রূপা আক্তার। বয়স ২২। চার দেয়ালের মধ্যেই অতিবাহিত হচ্ছে তার জীবন। তাজরীন গার্মেন্টসের লেলিহান শিখা থেকে জীবন বাঁচাতে চতুর্থ তলা থেকে লাফ দেন তিনি ও তার খালা। এতে মারাত্মক আহত হন তারা। জমিজমা যা ছিলো বিক্রি করে করিয়েছেন চিকিৎসা। অর্থকষ্টে সংসারের চাকা থেমে যাওয়ার পথে। কোনো সাহায্যও পাচ্ছেন না তারা।
এ অবস্থায় রূপা আক্তার বলেন, ‘আমাদের একটু সাহায্য করুন, বাঁচতে দিন, ধুঁকে ধুঁকে মরতে চাই না।’
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন গার্মেন্টসে ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে ১১২ জন নিহত ও ১০৪ জন আহত হন। কারখানাটিতে এক হাজার ১৬৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন কিন্তু দুর্ঘটনার সময় ৯৮৪ জন শ্রমিক সেখানে কর্মরত ছিলেন।
রূপা আক্তার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়েছি। অভাবের সংসার। এ জন্য গার্মেন্টসে কাজ করতে যাই। তাজরীনের কারখানায় আগুন থেকে বাঁচতে সেদিন চার তলা থেকে লাফ দিয়েছিলাম। পায়ে রড ঢুকে যায়, কোমরে আঘাত পাই। দেয়ালের সঙ্গে মাথায় আঘাত লাগে। জমি-জমা বিক্রি করে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করিয়েছি। আমরা খালাও (নাটা বেগম) সেদিন বাঁচার জন্য বিল্ডিং থেকে লাফ দেন। তিনিও আহত হন।’
তিনি বলেন, ‘দুজন মানুষ অসুস্থ। তেমন আয় রোজগার নাই। আমার মার বয়স হয়েছে। পরের বাসায় কাজ করে যা উপার্জন করেন তাই দিয়েই সংসার চলছে। অসুস্থ দুইজন মানুষের দেখাশোনা করতে করতে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আর এদিকে অভাবের কারণে বাসা ভাড়া তিন মাসের বাকি হয়ে গেছে। বাড়িওয়ালা ভাড়ার জন্য এসে অপমান করে।’
রূপা আক্তার বলেন, ‘তাজরীনের আগুন আমার সব কেড়ে নিছে। এখন পঙ্গু হয়ে ঘরে বসে আছি। বিয়ে আসে। তারা যৌতুক চায়। যৌতুকের টাকার জন্য বিয়েও হয় না।’
তিনি বলেন, ‘এত শ্রমিক মারা গেছে এর বিচারও হলো না। ক্ষতিপূরণও পেলাম না। সরকার থেকেও তেমন সাহায্য পেলাম না। মালিক কেন আমাদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না? আমাদের বাঁচতে দিন। এভাবে মরতে চাই না। আমাদের দিকে একটু তাকান।’