জাতীয়

লিটলম‌্যাগ চত্বর নিয়ে ফুঁসছেন সম্পাদকরা

বইমেলায় প্রতিবছরই শিল্প-সাহিত‌্য-সংস্কৃতির ছোটকাগজের জন‌্য বরাদ্দ থাকে লিটলম‌্যাগ চত্বর। এবারও এর ব‌্যতিক্রম হয়নি। তবে, ২০২০ সালে যেখানে লিটলম‌্যাগ চত্বর ছিল, এবার সেই জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সেখানে দেওয়া হয়েছে খাবারের দোকান। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছোটকাগজ সম্পাদকরা। তারা বলছেন, গত বছর লিটলম্যাগের সম্পাদকরা সর্বসম্মতিক্রমে একটি স্থান নির্ধারণ করে দি‌য়ে‌ছি‌লেন। এবারও সেখানেই ‌লিটলম্যাগ চত্বর হ‌বে আশা ক‌রে‌ছি‌লেন সং‌শ্লিষ্টরা। কিন্তু বাংলা একাডেমি কারও সঙ্গে আলোচনা না করে স্থান পরিবর্তন করেছে। ফলে লিটলম‌্যাগ চত্বর কারও চোখে পড়ছে না। কেউ সেখানে যাচ্ছেও না। প্রতিবাদে তারা রোববার (২১ মার্চ) থেকে ছোটকাগজের স্টলগুলো বন্ধ রাখেন। তবে, বাংলা একাডেমি বলছে, দ্রুত খাবারের দোকান সরিয়ে লিটলম‌্যাগ চত্বর পুনঃস্থাপন করা হবে।

এই বিষ‌য়ে ‘লোক’ সম্পাদক ও কবি অনিকেত শামীম নিজের ফেসবুকের টাইমলাইনে লি‌খে‌ছেন, ‘প্রায় প্রত‌্যেক বন্দরেই একটি যৌনপল্লী থাকে। এবারের বইমেলায়ও সে রকম একটি পল্লী রাখা হয়েছে। যার নাম লিটলম্যাগ চত্বর। বইমেলা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এক কোণায় সেই পল্লীর অবস্থান। পুরো মেলা খুঁজেও সেই পল্লীর দেখা পাবেন না। অতি উৎসাহী বা খুব প্রয়োজন হলে আপনি সারা বইমেলা খুঁজে সেই পল্লীর খোঁজ পেতে পারেন। সেই পল্লীতে এসে দেখবেন মাছ বাজারের মতো অবস্থা।’

জানতে চাইলে রাইজিংবিডিকে অনিকেত শামীম বলেন, ‘প্রতিভাবান আর্কিটেক্ট এনামুল করিম নির্ঝর পুরো মেলার ডিজাইন করছেন কয়েকবছর ধরে। তার মতো শিল্পীর পক্ষে কিভাবে সম্ভব হলো লিটলম্যাগ চত্বরকে এরকম যৌনপল্লী বা মাছবাজারের মতো ডিজাইন করার?’ তিনি আরও বলেন, ‘সে কার‌ণে সা‌র্বিক দিক বি‌বেচনা ক‌রে, সবাই মি‌লে গতকাল (২০ মার্চ) রাত আটটায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, খাবা‌রের হো‌টেল তু‌লে দি‌য়ে লিটলম্যাগের স্থান গতবছরের জায়গায় পুনঃস্থাপন না হওয়া পর্যন্ত সবাই স্টল বন্ধ রাখবো।’

লিটলম‌্যাগ চত্বরের স্থান বরাদ্দের প্রতিবাদে স্টল বন্ধ রেখে ছোটকাগজ সম্পদকদের বৈঠক

‘লিটল ম্যাগাজিনের স্টলবিন্যাস ও স্থান নির্বাচন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন কবি, কথাসাহিত‌্যিক, প্রাবন্ধিক ও ‘দৃষ্টি’ সম্পাদক বীরেন মুখার্জী। তিনি বলেন, ‘নতুন লেখক তৈরিতে লিটল ম্যাগাজিনের অবদানের কথা সবাই জানেন। বাস্তবতা হলো, এই লিটল ম্যাগাজিন বরাবরই সাহিত্যের মধ্যস্বত্বভোগীদের গাত্রদাহের কারণ। এবারের বইমেলায়ও তার প্রমাণ মিলেছে। মেলা প্রাঙ্গণের এক কোণায় লিটল ম্যাগাজিনের জন্য স্থান বরাদ্দ হয়েছে মূল মেলাকে পেছনে রেখে। দূর থেকে মেলায় আগতরা জায়গাটি দেখতে পাবেন না। আবার দেখা গেলেও মনে হবে এটি কোনো ভাগাড়, ময়লা রাখার স্তূপ। পাশেই শৌচাগার। স্টলের পেছনে ঢেকে দেওয়া হয়নি বলে স্টলগুলো অরক্ষিত। স্বভাবতই এর পাশ দিয়ে চলাচলকারীরা বিক্রয়কর্মীদের পেছন থেকে দেখতে পাবেন। মার্চ মাসে ঝড়-বৃষ্টি স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে। স্টলগুলো এতটাই নড়বড়ে যে, একটু জোরালো বাতাসে ভেঙে পড়তে পারে। প্রশ্ন হলো, লিটল ম্যাগাজিনের প্রতি বাংলা একাডেমির এই বিমাতাসুলভ আচরণ কেন?’

উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্প‌র্কে জান‌তে চাইলে ‘দ্রষ্টব্য’ সম্পাদক কামরুল হুদা প‌থিক ব‌লেন, ‘গত বছ‌রের চে‌য়ে এবার মেলা সম্প্রসা‌রিত হ‌য়ে‌ছে। আর লিটলম্যাগ চত্বর হ‌য়ে‌ছে সংকু‌চিত। এর সুরাহা হওয়া দরকার।’

কর্তৃপ‌ক্ষের স‌ঙ্গে সম্পাদক‌দের বৈঠক চল‌ছে জানিয়ে ‘করাতক‌ল’-এর নির্বাহী সম্পাদক সা‌ফি সমুদ্র ব‌লেন,‘সিদ্ধান্ত যাই হোক, গতবা‌রের জায়গায় লিটলম্যাগ চত্বর না নিলে আমরা কেউ স্ট‌লে খুলবো না। এটাই ফাইনাল। এটাই একমাত্র দা‌বি আমা‌দের।’

‘ল্যাম্প‌পোস্ট’ সম্পাদক মণ্ডলীর একজন ফারহানা হক শামা। তিনি ব‌লেন, ‘আমা‌দের মূল মেলা থে‌কে বি‌চ্ছিন্ন ক‌রে দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। মেলায় ক্রমশ লিটলম্যাগ চত্বর তার বৈ‌শিষ্ট‌্য হারা‌চ্ছে। এটা‌কে চত্বর বলা যা‌বে না, এটা হ‌চ্ছে পল্লী। আমরা লিটলম্যাগ চত্বর চাই।’

লিটলম‌্যাগ চত্বরের স্থান বরাদ্দে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাংলা একা‌ডে‌মির উপ-পরিচালক কবি আমিনুর রহমান সুলতান। জানতে চাইলে তিনি ব‌লেন, ‘সম্পাদক‌দের স‌ঙ্গে আলোচনা হ‌য়ে‌ছে। তা‌দের চা‌হিদা ম‌তো যত দ্রুত সম্ভব, খাবা‌রের দোকান সরিয়ে দেওয়া হবে। সেখা‌নে লিটলম্যাগ চত্বর‌কে স্থানান্তর করা হ‌বে।’