করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছরে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের প্রকাশনা শিল্প। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সব ধরনের বই বিক্রি ব্যাপক হারে কমেছে।
বিগত বইমেলাতেও ক্ষতি নিয়েই মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়েছেন প্রায় সব প্রকাশক। সরকারের পক্ষ থেকে সেভাবে দেওয়া হয়নি কোনো প্রণোদনাও। এমন অবস্থায় আবারও শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এবারের বইমেলার আয়োজন নিয়ে ১০ দফা সুপারিশ ও প্রস্তাবনা রেখেছেন লেখক-পাঠক-প্রকাশকরা। এবারের মেলা স্বল্প পরিসরে আয়োজন করে ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা যায় কিনা, তা বিবেচনা করতে বলেছেন তারা।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বইবাড়ি রিসোর্টের উদ্যোগে শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে ‘কেমন চাই অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২’ লেখক-পাঠক-প্রকাশক আড্ডার আয়োজনে উঠে আসে এ বিষয়গুলো।
আড্ডায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ আদনান ফাহাদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতির সাবেক সভাপতি ও আকাশ প্রকাশনীর আলমগীর সিকদার লোটন, শ্রাবণ প্রকাশনীর রবীন আহসান, এক রঙা এক ঘুড়ি প্রকাশনীর শিমুল আহমেদ, নির্মাতা ও কথাসাহিত্যিক রেজা ঘটক, কবি ও সংগঠক নীলসাধু, বইবাড়ি রিসোর্টের সাইফুজ্জামান, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট যুবরাজ, কবি ও কথাসাহিত্যিক আরিফ ইমতিয়াজ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তারা বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত সময়ে জনগণের বড় অংশকে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে, যা এই সরকারের একটি বড় সফলতা। এ বছর করোনার মধ্যেও প্রিয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা বন্ধ করে রাখার কোনো বাস্তবতা নেই। এ বছর করোনা পরিস্থিতি এখনো বিপজ্জনক পর্যায়ে আসেনি। সে ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৫ দিনব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনের আহ্বান জানাচ্ছি।
করোনার সংক্রমণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে ১০টি সুপারিশ ও প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। এগুলো হলো—স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি’ ও টিকা সনদ প্রদর্শন করে বইমেলায় প্রবেশের ব্যবস্থা করা; স্বাস্থ্যবিধির প্রয়োজনে মেলায় একাধিক ‘প্রবেশ পথ’ ও ‘বাহির পথ’ রাখা; বইমেলার সময়সূচি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত করা, যেন মানুষের ভিড় এড়াতে সুবিধা হয় এবং অফিস ফেরত মানুষও বইমেলায় আসতে পারে; বইমেলায় যাওয়া-আসার জন্য বইমেলা প্রাঙ্গণকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন রুটে অন্তত ৫০টি বাস চালু করা; ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সীদের জন্য মেলায় প্রবেশে টিকিটের ব্যবস্থা করা যেন অনাহুত জনসমাগম এড়ানো যায় এবং শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে বিনা টিকিটে মেলায় প্রবেশ করতে দেওয়া।
এছাড়া প্যাভিলিয়নের চতুর্দিকে খোলা না রেখে প্রবেশ ও বেরোনোর পথ নির্মাণ করা এবং নির্দিষ্ট কিছু জোনের পরিবর্তে প্যাভিলিয়নের অবস্থান পুরো মেলার সমানুপাতিক হারে করা; মেলায় প্রবেশ ও বাহির পথের শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য শাহবাগ, দোয়েল চত্বর ও রমনা মোড়ের ট্রাফিক ও পথচারীদের চলাচলের পথ সুগম রাখা ও মেট্রো রেলের নির্মাণ স্থাপনাসহ বিভিন্ন রোড ডিভাইডার সুশৃঙ্খল করা; একইসঙ্গে বিশেষ দিবস (ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা ফাল্গুন, অমর একুশ, শুক্রবার ও শনিবার) নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করা, যাতে সেই দিনগুলোতে সর্বোচ্চ সংখ্যক পাঠক-ক্রেতা মেলায় এলেও নিরাপত্তা ইস্যুসহ পাঠক ক্রেতা দর্শনার্থীদের আসা যাওয়া নির্বিঘ্ন হয়; খাবারের দোকান/ক্যান্টিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে না দিয়ে নির্দিষ্ট জোনে দেওয়া; বইমেলাকে শিশুবান্ধব করতে স্টলের সজ্জা শিশুদের উপযোগী করে তৈরি করা ও শিশুরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে মেলায় ঘোরাঘুরিসহ স্টলে প্রদর্শিত বই দেখতে পারে সে ব্যবস্থা করা; এবং লেখক কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে যে আলোচনা আয়োজনটি নিয়মিত মেলা প্রাঙ্গণে হয় সেটির কলেবর আরও বৃদ্ধি করার সুপারিশও জানান বক্তারা।