অন্তর্ভুক্তিমূলক সাংবাদিকতা ও উন্নয়ন বিষয়ে সংযোগ, তথ্যের বিকাশ ও আন্তর্জাতিক সংযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশ ও গণমাধ্যমের উন্নয়নের জন্য যাত্রা শুরু করেছে ‘ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরাম’।
অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশর উদ্যোগে রবিবার (১২ জানুয়ারি) রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফোরামটির উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম, পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস, অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলেসহ দেশের শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী, উন্নয়নকর্মী ও শিক্ষাবিদরা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশর উন্নয়ন, গণমাধ্যম পরিস্থিতি এবং আগামীর বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “পরিবেশ, দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকতা মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের প্রশ্ন করতে হবে। উন্নয়নমূলক কাজ; বিশেষ করে প্রকল্পগুলো কতটা পরিবেশের নীতিমালা মেনে চলে, সেগুলো পরিবেশের ক্ষতি করছে কিনা, মানবাধিকারে প্রভাব ফেলছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে।”
ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরামের উদ্যোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা আশা করতে পারি, এই ফোরামের মাধ্যমে আমাদের সাংবাদিকতায় গতি আসবে। সেজন্য আমাদের আরও মিডিয়া প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা প্রয়োজন। আমি আশা করি ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরাম এগুলো নিয়ে কাজ করবে।”
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, “ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হতে পারে যে, ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজমকে একটি নিউ স্টার্ট এর জায়গায় নিয়ে যাওয়া। ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং জনগোষ্ঠীকে জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও মানুষের কাজগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নয়নের বিষয়গুলোকে স্থান দেওয়া। এগুলো করতে পারলে, সেটি ফোরামের একটি বিরাট সাফল্য হবে। আমি আশাবাদী যে অক্সফ্যামের মাধ্যমে এই ফোরামটি বাংলাদেশের উন্নয়ন সাংবাদিকতার কাজকে আরো প্রসারিত করতে পারবে, তাদের দৃষ্টিকে আরও সচ্ছল করে তুলতে সাহায্য করবে।”
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস। তিনি জাতীয় উন্নয়নের পথে অন্তর্ভুক্তিমূলক সাংবাদিকতার ওপর জোর দেন এবং ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরামের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কাজের ক্ষেত্র তৈরিসহ সার্বিক গণমাধ্যম নিয়ে কাজ করার পথে সুইডেন পাশে থাকবে বলে জানান। বলেন, ‘সুইডেন বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে ছিল এবং থাকবে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে, ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরামের মত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে জলবায়ূ পরিবর্তনসহ নানা সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
অক্সফ্যামের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে বলেন, “বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থার পাশাপাশি "সংবাদ যুদ্ধ"—এর মতো ঘটনা ঘটছে। আমাদের গণমাধ্যমের ঐতিহাসিকতা পুরো পৃথিবীর উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত। আমরা বলি, তথ্যই সব; তথ্যই শক্তিশালী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রযুক্তিগত, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হয়েছে সাংবাদিকতা। যা ক্রমশও তীব্রতর হয়েছে। ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া ফোরাম যে উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের অংশ হতে পারে এগুলো।”
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন সফর: গণমাধ্যমের ভূমিকা ও ভবিষ্যত’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম।
উপস্থাপনায় সার্বিকভাবে সাংবাদিকতা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা উঠে আসে। যেখানে আলোচকরাও পাশাপাশি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন সাংবাদিকরা। আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন চ্যানেল-২৪ এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর তালাত মামুন, ঢাকা ট্রিবিউনের এক্সিকিউটিভ এডিটর রিয়াজ আহমেদ, ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ ও জার্নালিজম বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সুমন রহমান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের লন্ডন প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর মুবিন এস খান এবং একশন কন্ট্রে লা ফেইম (এসিএফ) এর কান্ট্রি ডিরেক্টর, মোহাম্মদ আকমল শরীফ।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কমিউনিকেশন-অ্যাডভোকেসি প্রধান শরিফুল ইসলাম।