ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে। কিন্তু প্রথমবার ডিলে ম্যাসেজ আসে, ২ ঘণ্টা বিলম্বে ফ্লাইট ছাড়ার কথা জানায়। সময় শেষ হওয়ার আগে পুনরায় ডিলে ম্যাসেজে জানানো হয়, ফ্লাইট ছাড়বে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে। সেই সময়সূচি অনুযায়ী যাত্রা করে টার্কিশ এয়ারলাইনসের ৭১৩ ফ্লাইটি। সিডিউল সময় অনুযায়ী টার্কিশ এয়ারপোর্টে সাড়ে ৩ ঘণ্টার যাত্রা বিরতি থাকার কথা ছিল। কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিলম্বটা পুষিয়ে যায় টার্কিশ এয়ারপোর্টে। সেখানে আর যাত্রা বিরতি করতে হয়নি।
পৌঁছানোর পরেই গোথেনবার্গগামী টার্কিশ এয়ারলাইনসের ১৭৯৯ ফ্লাইটটি পেয়ে যাই। লাইন ধরে যাত্রী উঠছেন। এই ফ্লাইটে ওঠার সময়েই মূলত কনফারেন্সের আমেজ পাই। ফ্লাইটের যাত্রীদের অধিকাংশই বিভিন্ন দেশ থেকে টার্কিশ এয়ারপোর্ট হয়ে গোথেনবার্গ যাচ্ছিলেন। গল্পে গল্পে কেটে যায় প্রায় চারটি ঘণ্টা। মেঘের উপরে ভেসে ভেসে ফ্লাইট রানওয়ে ছোঁয়।
গোথেনবার্গ এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন পেরোতে সময় লাগেনি। লাইনে দাঁড়ানো প্রায় সবাই সাংবাদিক। কনফারেন্সে যোগদানের জন্য এই শহরে এসেছে। এয়ারপোর্টের গেট পেরিয়ে বাইরে আসার পরেও অঝোর বৃষ্টি। ’ফ্লাইগবাসারনা’ বাসের অপেক্ষা করছিলাম। ওই বাসটির টিকিট আগেই প্রেরণ করা হয়েছিল। টিকিটের বারকোট আমার অগ্রিম টিকেটের প্রমাণ। ’ফ্লাইগবাসারনা’র এয়ারপোর্ট কোচটি থেমেছিল গোথিয়া টাওয়ারস-এর সামনেই, রাস্তার ওপারে। গোথিয়া টাওয়ারস শহরের একটি বড় হোটেল। এখানেই থাকার ব্যবস্থা এবং প্রোগ্রাম ভেন্যু। হোটেল রিসিপশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে টাওয়ার-৩ এর ৫ তলায় কক্ষে বিশ্রামে যেতে সেখানকার সময় রাত প্রায় দশটা বেজেছিল। রাতের অনেকটা সময় বাকি। ইচ্ছে করলে ৮ ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেওয়া যেত। ক্লান্ত শরীর তখন সেটাই চাচ্ছিল। কিন্তু সকাল হতেই নির্ধারিত প্রি-কনফারেন্স কর্মশালা শুরু হবে; যেখানে আমার প্রেজেন্টেশন। প্রস্তুতি, আবারো রিভাইস, টেনশন, রাতে আর তেমন ঘুম হলো না। সামার সিজনেও বৃষ্টিভেজা গোথেনবার্গ শহরটিকে যেন ঘিরে রেখেছিল শীতল আবহাওয়া। শীত ভোরের আবহ নিয়েই হোটেলের ব্রেকফাস্ট কর্নারে গিয়েছিলাম, তারপরে প্রি-কনফারেন্স কর্মশালা কক্ষে। লাইন ধরে রেজিষ্ট্রেশন এবং গলায় কনফারেন্সের অংশগ্রহণকারী কার্ড এবং হাতে ব্রেসলেট নিয়ে প্রত্যেককে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। এই কার্ড এবং ব্রেসলেটই ছিল আমরা কনফারেন্সকালীন পরিচয়। এই দুটো দেখাতে না পারলে প্রোগ্রাম ভেন্যুতে প্রবেশ করা যাবে না, লাঞ্চ প্যাকেট পাওয়া যাবে না, এমনকি ব্রেকফাস্টও করা যাবে না।
