জাতীয়

সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু

সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। সেক্ষেত্রে বুধবার (১ নভেম্বর) শুরু হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা। এদিকে, ইসি সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রেওয়াজ অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেই সাক্ষাৎ হবে আগামী ৫ নভেম্বর।

সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর এক সপ্তাহ পরে ৮ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তৎকালীন সিইসির নেতৃত্বে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তার এক সপ্তাহের মাথায় ২৫ নভেম্বর ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘোষণা ও জানুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।

তবে দেশের বড় দুই দল, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচন ইস্যুতে এখন দুই মেরুতে। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হবে তা নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপি চাইছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন। দাবি আদায়ে সমাবেশ, মহাসমাবেশ এবং সর্বশেষ হরতাল ও অবরোধের মতো নানা কর্মসূচিতে মাঠে রয়েছে দলটি। অন্যদিকে, বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

সবকিছু বিবেচনায় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আবারও সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। জানা গেছে, আগামী ৪ নভেম্বর সকালে নির্বাচন ভবনে এসব দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।  

ইসি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে মোট ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। সংলাপে এসব দলের শীর্ষ দুই নেতা অথবা তাদের মনোনীত দুজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জনানো হবে।

মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর সংলাপের বিষয়ে গণমাধ্যমে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে জানাতে এই সংলাপের আয়োজন করা হচ্ছে। নিবন্ধিত সবগুলো দলকে দুই ভাগে সংলাপের জন্য ডাকা হবে।

আরও জানা গেছে, ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। গেল বছর দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই জুলাইয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নেয় ইসি। সরকার সমর্থিত দলগুলো এতে অংশ নিলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী দলগুলো সেই সংলাপ বর্জন করে।

মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে দলগুলো সংলাপের মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের পথ খুঁজে নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে গতকালই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আবারও সংলাপে বসার উদ্যোগের কথা জানাল নির্বাচন কমিশন।

যদিও পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্ধারিত পদ্ধতি ও সময়ের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেই ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থানে আছি।

ব্যালট পাঠানোর সময় নিয়ে ভাবনা 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির মধ্যে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে গত সোমবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করেছে ইসি। রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানা গেছে, সভায় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট কখন পাঠানো হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া, আলোচ্যসূচিতে ১৯টি বিষয়ও ছিল। এর মধ্যে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনকালীন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি, ভোট কেন্দ্র, রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা বেশকিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন।

বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা সভার একপর্যায়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছাতে গেলে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে জনবল সংকট দেখা দেবে। ইসি বলেছে, পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, নির্বাচন কমিশন বিতর্ক এড়াতে আসন্ন দ্বাদশ জতীয় সংসদ নির্বাচনে দুর্গম এলাকাগুলো বাদে সারা দেশে ভোট কেন্দ্রগুলোয় ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল।

ভোট আয়োজনে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই

নভেম্বরের প্রথমার্ধে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির মধ্যে বিরাজমান পরিবেশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ভালো বলে কমিশনকে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। ভোট আয়োজনে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। গত সোমবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা সভা হয়েছে। সভায় চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয়ে আড়াই ঘণ্টা বৈঠক চলে। আইনশৃঙ্খলা সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিব, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, একটি বড় রাজনৈতিক দল হরতাল শেষে সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে। কমিশনের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন মতে মনে হয়েছে এখন পর্যন্ত পরিবেশ সন্তোষজনক রয়েছে। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের যে প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনে বড় ধরনের কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। যেহেতু রোববার হরতালের পর তিন দিনের অবরোধ দিয়েছে বিএনপি, সে বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছেন।