ডাবল ডিস্ক বাইকগুলোর বেলায় অনেকে অভিযোগ করেন, ‘ভাই, সার্ভিস বা চেইন অ্যাডজাস্টের করার পর হঠাৎ মাইলেজ কমে গেছে। সাথে বাইক জ্যাম জ্যাম লাগে। পিছের চাকা জ্যাম জ্যাম ভাবে ঘুরে।’ তবে শুধু যে ডাবল ডিস্ক বাইকেই জ্যাম হয় তা না; সিংগেল ডিস্ক বাইকেও জ্যাম হয়।
আজকে আলোচনা করব সঠিকভাবে চেইন অ্যাডজাস্ট না করলে চাকা কেন জ্যাম হয়ে যায়, বিশেষ করে ডাবল ডিস্ক বাইকগুলোতে।
জ্যাম হওয়ার কারণ
বাইকের পিছনের চাকা একটা লম্বা এক্সেল রডের উপর থাকে। এক্সেল রড ব্যাক চেসিসের দুই পাশে দুটি নাট দিয়ে সংযুক্ত থাকে। চেসিসে চাকা সামান্য সামনে বা পিছে নেওয়ার সুযোগ থাকে এটি দিয়ে। বাইকের চেইন অ্যাডজাস্ট করা হয় সামনে বা পিছে চাকার মাধ্যমে। এক্সেলের এক পাশের নাট চেসিসে যেই অবস্থানে থাকে,অপর পাশ যদি একই অবস্থানে যদি না থাকে তাহলে চাকা চেসিসের সাপেক্ষে কি বাঁকা হয়ে যাবে না?
হ্যা,বাঁকা হয়ে যাবে, যা সরল চোখের বোঝা যায় না। এই বাঁকা হয়ে যাওয়ার কারণে চাকার ডিস্ক প্লেট ক্যালিপারের সঙ্গে লেগে যায়। এতে চাকা ঘোরার সময় ক্যালিপারে ঘষা খায়,তাই চাকা মুক্তভাবে ঘুরতে পারে না। যেহেতু মুক্তভাবে ঘুরতে পারে না, তাই এটি ভয়াবহভাবে বাইকের মাইলেজ কমিয়ে দেয়।
এছাড়া চাকার অ্যালাইনমেন্ট বাঁকা হলে চেইন স্প্রোকেটও চেইনের ঘূর্ণন সাপেক্ষে বাঁকা হয়ে যায় এবং চেইন ঠিক মত ঘুরতে পারে না। এ কারণে সিঙ্গেল ডিস্ক বাইকেও চাকার অ্যালাইনমেন্ট ঠিক না থাকলে চাকা জ্যাম হয়ে যাবে এবং ওই সময় চেইন থেকে এক ধরনের গড়গড় শব্দ হয়।
এর সমাধান খুবই সাধারণ। আজেবাজে মেকানিক বা নতুন কারো হাতে চেইন অ্যাডজাস্ট করবেন না। চেইন অ্যাডজাস্ট খুবই স্পর্শকাতর বিষয়।
চেইন স্ল্যাক সবসময় দুই ইঞ্চি রাখবেন। এরপর পরীক্ষা করে দেখবেন চাকার অ্যালাইনমেন্ট ঠিক আছে কিনা, মানে চাকাটা সোজা আছে কিনা।
এটা চিনার উপায় দুই উপায়-
১. এক্সেল নাট যেখানে লাগানো থাকে সেখানে চ্যাসিসে কিছু দাগ থাকে। এক্সেলের উভয়পাশে দাগ গুণে দেখবেন নাটটি উভয় পাশে সমান দাগে অবস্থিত কিনা। ধরুন, চেসিসের বাম পাশে ৪ নাম্বার দাগে এক্সেলটি আছে। তাহলে চেসিসের ডান পাশেও ৪ নাম্বার দাগে এক্সেলটি বসতে হবে।
২. যে নাটের ওপর থাকা স্ক্রু টাইট বা লুজ করে চেইন অ্যাডজাস্ট করা হয়, সেই স্ক্রুর দৈর্ঘ্য মাপবেন স্কেল বা কোনো কাঠি দিয়ে। উভয় স্ক্রু দৈর্ঘ্য যাতে শতভাগ একই হয় সেটি লক্ষ্য রাখবেন। কোনোভাবেই যেন এক মিলিমিটার এদিক-ওদিক না হয়। অর্থাৎ, চেসিসের বাম পাশের স্ক্রুর দৈঘ্য ৪ সেন্টিমিটার। তাহলে চেসিসের ডান পাশের স্ক্রুর দৈর্ঘ্যও ৪ সেন্টিমিটার হতে হবে। দৈর্ঘ্য একই মানে চাকা সোজা আছে, অ্যালাইনমেন্ট ঠিক আছে।
চেইন স্ল্যাক
আপনি চেইন কতটুকু টাইট বা লুজ রাখবেন তা চেইন স্ল্যাক দিয়ে নির্ধারন করে বাইক উৎপাদনকারী। চেইনের নিচে মাঝ বরাবর আঙ্গুল দিয়ে টেনে যদ্দুর নিচে নামে সেই অবস্থান থেকে চেইন টেনে যদ্দুর ওপরে তোলা যায়, তার ব্যবধানকে চেইন স্ল্যাক বলে। এ ব্যাপারে বাইকের ম্যানুয়ালে ছবি দেওয়া আছে। সবারই তা দেখে নেওয়া উচিত। অভিজ্ঞজনরা সাধারণত চেইন স্ল্যাক ২ ইঞ্চি রাখার পরামর্শ দেন।
চেইন অ্যডজাস্টের পর বাইকে বসবেন। বসার পর চেইন যাতে টাইট না থাকে তা নিশ্চিত হতে হবে।আদর্শ অবস্থা হলো, বসার পর চেইন সামান্য রিলেক্স অর্থাৎ ছাড়া থাকবে। আরও বিশদভাবে বলতে গেলে, চেইন টাইটও হবে না লুজও হবে না।
চেইনের যত্ন
অবশ্যই চেইনে মাসে তিন বার ১৪০ বা ৯০ গ্রেডের গিয়ার অয়েল দিয়ে লুব করবেন আর মাসে এক বার কেরোসিন আর ব্রাশ দিয়ে ক্লিন করে লুব করবেন। কেরোসিন সব ধরনের চেইনের জন্য নিরাপদ ক্লিনার,সেটা ও-রিং চেইন হোক আর নন- ও রিং চেইন হোক। ভুলেও ও-রিং চেইন পেট্রল বা অকটেন দিয়ে পরিষ্কার করা যাবে না।
সতর্কতা
ডাবল ডিস্ক বাইকের পিছনে ডিস্কের রিজার্ভারে ব্রেক ফ্লুইড সব সময় উচ্চ ও নিম্নমাত্রার মাঝামাঝি রাখবেন। ফুল লেভেল বা উচ্চমাত্রায় না রাখাই ভাল। সামনের ডিস্কের রিজার্ভারে কখনো মাত্রাতিরিক্ত ব্রেক ফ্লুইড দিবেন না। এতে চাকা হাল্কা জ্যাম হয়ে যেতে পারে। আজ এই পর্যন্তই।
লেখক
টেকনিক্যল ডিরেক্টর ফ্রি হুইইলার্স ক্লাব বাংলাদেশ(এফসিবি)