জানা, বোঝা, সমৃদ্ধ হওয়া অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার টুলস-টেকনিক শেখা, নেটওয়ার্কিং শক্তিশালী করা, যোগাযোগ বৃদ্ধি করা, সমন্বয় করা- সবই ছিল গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে। একই সাথে অনেক সেশন। কোথাও অনেক বড় পরিসরের আলোচনা, কোথাও ছোট দলে হাতে-কলমে শেখানো। সারা বিশ্ব থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকেরা আলোচনা করেন বিভিন্ন সেশনে। কারও ক্লাইমেট ইনভেস্টিগেশনে আগ্রহ, কারও পরিবেশ বিষয়ক অনুসন্ধানে আগ্রহ, কারও ফ্যাক্টচেকিংয়ে আগ্রহ, কারও যুদ্ধ বিষয়ক স্টোরিতে আগ্রহ, কারো বা আগ্রহ থাকতে পারে ন্যাচারাল রিসোর্স অথবা অপরাধ বিষয়ক অনুসন্ধানে। সকলের জন্যই সাজানো ছিল সেশন। ন্যাচারাল ডিজাস্টার ইস্যুতে আলোচনা থেকে শিখেছি অনুসন্ধানের টুলস অ্যান্ড টেকনিক। অনেকগুলো কক্ষে একই সাথে সেশন। কোনটি বড় পরিসরে, কোনটি ছোট পরিসরে আলোচনা। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী অথবা পছন্দ অনুযায়ী এসব সেশনে অংশ নিতে পেরেছেন। এসভেনসকা ম্যাশান-এর কংগ্রেস হলে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের ওয়েলকাম অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেখানেও ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সেশন। সেখানে ডিজিটাল সাবভারশনের যুগে ওয়াচডগ সাংবাদিকতা বিষয়ে মূল বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন রন ডেইবার্ট এবং শেইলা করোনেল।
সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু গ্লোবাল ইসভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স ভেন্যুতে ফোজো মিডিয়া ইনস্টিটিউটের স্টলে
পুলিৎজার সেন্টারের দুর্দান্ত সব অনুসন্ধানী স্টোরি তৈরির কলাকৌশল শেয়ার করেছিলেন কনফারেন্সে। একদিন বড় পরিসরে আলোচনা করেছেন। কিন্তু শেষদিন সকালে ওপেন সোর্স এবং মানচিত্র ব্যবহারের কৌশল হাতেকলমে শিখিয়েছেন ছোটদলে; সেখানে মাত্র ২৫জন অংশগ্রহণকারীর বসার ব্যবস্থা ছিল। প্রিয় অনেক অনুসন্ধানী সাংবাদিক অথবা দুনিয়ার বড় বড় মিডিয়া প্ল্যাটফরমের এডিটর, যাদেরকে আগে থেকে চিনতাম তাদের কাজের মাধ্যমে, তাদের আলাপ শুনে নিজেকে অনেক সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। যুদ্ধাপরাধের তদন্ত নিয়ে আলোচনা ছিল। উদ্ভাবনী উপায়ে তদন্ত উপস্থাপন করার বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে বুঝিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। নাগরিক তদন্তকারীদের সাথে কিভাবে সাংবাদিকেরা কাজ করতে পারেন, তার আলোচনা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকেরা রয়েছেন ঝুঁকিতে। সাংবাদিকদের ডিজিটাল সিকিউরিটি, ফিজিক্যাল সিকিউরিটি নিয়ে ছিল বেশ কয়েকটি সেশন। ডিজিটাল হুমকি বিষয়ে একটি সাইবার ইনভেস্টিগেশন টুলকিট সেশন ছিল কনফারেন্সে।
এখন বিশ্বজুড়ে ডেটা-চালিত সাংবাদিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কনফারেন্সে একটি সেশনজুড়ে সাম্প্রতিক ডেটা চালিত গল্পগুলির একটি পর্যালোচনা ছিল। গণতন্ত্র বাঁচাতে সাংবাদিকেরা কিভাবে তদন্ত করবেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইনভেস্টিগেটিং আদিবাসী গল্প বিষয়ে ছিল একটি গোলটেবিল আলোচনা। আদিবাসী সাংবাদিকতা নিয়ে ছিল আরো একাধিক সেশন। এই কনফারেন্সে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলের সাংবাদিকদের নেটওয়ার্কিং সেশন ছিল অনেকগুলো। এই সেশনগুলোকে সহকর্মীরা তাদের ধারণা, চিন্তাভাবনা বিনিময় করতে পেরেছেন। নিজের ইনোভেটিভ কাজ বিষয়ে অন্যদের জানাতে পেরেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার নেটওয়ার্কিং সেশনে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং অন্যান্য দেশের সাংবাদিকেরা অংশ নিয়েছিলেন।
