দেশের নারী শিক্ষা প্রসারে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ পদক পেলেন (মরণোত্তর) কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা শহীদ দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহার ছোট মেয়ে জয়াপতি।
বঙ্গমাতার অবদান চিরস্মরণীয় করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর গৌরবজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছর থেকে সরকার ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ পদক প্রবর্তন করেছে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রণদাপ্রসাদ সাহা ও তাঁর একমাত্র ছেলে ভবানীপ্রসাদ সাহা (রবি) কে স্থানীয় দালাল মওলানা ওয়াদুদ ও তার দুই ছেলের সহায়তায় নারায়ণগঞ্জ থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর আর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ সময় যুক্তরাজ্যে বসবাসরত তাঁর ছোট মেয়ে দেশে বেড়াতে এসে আটকে যান। পিতা রণদা নিখোঁজ হওয়ার পর জয়াপতি কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার হাল ধরেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে কুমদিনী কল্যাণ সংস্থার বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নতুন গতি সঞ্চার হয়। বিশেষ করে কুমুদিনী হাসপাতাল ও দেশের নারী শিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান ভারতেশ্বরী হোমসে নতুন জীবন ফিরে আসে।
এ প্রসঙ্গে ভারতেশ্বরী হোমসের সাবেক অধ্যক্ষা, কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার পরিচালক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষাসৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দী রাইজিংবিডিকে বলেন, দেশের স্বাধীনতা লাভে শেখ মুজিবের পাশে থেকে যিনি অনবদ্য অবদান রেখেছেন তিনি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। মহীয়সী নারী বঙ্গমাতার দেশপ্রেম, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাহসিকতা, মানব কল্যাণ ও ত্যাগের মহিমা বাঙালিসহ বিশ্বের সব নারীর কাছে চিরন্তন অনুপ্রেরণার উৎস।
তিনি বলেন, দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহা যাকে আমরা ‘জ্যাঠামণি’ বলে ডাকি তার ছোট মেয়ে জয়াপতির নেতৃত্বে ভারতেশ্বরী হোমস দেশের নারী শিক্ষা প্রসার ও মেয়েদের স্বাবলম্বি হওয়ার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন। তার সেই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাকে এই পদকে ভূষিত করেছে এটা কুমুদিনী পরিবার এবং ভারতেশ্বরী হোমসের জন্য বড় স্বীকৃতি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্য শেখ হাসিনার নের্তৃত্বাধীন সরকারকে এ জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিভা মুৎসুদ্দী বলেন, এই স্বীকৃতি আমাদের আরো দায়িত্বশীল হতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহার কনিষ্ঠা কন্যা জয়াপতি অদম্য এক যোদ্ধার নাম। ব্যক্তিত্বময়ী এই নারী সারা জীবন ব্যক্তিগত অর্জনের ব্যাপারে ছিলেন নিস্পৃহ। নারীর স্বাবলম্বন, মানবতাবাদী কর্মকাণ্ডসহ দেশসেবা ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। জয়াপতির তত্বাবধানে পরিচালিত কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট ১৯৮২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হয়। শহীদ রণদাপ্রসাদ সাহা ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) এ ভূষিত হন।
জয়াপতি ১৯৩২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে শরীরচর্চা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে তিনি দেশে ফেরেন। এরপর বাংলাদেশের প্রথম আবাসিক বালিকা বিদ্যালয় ভারতেশ্বরী হোমসের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ, বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন, তাঁত বোর্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর জয়াপতি মৃত্যুবরণ করেন।