জাতীয়

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সারা বছর সচেতন থাকতে হবে: মেয়র আতিক

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘ডেঙ্গু এখন আর কোনো নির্দিষ্ট সিজনের সমস্যা না। মানুষ এখন সারা বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু বর্ষায় না, শীতকালেও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। তাই, ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুধু বর্ষায় নয়, সারা বছরই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) আয়োজিত কমিউনিটি পর্যায়ে ডেঙ্গু বিষয়ে জনসচেতনতা কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

ডিএনসিসির মেয়র বলেন, ‘ড্রেন বা নর্দমার পানিতে কিন্তু এডিস মশার জন্ম হয় না। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই এডিসের লার্ভা জন্মায়। ফুলের টব, অব্যবহৃত টায়ার, অব্যবহৃত কমোড, ডাবের খোসা, চিপসের খোলা প্যাকেট, বিভিন্ন ধরনের খোলা পাত্র, ছাদ কিংবা অন্য কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতি তিন দিনে অন্তত এক দিন জমে থাকা পানি ফেলে দিন। যদি প্রতি শনিবার নিজেদের বাসা পরিষ্কার করি, তাহলে এডিস মশার কামড় থেকে আমরা নিরাপদ থাকতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রচারের পাশাপাশি আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে আইনানুগ ব্যবস্থাও নিচ্ছি। আমি না জানিয়ে ঝটিকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে। সেখানে ২৮টি ভবনের বেজমেন্টে প্রচুর লার্ভা পেয়েছিলাম। কারওয়ান বাজারে সরকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা, টিসিবি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন এবং যমুনা অয়েলের ভবনেও অভিযান চালিয়ে লার্ভা পেয়েছি। সবাইকে জরিমানা করেছি। সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা কারো ভবনের ভিতরে গিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করবে না। নিজ নিজ ভবনের ভিতরে পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নিজেদেরকে নিতে হবে। পরবর্তীতে আমি আবার জাপান গার্ডেনে পরিদর্শনে গিয়েছি, তখন কিন্তু কোনো লার্ভা পাওয়া যায়নি। তারা বললো, ৫ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছি, তাই এখন সতর্ক হয়ে গেছি।’ 

তিনি বলেন, ‘কাউকে জরিমানা করা বা জেল দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো—কোথাও যেন এডিসের লার্ভা না জন্মে। আমরা চাই, সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। কমিউনিটির সবাই সচেতন হলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।’

উপস্থিত চিকিৎসকদের উদ্দেশে ডিএনসিসির মেয়র বলেন, ‘করোনার সময়ে দেখেছি, চিকিৎসকরা, নার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। ভয়াবহ করোনায় অবদানের জন্য আমি আপনাদের স্যালুট জানাই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করতে আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার চালিয়েছি। কমিউনিটি পর্যায়ে ডেঙ্গু সচেতনতা বৃদ্ধিতে আপনারা প্রচারণার যে কর্মসূচি নিয়েছেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নিপসম ও ডিএনসিসি যৌথভাবে কাজ করবে। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মশা মারার জন্য দোকান থেকে অ্যারোসল ও কয়েল কিনে ব্যবহার করি। মশা হওয়ার পরে মশা মারার জন্য এগুলো ব্যবহার করা হয়। সিটি কর্পোরেশন থেকে মশার লার্ভা ধ্বংসে লার্ভিসাইডিং করা হয়৷ কিন্তু, পরিপূর্ণ মশা হওয়ার আগে লার্ভা ধ্বংসের কীটনাশক যদি ওভার দ্য কাউন্টারে এভেইলেবল কিনতে পাওয়া যায়, তাহলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। সবাই দোকান থেকে কিনে কীটনাশক ব্যবহার করে উৎসস্থলেই মশার লার্ভা ধ্বংস করতে পারবেন। স্বাস্থ্য বিভাগকে অনুরোধ করব, এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা চাই, ডেঙ্গুতে যেন একজনেরও মৃত্যু না হয়। কিন্তু, এটি শুধু চাইলেই হবে না। আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। শুধু ঢাকা শহরে না, পুরো দেশে প্রচার চালাতে হবে। ব্যাপক প্রচার চালানোর মাধ্যমে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’

নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের বাড়ি এবং আশপাশের জায়গা, কর্মস্থল যত্নসহকারে পরিষ্কার করা উচিৎ। বসবাসের জায়গা সপ্তাহে অন্তত এক দিন পরিষ্কার করতে হবে। এডিস মশা সাধারণত ২০০ মিটার পর্যন্ত উড়তে পারে। তাই, যেকোনো ব্যক্তির বাড়ি এবং আশপাশের জায়গা, কর্মস্থল ও বসবাসের জায়গা যদি পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে এডিস মশাসহ অন্যান্য প্রজাতির মশা ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বর এখন একটি অ্যান্ডেমিক রোগ। যদি আমরা পরিষ্কার থাকার মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করি, তাহলে বছরব্যাপী এ রোগটি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। সে কারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসির মেয়র কমিউনিটি পর্যায়ে ডেঙ্গু বিষয়ে জনসচেতনতা কর্মসূচির উদ্বোধন করেন এবং অন্য অতিথি ও চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে সচেতনতামূলক র‍্যালিতে অংশ নেন। এ সময় মেয়র জনগণের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. মো. আখতারুজ্জামান, ইউনিসেফের প্রতিনিধি লরেন্স ওযুবা, ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।