ঈদ মানেই সড়কে যানজট। বাসগুলোর বাড়তি ট্রিপ। অন্যদিকে ফেরির ট্রিপ কমে যাওয়া কিংবা ধীরগতি। সবমিলিয়ে ফেরিঘাটে লম্বা সিরিয়াল আর দীর্ঘ ভোগান্তি। হোক সেটি মাওয়া-কাওড়াকান্দি, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার কিংবা দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া। দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রায় এই দুর্ভোগ ছিল গলার কাঁটা। তবে ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখন তারা ভোগান্তি ছাড়াই দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার যোগাযোগ রক্ষা করছেন ১০ মিনিটে।
তবে, সেই লালিত স্বপ্নে কিছুটা অবসাদও ছিল। কারণ উদ্বোধনের পরপরই সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এ নিয়ে ওই রুটে চলাচলকারী বাইকারদের মনে ছিল ক্ষোভ আর অভিমান। সে আক্ষেপের কথা বারংবার তারা জানিয়েছেনও। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল)। উদ্বোধনের ৯ মাস পর কিছু সতর্কতামূলক শর্ত জুড়ে বাইকারদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু। এ যেন দুই চাকার ঘূর্ণিতে লালিত স্বপ্নের দুয়ার উন্মোচন!
এই খবরে আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে সময় যেন কাটছিলো না ঈদে বাইকে চড়ে বাড়িফেরা মানুষের। তাই পদ্মা পাড়ি দিতে ১৯ তারিখ রাত থেকেই দাঁড়িয়ে পড়েন সিরিয়ালে।
পড়ুন: পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু
বেসরকারি চাকরিজীবী গোপালগঞ্জের হাবিল মুন্সি। রাজধানী থেকে বাড়িতে ফিরতে নিজের মোটরসাইকেলে মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথ ব্যবহার করেন। প্রথমবারের মত বাইকে সেতু দিয়ে বাড়ি ফিরবেন, সেই তাড়ায় ১৯ তারিখ ইফতারিও সারেন পদ্মাপাড়ে। তারপর থেকেই অপেক্ষা। আরেক চাকরিজীবী নড়াইলের প্লাবন হোসেন। নিজের মোটরসাইকেলে ঈদে বাড়ি ফেরেন। তিনিও ১৯ তারিখ রাত থেকে অপেক্ষা করছেন কখন ভোর হবে আর খুলে দেওয়া হবে দক্ষিণের দুয়ার খ্যাত পদ্মা সেতু।
নাঈম, দীপ, সজল, মিলন, কাজল, অনিতসহ আরও দুই বন্ধু। চার বাইকে মোট ৮ জন। তাদেরও দীর্ঘ অপেক্ষা কখন পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে। ১৯ তারিখ রাত ১২টা থেকে অপেক্ষার অবসান তারও ৬ ঘণ্টা পর।
২০ এপ্রিল ঘড়ির কাটায় যখন ৫টা ৩০ মিনিট, টোল প্লাজা থেকে পদ্মা সেতুর উত্তর প্রান্ত থানা পর্যন্ত বাইকারদের দীর্ঘ লাইন। ঘড়ির কাটায় সকাল ঠিক ৬টা। প্রথম বাইকার টোল পরিশোধ করে পদ্মা সেতুতে উঠলেন। এরপর এক এক করে সব বাইকার সেতুতে যখন উঠছিল, তখন চোখেমুখে ছিল বিজয়ের হাসি। বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল, কিন্তু তার চেয়েও বেশি ‘অপেক্ষার অবসানের তৃপ্তি’।