সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেছেন, এ আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী। এসব কালাকানুন ও স্বৈরশাসনের কারণে গণমাধ্যম এখন অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে।
সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দৈনিক দিনকাল, আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভিসহ বন্ধ থাকা গণমাধ্যম খুলে দেওয়া, সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বন্ধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব আইন বাতিলের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন সাংবাদিক নেতারা।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশ ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ এ সমাবেশের আয়োজন করে। ডিইউজে’র একাংশের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএফইউজে একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, বিএফইউজের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার, একেএম মহসিন, বাছির জামাল, রাশিদুল হক, শাহজান সাজু, আবু হানিফ, আল আমিন, সাখাওয়াত ইবনে মঈন চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিইউজে’র সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান।
সমাবেশে রুহুল আমিন গাজী বলেন, গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন করে, গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন কালাকানুন করে সংবাদকর্মী-মানবাধিকারকর্মী তথা নাগরিক সমাজের মত প্রকাশের অধিকারের ক্ষেত্রে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। তা গণতন্ত্রের অন্তরায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের ফলে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’ বেড়ে গেছে। এখন শুধু লেখা নয়, কথা বলতেও মানুষকে চিন্তা করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, কথায় কথায় সাংবাদিকরা হুমকি ও হত্যার শিকার হচ্ছেন। শত বছরের পুরনো ঔপনিবেশিক আইন ও তার ধারাবাহিকতায় নতুন আইন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে, বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে। জনমুখী উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে হলে আগে চাই গণতন্ত্র, বিশেষ করে বাকস্বাধীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। তাহলেই উন্নয়ন অর্থবহ হবে। গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অপরিহার্য।
বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র চর্চা করার পরিবেশও নেই। দেশ এখন একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি আইনের মাধ্যমে মানুষের বাকস্বাধীনতা, ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। একের পর কালাকানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। আদালত অবমাননা আইন, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, আইসিটি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণমাধ্যমকর্মী আইন, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ একের পর এক আইন করে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।
শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে গণমাধ্যমকর্মীদের শঙ্কা ও ভয়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই, তারা এখন সত্য তুলে ধরতে পারছেন না। তাদেরকে এখন সেলফ সেন্সরশিপ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের সমালোচনা করলে রোষানলের শিকারে পড়ে বন্ধ হচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
খুরশীদ আলম বলেন, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হলে এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হবে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।