জাতীয়

প্রিয়জনের মুখ শেষবারের মতো দেখার তীব্র আকুতি

আগুনে পুড়ে কঙ্কাল কিংবা হাড়গোড় আছে, নেই চেনার কোন উপায় নেই। তারপরও প্রিয় মানুষটিকে শেষবার দেখার দরদী আকুতি নিয়ে স্বজনেরা তাকিয়ে আছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গের দিকে, দিচ্ছেন নমুনা। শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে তাদের আহাজারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে।

তেমনই একজন দিপু মিয়া। তিনি বলছিলেন, ‘ ঘটনার দিন ভবনের ৪ তলায় আমার ভাই মোহাম্মদ আলী  সিনিয়র অপরাটের (চকলেট শাখায়) কাজ করছিলেন। তবে আগুনের ঘটনার পর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছে। কারখানা এমনকি ঢামেক হাসপাতালে গত দুদিন ধরে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। অন্ততপক্ষে আমার ভাইয়ের লাশটা এনে দেন ভাই, শেষ দেখা দেখি।’

বোনের খোঁজে আসা শিরিন আক্তার নামের আরেকজন জানালেন, আমার ‘ছোট বোন রোজিনা আক্তার কারখানার ৫ম তলায় কাজ করতো। কিন্তু আগুন লাগার পর তার মোবাইলও বন্ধ পাচ্ছি। জানি না সে বেঁচে আছে কিনা? বোনের সন্ধানে এসেছি। লাশটা তো অন্তত পাবো?’

রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় শিরিন আক্তারের বাসা।

শুধু এ দু’জন নয়, কোন বাবা, মা, ভাই বোনসহ অনেক স্বজনকে এদিন ঢামেক হাসপাতাল এলাকায় অপেক্ষা থাকতে দেখা যায়। সেই অপেক্ষার নাম বুকভাঙ্গা কষ্ট! কারো কারো হাতে নিখোঁজ বা নিহত হওয়াদের ছবি থাকলেও অনেকেরই কাছে তা ছিল না। তবে তারা সবাই চায় প্রিয়জনের মুখখানি শেষবারের মতো হলেও একবার দেখার। এরই মধ্যে প্রিয় মানুষটির স্মৃতি মনে করে অনেকেই বিলাপ করছিলেন। তাদের সান্তনাও দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন অনেকেই।

ঢামেক হাসপাতাল মর্গে সূত্র জানায়, আগুনে মরদেহগুলো এমনভাবে পুড়েছে যে তা চেনার কোন উযায় নেই। কারো কারো শরীরে মাংস থাকলেও তা পুড়ে কালো হয়ে গেছে। রয়েছে শুধু হাড়গোড়।  ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের নাম পরিচয় নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করছে সিআইডি।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, ২১ দিন শেষে নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যাবে। এ জন্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশপাশি স্বজনদের কাছ থেকে নমুনা নেওয়া হচ্ছে মূলত ম্যাচ করার জন্য।

উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ৬ তলা ওই কারখানাটিতে হঠাৎ আগুন জ্বলে কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। এ সময় ভেতরে কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। তারা বের হতে না পেরে ভেতরে আটকে যান। এ ঘটনায় ৫২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।