জাতীয়

ডেন্টাল পরীক্ষায় দেশ সেরা রাহাতের গল্প

নাজমুস সাকিব রাহাত। পঞ্চগড়ের ছেলে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিটসমূহে প্রথম বর্ষের ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় সবাইকে টপকে দেশ সেরা হয়েছেন।

রাহাতের সর্বমোট স্কোর ২৯৫। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া রাহাত ভর্তি পরীক্ষায় ১০০-এর মধ্যে পেয়েছেন ৯৫ নম্বর। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই ফলাফল প্রকাশ হয়।

রাহাতের সঙ্গে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। রাহাত গত ৯ মাস থেকে আছেন নারিন্দার একটা মেস বাড়িতে। সেই একই বাড়িতে থাকছেন আরও ৯ জন। তারা সবাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। 

রাহাত জানান, তার এ সাফল্য আল্লাহর রহমত, মা-বাবার দোয়া, আত্মীয় স্বজন, শিক্ষকসহ অনেকের প্রেরণা ও অবদান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট বড় ভাই ইব্রাহিম খলিলের কাছ থেকে পেয়েছেন।

রাহাত বলেন, ‘আগে থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। আমার স্বপ্ন দক্ষ চিকিৎসক হয়ে সমাজের গরিব, দুঃখি ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো।’

সে লক্ষে এবারের মেডিক‌্যাল ভর্তি পরীক্ষাতেও অংশ নিয়েছিলেন। মাত্র এক নম্বর কম স্কোর থাকায় সেখানে ভর্তির সুযোগ পাননি।

ডেন্টালে দেশ সেরা হতে পারলেও মেডিক‌্যালে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করেনি, এ দুঃখ তাতে প্রতিনিয়ত পীড়া দিচ্ছে। তারপরও যা হয়েছে, ভালোর জন্যই হয়েছে বলে মনে করেন রাহাত।

রাহাতের মেডিক‌্যাল ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কৌতুহলবশত পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র দেখতে যান তিনি। কেন্দ্র দেখে ফেরার পথে বাসে এক বৃদ্ধের সঙ্গে তার দেখা হয়। একটু পর বৃদ্ধের কাছে ভাড়া চাইলে তিনি বৃদ্ধ কেঁদে ফেলেন। 

কান্নার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি ঢাকায় একটি বাড়িতে দারোয়ানের কাজ করতেন। কিছুদিন আগে কাজ থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান তার দাঁতগুলো সব নড়বড়ে হয়ে গেছে। ডাক্তারের কাছে গেলে ১২৮ টাকার জন্য চিকিৎসা না দিয়েই ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাকে। বৃদ্ধের কথা শুনে খুব খারাপ লাগে রাহাতের। সামান্য কিছু অর্থ সহযোগিতা করে রুমে ফিরে আসে। কিন্তু মাথা থেকে বৃদ্ধের ছবিটা আর মোছে না।

মেডিক‌্যালে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে ভেঙে পড়ে রাহাত। হঠাৎ বাসে দেখা ওই বৃদ্ধের কথা মনে পড়ে যায় তার। রাহাতের কেবলই মনে হতে থাকে- ওই বৃদ্ধ হয়তো চাইছিলেন রাহাত দাঁতের ডাক্তার হোক। তার মতো অসহায় মানুষদের চিকিৎসা করুক। যার জন্যই হয়তো রাহাতের মেডিক‌্যালে চান্স হয়নি। কে জানে! হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। মানুষ কী আর সব জানে!