নতুন যোগ জলবায়ু ইস্যু গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে এবারই প্রথমবারের মতো যোগ হয়েছে জলবায়ু ইনভেস্টিগেশন ইস্যু। গোটা বিশ্বের জন্য সময়োপযোগী এই ইস্যুটিতে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপক আগ্রহ ছিল। ‘জলবায়ু পরিবর্তন সাংবাদিকতার জন্য অনুসন্ধানী এজেন্ডা’ বিষয়ে প্রি-কনফারেন্স কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় ১৯ সেপ্টেম্বর। এই সেশনে আমার একটি আলোচনা ছিল বাংলাদেশের উপকূল নিয়ে। বাংলাদেশের উপকূলে জলবায়ু প্রভাব নিয়ে কথা বলেছিলাম আমি এবং চট্টগ্রামের সাংবাদিক সামসুদ্দিন ইলিয়াস যৌথভাবে। এই সেশনে দিনব্যাপী আলোচনা হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে।
বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার সাংবাদিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়ে রিপোর্ট করছেন এবং তদন্ত করছেন। এই কাজটিকে আরও এগিয়ে নিতে একাধিক রিপোর্টিং নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ধারনা, কৌশল এবং কৌশল ভাগাভাগি করা এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক এই সময়ে অনুসন্ধানী এজেন্ডা বিস্তৃত এবং বৈচিত্র্যময়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞান ভালভাবে বোঝা যায়, এবং ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। সমস্যাটি এখনও ক্রমবর্ধমান হচ্ছে-গ্রহের জন্য ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ পরিণতিসহ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে রিপোর্ট করাও গুরুত্বপূর্ণ এবং এখানেও জবাবদিহিতার বিষয়গুলো বড় আকার ধারণ করে। পরিকল্পনার অভাব, নিয়ন্ত্রক ব্যর্থতা, স্বার্থ, দুর্বল জরুরি প্রতিক্রিয়া, এবং বিজ্ঞানের প্রতি অবহেলা সবই কার্যকর হয়। দুর্বল সম্প্রদায় যারা নির্গমনে সামান্য অবদান রেখেছে, তারা এর প্রভাবের ধাক্কা বহন করে। প্রশমন এবং অভিযোজনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে কিনা তা দেখার বিষয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য শীর্ষ অগ্রাধিকারের উপর দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করা ছিল এই সেশনের মূল লক্ষ্য। আলোচনা হয়েছে বৃহত্তর প্রভাবের জন্য, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের মধ্যে কীভাবে আরও সহযোগিতার সুবিধা দেওয়া যায় তা নিয়ে। জলবায়ু বিষয়ক অনুসন্ধানমূলক সাংবাদিকতাকে সমর্থন করার জন্য তহবিলের সুযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা হয়েছে সরকার এবং কর্পোরেশনগুলিকে দায়বদ্ধ করে কীভাবে গভীরভাবে সাংবাদিকতা করা যায়, তা বিবেচনা করা নিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের মূল বিষয়গুলিতে সর্বশেষ অনুসন্ধানমূলক পদ্ধতি এবং কৌশলগুলি অন্বেষণ করা হয় এই সেশনে। প্রি-কনফারেন্স কর্মশালা ছাড়াও আরো একাধিক সেশন ছিল জলবায়ু ইস্যুতে।
