‘৪০০ বছরের পুরোনো ঢাকা শহর। তিন নদী ঘিরে আছে ঢাকাকে। এসব নদীর উভয় পাড়ের বেশিরভাগই এখন দখলারদের হাতে। তাছাড়া বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ার কারণে নদীর পানি মারাত্মক রকম দূষিত হয়ে উঠেছে। এসব নদী দখল ও দূষণমুক্ত করে রাজধানীবাসীকে বাঁচাতে হবে।’
শনিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর বছিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত ‘বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চা এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম’ আয়োজিত বুড়িগঙ্গা নদী উৎসব অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন বুড়িগঙ্গায় জাল ফেললে মাছ ওঠে না। বালু আর ময়লা ওঠে। হাউজিং কোম্পানিগুলো ড্রেজিং করে বালু ফেলে নদী দখল করে সেখানে প্লট বানিয়ে বিক্রি করছে।’
মেয়র বলেন, ‘মাটি বা বালু ফেলে সরকারি জায়গা, নদী, খাল এসব দখল করে ভরাট করা আর চলবে না। তাছাড়া হাউজিং কোম্পানিগুলো ডিজাইন পাশ করার সময় খেলার মাঠ, স্কুল, মসজিদ, বাজার, কবর রাখেন। পরে জায়গার দাম বেড়ে গেলে সেসব বাদ দিয়ে প্লট বানিয়ে বেচে দেয়। এসব আর বরদাশত করা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদের সোচ্চার হতে হবে। ডিএনসিসি এসব আন্দোলনকারীদের পক্ষে ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমাদের সব কিছুর সঙ্গে নদীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। কল্যাণপুর এলাকায় পাঁচটি খাল ছিল। সব আজ দখল হয়ে গেছে। নদী, খাল, প্রকৃতি, গাছপালা এসব আমাদের জীবনীশক্তি। ভূমি দস্যুদের কারণে সেই জীবনীশক্তি হারিয়ে ফেলছি আমরা। সর্বস্তরের জনগণকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গাসহ প্রায় সব নদী, খালের দুই পাশে দখলের পাশাপাশি বর্জ্য ফেলে পানি দূষিত করে ফেলেছে। এসব অবৈধ দখলবাজদের হাত থেকে নদীকে উদ্ধার করতে হবে। মিল কারখানার বর্জ্য যেন নদী বা খালে না ফেলতে পারে, সে ব্যাপারে সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগ নিতে হবে।’
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন আজ শুরু হয়নি। অনেক আগে থেকে এ আন্দোলন চলছে। দিন দিন দখল আর দূষণকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। সবাই মিলে এদেরকে এক জোটে প্রতিহত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নদী দখল করে হাউজিং কোম্পানি করা বা নদীর পাড়ের কারখানার বর্জ্য কোনোভাবে নদীর পানিতে ফেলতে পারবে না। এজন্য কঠোর আইন করতে হবে। ওয়াসা সবসময় এসব কার্যক্রমে যে সিভিল সোসাইটি কাজ করে, তাদের সঙ্গে ছিল, থাকবে।’
USAID উপদেষ্টা সুমনা মাসুদ বলেন, ‘নদী পাড়ে বসবাসরত মানুষদের আরও সচেতন হতে হবে। নিজেদের পাশাপাশি কেউ যেন পানিতে বর্জ্য ফেলতে না পারে, সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে নদী বাঁচাতে হবে।’
কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনালের শাহীদ হোসাইন বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন, পানি দূষণ, পলিউশন, ড্রাগ এসব নিয়ে যারা কাজ করেন, এসব প্রতিষ্ঠানের সবার সঙ্গে আমরা আছি, থাকব। নদী দখল ও দূষণ থেকে ঢাকাবাসীকে বাঁচাতে হবে। আমরা সবার জন্য সুন্দর বাসযোগ্য ঢাকা চাই।’
ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘নদীকে কেন্দ্র করে উৎসব হোক, সেজন্য নদী বাঁচানো দরকার। স্থানীয় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় অনেক প্রভাবশালী মানুষেরা নদী দখল করছে। নদীর পাড়ে কারখানা বানিয়ে বর্জ্য ফেলছে। এসব দখলবাজদের প্রতিহত করা না গেলে নদীপাড়ের মানুষরা বাঁচবে না।’
ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলুর রহমান বলেন, ‘দৈনন্দিন জীবনে একসময় ঢাকাবাসী বুড়িগঙ্গার পানি দিয়ে গোসল, রান্না সবই করতো। বর্তমানে শ্যামপুর এলাকার ২০/২৫টি ডাইং মেশিনের বর্জ্য নদীতে পড়ে পানি মারাত্মকভাবে দূষণ করেছে। পানির গন্ধে নদীর পাড় দিয়ে চলা বা নৌকায় নদী পার হওয়া যায় না। এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’