রাত পৌনে ১টা। সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস এসে থামলো যাত্রবাড়ীর কাজলা পেট্রোলপাম্প এলাকায়। দ্রুত গাড়িটিতে উঠলেন সৈয়দ আলী নামে এক ব্যক্তি ও তার পরিবারের লোকজন। যাবেন নোয়াখালী। দায়িত্বরত দুই পুলিশ সদস্য এসে গাড়িটি আটকায়। জানতে চান, কোথায় যাবেন। গাড়ির চালক এসে মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে হাজির। বের করে দেখালেন রোগীর চিকিৎসা শেষে নোয়াখালী যাচ্ছেন। গাড়িটি ছেড়ে দিলো পুলিশ। নানা উপায়ে মধ্যরাতে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়। করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন। লোকজন যেন এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে না পারে সেজন্য বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণপরিবহন। তবুও মাইক্রোবাস, পিকআপ, মোটরসাইকেলে করে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে। তবে গুণতে হচ্ছে বেশি ভাড়া।
মো. রায়হান। সিলেট মাজারগেইটে বাসা। রাজধানীর উত্তরায় একটি ক্যাফেতে চাকরি করেন। থাকেন সেখানে। ক্যাফেটি এখন বন্ধ। থাকা, খাওয়ার অসুবিধার কারণে উত্তরা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। রাত ৮টার সময় উত্তরা থেকে রওনা দিয়ে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এসে পৌঁছান ১২টায়। সেখানে অপেক্ষা করছেন গাড়ির জন্য।
রায়হান বলেন, ‘১২ বছর ঢাকায় চাকরি করি। কখনো এমন অসুবিধার মধ্যে পড়িনি। গত বছর লকডাউনের আগেই বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। এবার যেতে পারিনি। মালিকও ক্যাফেটি বন্ধ করে দিয়েছেন। খাবারের অসুবিধা, থাকার ব্যবস্থা নেই। দুইদিন অনেক কষ্টে কাটিয়েছি। আর পারছি না। তাই বের হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। উত্তরা থেকে কাজলা আসতে ৫০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। আর সিলেট যেতে না জানি কত লাগে। কীভাবে যাবো তাই ভাবছি।’
মো. সুজন নামে এক যুবক জানান, ‘যাত্রাবাড়ীতে গ্যারেজে কাজ করি। লকডাউনে গ্যারেজ বন্ধ হয়ে গেছে। ভাবছিলাম ঈদের আগে লকডাউন তুলে দেবে। কিন্তু আরও বাড়ানো হয়েছে। এখানে থাকা খাওয়ারও সমস্যা। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। আবার কষ্টও হচ্ছে। তাই তো চারজন মিলে মাইক্রোবাস ভাড়া করেছি। নেত্রকোনা যাবো। ভাড়া নিচ্ছে ৮ হাজার টাকা। ৫০০ টাকার ভাড়া চারগুণ বেশি দিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। ঈদের সময় তো এমনিই যেতে হবে। তাই আগেই চলে যাচ্ছি।’
অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট পিকআপে করে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। মো. রহিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘বিল্ডিং এর কাজ করতাম। এখন কাজ নাই, ইনকাম নাই। ঢাকা বসে কী করবো। তাই তো পিকআপে করে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ যাচ্ছি। ভাড়া নিচ্ছে ২৫০ টাকা করে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেখছি কিছু কিছু মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছে। তাদের যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে এমন অজুহাত দেখায়, যে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকে না।’