মটো কর্নার

TVS NTORQ: ১৫ হাজার কিলোমিটার চালানোর অভিজ্ঞতা

TVS NTORQ ১৫ হাজার কিলোমিটার চালানোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন রাজেশ কুমার।

ছোটবেলা থেকেই কল্পনার জগতে  টু হুইলারের সঙ্গে আমার বসবাস। বাবার কয়েকজন বন্ধুর ভেসপা চালানো আমাকে খুব আকৃষ্ট করতো। কর্মজীবনে এসে যখন নিজের জন্য একটি টু হুইলার নেওয়া ভীষণ প্রয়োজন হয়ে পড়লো, তখন স্কুটারকেই বেছে নিলাম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে - স্কুটার ওজনে হালকা, অটো গিয়ার এবং নিয়ন্ত্রণ সহজ। 

বর্তমানে বাজারে থাকা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্কুটারগুলো চমৎকার ডিজাইনের। আমি মনে করি, প্রতিটি ব্র্যান্ডের স্কুটারেরই গুণগত মান ভীষণ ভাল। তবে স্কুটারের কর্মক্ষমতা নির্ভর করে এর যথাযথ ব্যবহার এবং নিয়মমাফিক যত্নের ওপর।

TVS NTORQ স্কুটারটি আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল। বন্ধু জাকির হোসেন আমার এই পছন্দকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছিল। ২০২২ সালের এপ্রিল মাস থেকে এই স্কুটারের সাথে আমার যাত্রা শুরু। ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি নিয়ে আমি ১৫ হাজার ১২০ কিলোমিটার পথ চলেছি।

স্কুটারটি কেনার পর থেকে আমি নিয়ম মেনে চলেছি। ব্রেক ইন পিরিয়ড যথাযথভাবে মেনেছি। যখন যেটা দরকার পড়েছে, তৎক্ষণাৎ তাই করেছি। গাড়িটি কেনার পর থেকে আজ পর্যন্ত অসন্তুষ্ট হওয়ার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি। Air filter পরিবর্তন করেছি দরকার অনুযায়ী। ১০ হাজার কিলোমিটার চলার পরে একবার ব্যাটারি, ব্রেক প্যাড এবং ব্রেক সু পরিবর্তন করেছিলাম। নিয়ম অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি। যখনই ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি তখনই ড্যাশবোর্ডে ট্রিপ জিরো করে দিই। কোম্পানি যে ইঞ্জিন অয়েলটির সুপারিশ অনুযায়ী, আমি NTORQ এর জন্য SCUTTA 4 ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি। 

মাইলেজ নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মন্তব্য করে থাকেন। এক সময় আমার বাসা ছিল উত্তরা এবং অফিস ছিল বনানীতে। রাস্তায় তেমন যানজটও থাকতো না। তখন আমি মাইলেজ পেতাম ৪০ থেকে ৪২ কিলোমিটার। বর্তমানে আমি থাকি ধানমন্ডিতে এবং অফিস বনানীতেই রয়ে গেছে। প্রতিদিন ৯ টা সিগনাল পার হয়ে অফিসে যেতে হয়। বর্তমানে আমি মাইলেজ পাচ্ছি ৩২ থেকে ৩৩ কিলোমিটার। কিছুদিন যাবত TVS তাদের স্কুটারগুলোতে নতুন জেট পিন ফ্রিতে সংযোজন করে দিচ্ছে। আমিও NTORQ -এ জেট পিন লাগিয়েছি। মনে হচ্ছে উপকার পাওয়া শুরু করেছি। তারপরও  - Too early to comment..

তবে আমি স্কুটারটির হেডলাইট নিয়ে একটুও সন্তুষ্ট নই। অন্যান্য ব্র্যান্ডের স্কুটারের হেডলাইটের আলোও আমার কাছে পর্যাপ্ত মনে হয় না। এ ব্যাপারে কোম্পানিগুলোর মনোযোগ দেওয়া উচিত।

আমি প্রতিমাসেই নিয়মমাফিক আমার স্কুটারের সার্ভিস করাই। শুরুর দিকে উত্তরা TVS সার্ভিস সেন্টারে যেতাম। কিন্তু তাদের অপেশাদারী আচরণ ছিল খুবই বিরক্তিকর। পরবর্তীতে যাওয়া শুরু করি মিরপুর ৬০ ফিট-এ। তাদের পেশাদারী আচরণ এবং কাজের একনিষ্ঠতা আমাকে মুগ্ধ করে। আমি তেজগাঁও এবং বাংলামোটরে টিভিএসের সার্ভিস সেন্টারেও গিয়েছি। তাদের পেশাদারী আচরণ এবং কাজের দক্ষতা প্রশংসনীয়। 

স্কুটারটির সাথে আমার  ভীষণ ভাব হয়ে গেছে। দুজনের মাঝে বোঝাপড়া এতটাই ভালো যে, মাঝে মধ্যে মনে হয় সে আমার মনের কথা বোঝে। কখনো অজান্তে কোন ছোটখাট গর্তে পড়লে মনে হয় যেন স্কুটারটি আমার উপর রাগ করেছে। আসলে এটা  গাড়িটার প্রতি ভালোবাসার এক ধরনের অনুভূতি। 

সবশেষে আবেগপূর্ণ দুটি কথা বলি-  আমরা যারা রাস্তাঘাটে যানবাহন ব্যবহার করি, তাদের সবারই পরিবার আছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষায় থাকে তাদের প্রিয়জন কখন নিরাপদে ফিরে আসবে। তা-ই ভালোবাসার মানুষটির কাছে নিরাপদে ফিরতে, নিয়ম মেনে গাড়ি চালান। আমরা সবাই যদি একে অপরকে সম্মান করে শৃঙ্খলার সঙ্গে গাড়ি চালাই, তাহলে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করতে পারি।

বাইকারদের জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।