বাসের ছাদ ফুটো, ইঞ্জিন আধা নষ্ট, জানালার গ্লাস ভাঙা, সিট ভাঙা এভাবেই কয়েক বছরে ধরে রাজধানীর সাইনবোর্ড-গুলিস্তান রুটে চলছে লক্কর-ঝক্কর তারাবো, শ্রাবণ, কোমলসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাস। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এ রুটের যাত্রীরা।
রোববার অত্র এলাকা ঘুরে এরকম নানা চিত্র দেখা গেছে।
প্রতিদিন নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লাসহ চিটাগাং রোড, সাইনবোর্ড, রায়েরবাগ, শনির আখড়া, কাজলা এলাকার হাজার হাজার মানুষ গুলিস্তান এসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অফিসসহ নানা কাজে যান। বিকেলে/সন্ধ্যায় কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে বাসে ওঠেন তারা।
যাত্রীদের অভিযোগ ইঞ্জিন খারাপ থাকায় পথে ২-৩ বার বিকল হয়ে যায় বাস। ফলে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে ও ফিরতে পারছেন না তারা। আবার বাসের ছাদ ফুটো ও জানালার গ্লাস ভাঙ্গা থাকায় একটু বৃষ্টি হলে ভিজে কর্মক্ষেত্রে ও বাসায় ফিরতে হয় তাদের।
সাইনবোর্ড থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে গুলিস্তান যেতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগে। কিন্তু সারা রাস্তায় বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো হয়। সিটে যাত্রী বসার পর বাসের মাঝখানে ফাঁকা জায়গার দুই দিকে যাত্রী ওঠানো হয়। যাত্রীতে পুরো বাস ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি ছাড়ে না। আবার একই পরিবহণের বাস একটার আগে অন্যটা যেতে না পারে সেজন্য রাস্তায় এমনভাবে বাস রেখে দাঁড়ায় যে পেছনের বাস যেতে না পারে। আবার কে কার আগে যাবে তার প্রতিযোগিতা চলে। এতে করে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটে।
আবার বৃষ্টি কিংবা রাজনৈতিক সভা হলে লোকাল বাস হয়ে যায় সিটিং। যাত্রীদের জিম্মি করে দ্বিগুণ বাস ভাড়া আদায় করা হয়।
ঘটনাস্থল সাইনবোর্ড : রোববার সকাল ১০টায় এখান থেকে যাত্রী নিয়ে গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা হয় একটি বাস। রায়েরবাগ বাস স্ট্যান্ডে আসার পর সামনের চাকা পাংচার হয়ে যায়। চালক ডিভাইডারের সাথে ঠেকিয়ে দিলে যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে নেমে যান। এরকম ঘটনা নিত্যদিনের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারাবো বাসের একজন স্টাফ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে সাইনবোর্ড-গুলিস্তান রুটে চলা বাসের বেহালদশা। ফলে পথে চলতে আমরা যেমন কষ্ট করি, তেমনি বিড়ম্বনায় পড়েন যাত্রীরাও। বাসের মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় যাত্রীরা জিম্মি। ভয়ে কোন কথা বলতে পারেন না যাত্রীরা।’
এরুটে চলাচলরত কয়েকটি বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাসেরই বেশিরভাগ জানালায় গ্লাস নেই। যেগুলোতে আছে, সেগুলোও ভাঙা-চোরা, বেঁধে রাখা হয়েছে দড়ি দিয়ে।
এম এ রহিম নামের এক যাত্রীর সাথে এবিষয়ে রাইজিংবিডির কথা হয়। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘১০ বছর রায়েরবাগ ভাড়া থাকি। প্রতিদিনই কাকরাইল গিয়ে অফিস করি। পথে প্রায়ই চাকা পাংচার হয়। চলন্ত অবস্থায় বাসের ইঞ্জিন বিকল হয়। বাসের সিট ভাঙা থাকায় পা মুড়িয়ে সিটে বসতে হয়। বৃষ্টি হলে বাসের মধ্যে ভিজতে হয়।’
শ্রাবণ নামের একটি বাসে আসা যাত্রী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সাইনবোর্ড থেকে বাস ছাড়ার পর দেখি চলন্ত অবস্থায় সিট নড়ছে। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। হেলপারকে বলায় তার মন্তব্য ছিলো-আমরা কি করবো? বাসের মালিক যে গাড়ি দেবে সে গাড়িতেই আমাদের ডিউটি করতে হবে।’
তারাবো বাস মালিক সমিতির সদস্য আব্দুর রহমান সব অভিযোগ অস্বীকার করে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘তারাবো পরিবহনের যে বাসগুলো চলছে সেগুলো খুবই ভালো। আর এসব অভিযোগ আমাদের কোনো স্টাফ দেয়নি।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি ট্রাফিক) উপ-পরিদশর্ক মোহাম্মদ আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গুলিস্তান- সাইনবোর্ড রুটের অধিকাংশ বাসের অবস্থা খারাপ। কোন বাসের জানালা নেই, কোনটা চলতি পথে নষ্ট হচ্ছে। আবার চাকা পাংচার হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। এদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়াসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ ঢাকা/আসাদ/জেনিস