ঢাকা,০৭ জানুয়ারি (রাইজিংবিডি টোয়েন্টিফোর ডটকম) : সাত দফা দাবিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের শ্রমিক-কর্মচারীদের দিনব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টায় তাদের এই কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত কর্মচারীদের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলবে। আগামী মঙ্গলবার থেকে লাগাতার সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
শ্রমিক-কর্মচারীরা রোববার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেক আহমেদকে প্রায় ১২ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। সোমবার দিবাগত রাত প্রায় ২টার দিকে মোসাদ্দেক আহমেদ আন্দোলনকারীদের কোনো দাবি না মেনে পুলিশ পাহারায় বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকা ত্যাগ করেন। বিমান শ্রমিক লীগের সভাপতি মশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা দু’টি বিভাগীয় মামলা প্রত্যাহার, এয়ারলাইন্সের অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়নসহ ৮ দফা দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীরা মোসাদ্দেক আহমেদকে এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় বলাকায় অবরুদ্ধ করে রাখে। মূলত গত বছরের মার্চে বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের জের ধরে রোববার নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনস। রোববার দুপুরে সামান্য সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারী বিমানের এমডির কাছে দাবি-দাওয়া নিয়ে গেলেও রাত সাড়ে ৯টা থেকে নতুন করে কয়েকশ’ শ্রমিক কর্মচারী এই আন্দোলনে যোগ দেয়। এ সময় কয়েকশ’ শ্রমিক-কর্মচারী এমডির কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে তাদের দাবি আদায়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। ক্ষুব্ধ শ্রমিক কর্মচারীরা বাংলানিউজকে বলেন, “এর আগে অনেকবার আশ্বাস দিয়েও কোনো দাবিই মানেনি বিমান কর্তৃপক্ষ। তাই এবার আর কোনো আশ্বাসে তারা বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। আর এজন্যই এবার কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছেন তারা। রোববার দুপুরে বিমান কর্মচারীরা যখন আন্দোলন শুরু করে তখন সংস্থার চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ অফিসে ছিলেন না। এমডিকে অবরোধ করে রাখার সময় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিমান কর্মচারীদের দেন-দরবার চলে। এক পর্যায়ে দু’পক্ষ সমঝোতায় পৌছানোর পর্যায়ে চলে আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেক আহমেদ তার অবস্থানে অনড় থাকায় সব উদ্যোগ ভেস্তে যায়। কর্মচারীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে; শতভাগ মেডিকেল ভাতা প্রদান, বিমানের ইউনিফর্মের টাকা সংস্থা থেকে প্রদান, খাদ্য ভাতা ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করা, ৫ বছরের বেশি যেসব কর্মী ক্যাজুয়াল হিসেবে কাজ করছেন তাদের চাকরি স্থায়ী করা। বাঁচাও ঐক্য পরিষদ গত বছরের ৫ মার্চ থেকে বিমান এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। মার্চ মাস জুড়েই তারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি, কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ঐক্য পরিষদ নেতারা সর্বাত্মক ধর্মঘটের ডাক দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিমান মন্ত্রী ফারুক খান পরিষদ নেতাদের ডেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা ধর্মঘট স্থগিত করে। আন্দোলন প্রত্যাহারের পরপরই বিমান শ্রমিক লীগের সভাপতি মশিকুর রহমানকে প্রথমে শোকজ করা হয়। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মশিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিমান বাঁচাও ঐক্য পরিষদ রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদের অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। বিমান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমন করতেই মশিকুর রহমানকে চাকরিচ্যুৎ করতেই এসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।