জাতীয়

‘তামাকপণ্যের দাম বাড়ালে বাড়বে রাজস্ব, বাঁচবে জীবন’

সিগারেটসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের মাধ্যমে দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং আত্মা (অ‌্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স)। সংগঠন দুটির নেতারা বলছেন, তামাকপণ‌্যের দাম বাড়ানো হলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং তামাকের ব‌্যবহার কমার ফলে অনেকের জীবন বাঁচবে।

মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও দাম সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে প্রজ্ঞা ও আত্মা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংগঠন দুটির দাবি বাস্তবায়ন করা হলে ৩ লাখ ৯০ হাজার ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ হবে এবং সিগারেট থেকে সম্পূরক শুল্ক, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ এবং ভ্যাট বাবদ অতিরিক্ত ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘আসন্ন বাজেটে তামাকের দাম ও কর বাড়ানোর এই প্রস্তাব আমি সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করি। সরকারকে মানুষের কল্যাণের বিষয়টি দেখতে হবে। আমাদের সংবিধানেও তাই আছে। কিন্তু সরকার তামাক থেকে শুধু রাজস্ব আয়ের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়। অথচ, মানুষের ওপর এর অভিঘাত কী, সেটা মূল‌্যায়ন করে না।’

বাসসের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশ শ্রীলঙ্কার উদাহরণ কাজে লাগিয়ে আমরা তামাকের কর ও দাম বাড়াতে পারি। একে অপরের শিক্ষা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এর পাশাপাশি আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে তুলে ধরতে হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘তামাকের ওপর সুনির্দিষ্ট হারে কর বসাতে হবে। এতে সরকার লাভবান হবে।‘

আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার। সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত ছিলেন আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য নিম্নোক্ত দাবিগুলো তুলে ধরা হয়:

১। সব সিগারেট ব্র‌্যান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্য স্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক আরোপ করা, নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা, উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১০ টাকা নির্ধারণ করে ৭১.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক করা; এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে ৯১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

২। মধ্য মেয়াদে (২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬) সিগারেটের ব্র‌্যান্ডগুলোর মধ্যে দাম ও করহারের ব্যবধান কমিয়ে মূল্য স্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে নামিয়ে আনা।

৩। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এর ফলে উভয় ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫ শতাংশ।

৪।  প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এর ফলে জর্দা ও গুলের ওপর সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের হার হবে চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০ শতাংশ।

৫। সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।

সংগঠনের নেতারা জানান, তামাক কর ও দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১১ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘমেয়াদে ৩ লাখ ৯০ হাজার বর্তমান ধূমপায়ী ও ৪ লাখক্ষ তরুণের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। বিড়ি, জর্দা এবং গুলের মূল্য বৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করবে এবং এসব খাতে সরকারের রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।