‘পদবি’ নয়, ‘কাজই’ গুরুত্বপূর্ণ কনফারেন্সের গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল-পদ নয়, কাজগুলোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কাজের মাধ্যমে যারা আমাদের কাছে পরিচিত ছিল, তারা তাদের সেইসব আলোচিত কাজ নিয়ে কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন। যেখান থেকে শেখার ছিল অনেক কিছু। বৈচিত্র্যময় সব ইনভেস্টিগেটিভ আইডিয়া শেয়ার করেছেন বিশ্বের সব নামী সাংবাদিকেরা। অনেক সাংবাদিক পুলিৎজার কিংবা জার্নালিজম ফান্ড-এর সহায়তা নিয়ে হয়ত একটি বড় অনুসন্ধান করেছেন। পৃথিবীর কোন এক কোনে হয়ত নিরবে সমৃদ্ধ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চা করে যাচ্ছে। সেই গল্পগুলো, সেইসব সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে সবার সামনে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশই হয়তো এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় যেখানে এখনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নিয়ে আমরা মাতামাতি করি, পৃথিবী জুড়ে সেখানে এখন ভালো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চর্চা হচ্ছে। বাংলাদেশে এখনো ’পদবি’ না থাকলে সাংবাদিকতা পরিচয়টা পূর্ণতা পায় না। কিন্তু পৃথিবী জুড়ে ইনডিপেনডেন্ট জার্নালিস্ট বা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের প্রভাব অনেক বেশি। কনফারেন্সে এমন অনেক প্রভাবশালী সাংবাদিকের সাথে পরিচয়ের সুযোগ হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে ইনডিপেনডেন্ট সাংবাদিকতার গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে কনফারেন্সে একটি সেশন রাখা হয়েছিল। ‘ফ্রিল্যান্সিং বেঁচে থাকার টিপস’ শিরোনামের এই সেশনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ছিল ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের জন্য। স্টোরি পিচ করার কলাকৌশল, নিউজরুমের সাথে যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকেরা। ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতায় বিশ্বজুড়ে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে, যা এখনো অনেকের অজানা। সাংবাদিকতার যে ধারণাগুলো নিয়ে আমরা পৃথিবীর এক কোনে এই বাংলাদেশে বসে আছি, সেখান থেকে পৃথিবী অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ধারণা বদলে গেছে। ন্যায়নিষ্ঠতা এবং দক্ষতা দিয়ে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করেই টিকে থাকা যায়।
গ্লোবাল ইসভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের স্যুভেনীর
সুযোগ সমৃদ্ধ হওয়ার গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স সাংবাদিকদের সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ। শুধু সেশনের আলোচনা নয়, চায়ের টেবিল, ব্রেকফাস্ট কিংবা লাঞ্চের টেবিলে হয়েছিল আলোচনা, ধারণা বিনিময়। একে অপরের ধারণা জানতে পেরেছে। কাজের নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজে পেয়েছে। আপনি পৃথিবীর কোন এলাকায় সাংবাদিকতা করেন, কিংবা আপনি কোন মিডিয়ার জন্য কাজ করেন-অগ্রসর সাংবাদিকতায় সেটা এখন আর কোন বিষয় নয়। আপনার মূল্যায়ন হবে আপনার কাজ দিয়ে। এমন একটি বিষয়ে কাজ করা দরকার, যা জনগুরুত্বপূর্ণ, যার গ্লোবাল মূল্য আছে। সাংবাদিকতায় ব্যতিক্রমী কোন ধারণাটি আপনি যুক্ত করছেন- সেটা দেখার জন্যে বিশ্বের মিডিয়া তাকিয়ে আছে।