জাতীয়

‘মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে নিতেই সিপিডির অসত্য তথ্যনির্ভর সংবাদ সম্মেলন’

নির্বাচনের আগে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) অসত্য তথ্যনির্ভর সংবাদ সম্মেলন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে শেখ হাসিনার বক্তৃতা ১৯৮১-১৯৮৬’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ অভিযোগ করেন। পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ এবং দৈনিক সংবাদ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। 

সিপিডি’র প্রতিবেদনের ভুল চিহ্নিত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সিপিডি’র এই প্রতিবেদন আমি পড়েছি। উনারা বলেছেন, আমাদের উন্নয়ন বাজেটের ৭৫ শতাংশ আসে বৈদেশিক সাহায্য থেকে, যা সম্পূর্ণ অসত্য, এবসোল্যুটলি রং অ্যান্ড বোগাস। আমাদের উন্নয়ন বাজেটের ৩৫ শতাংশ হচ্ছে বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর। আগে আরেকটু কম ছিল। একটা গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনে এরকম ভুল কীভাবে থাকে? এ প্রতিবেদনে আরও ভুল আছে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এরকম প্রচার করার উদ্দেশ্য কি মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে নিবদ্ধ করা? সেই প্রশ্ন অনেকেই রেখেছে।’ 

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিভিন্ন বড় বড় গ্রুপ যে ঋণ নিয়েছে, সেগুলোকে সন্নিবেশিত করে সিপিডি বলতে চেষ্টা করেছে যে, ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। আমি মনে করি, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম যে হয়নি বা হচ্ছে না সেটি নয়, অনিয়ম কিছুটা হয়েছে। কিন্তু, এই সমস্ত বিষয় আগে বহুবার পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এখানে গবেষণার কিছু নেই। এগুলো সব লোন ইস্যু বা ঋণের বিষয়, এগুলো সবাই জানে। উনারা পত্রপত্রিকা ঘেঁটে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে প্রেস কনফারেন্সে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল। সেই প্রতিবেদনেও অনেক ভুল। এ সময় মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে নিবদ্ধ করার জন্যই এটি করা হয়েছে।’ 

সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবং সরকার যাতে সঠিকভাবে কাজ করে, সে প্রয়োজনে ভুল ধরে দেওয়ার জন্য সিডিপির মতো প্রতিষ্ঠান দরকার আছে, গবেষণারও প্রয়োজন আছে। কিন্তু, যখন এই গবেষণায় এত বড় ভুল থাকে, যা ‘গ্রস মিসটেক, নট সিলি মিসটেক’, আর প্রতিবেদন হয় অসত্য তথ্যনির্ভর, তাহলে সেই প্রতিবেদন এবং যারা তা প্রকাশ করে, তাদের নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।’ 

নির্বাচনবিরোধী প্রচারণার ওপর নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিএনপি কিভাবে নির্বাচনবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে, এ প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, মাঠ প্রশাসন এবং পুলিশ এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন কমিশনই করবে। যখনই কমিশন এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশনা দেবে, অবশ্যই প্রশাসন সেটি প্রতিপালন করবে। আমি মনে করি যে, এই নির্দেশনা সুষ্ঠু, অবাধ, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সহায়ক। 

নির্বাচনের বিরুদ্ধে কেউ কেউ গোলটেবিল বৈঠক করছে, এমন কথার জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যারা লম্বা, গোল বা চ্যাপ্টা টেবিল মিটিং করছে, তাদের হাঁকডাক তো শোনা যাচ্ছে না। পত্রিকার পাতায়ও স্থান পাচ্ছে না। নির্বাচন অত্যন্ত অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে। প্রতি আসনে গড়ে সাড়ে ৬ জন প্রার্থী। ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।

সরকার লুটপাটের অর্থ দিয়ে ডামি নির্বাচন করছে, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী এবং মঈন খানের এমন অভিযোগের বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির ডামি নেতারা কী বলল, এতে কিছু আসে-যায় না। ওদের আসল নেতা তারেক রহমান আর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রুহুল কবির রিজভী আর মঈন খান তো ওদের ডামি নেতা। এরা দুজনই ডামি নেতা বলেই ডামি শব্দটা বেশি পছন্দ করে। আর লুটপাটের জন্য তো উনারাই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। পরপর পাঁচবার উনারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেই লুটপাটের অর্থ দিয়ে তারা এখন দেশে আগুনসন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমাদের সরকার লুটপাটকারীদের ধরার ব্যবস্থা করছে এবং আরাফাত রহমান কোকোর টাকা ফেরত এনেছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এফবিআই এসে বাংলাদেশে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে।  

এর আগে ‘সংবাদপত্রে শেখ হাসিনার বক্তৃতা ১৯৮১-১৯৮৬’ গ্রন্থ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। আমি পিআইবিকে অনুরোধ করেছিলাম যে, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকাকালে দেওয়া সমস্ত বক্তব্যের সংকলন বের করার জন্য। তারা ১৯৮১-১৯৮৬ পর্যন্ত পর্বটি সমাপ্ত করেছে। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত একটি, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত একটি এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আরেকটি পর্বের কাজ চলছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর হাতে বইটি দিয়েছি। 

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম ও বিশ্বে নারী হিসেবে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাসে দীর্ঘতম ৪৩ বছর ধরে সভাপতি। এটি আর কোনো নেতার ক্ষেত্রে হয়নি। সেজন্য এগুলো ইতিহাসের অংশ। ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এই বইয়ের তথ্য দলের নেতাকর্মীদের যেমন জানা প্রয়োজন, সাংবাদিকদেরও জানার সুযোগ আছে। 

পিআইবি’র পরিচালক ড. কামরুল হক, সহ-সম্পাদক আকিল উজ জামান খান, গবেষক পপি দেবী থাপা এবং মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন প্রমুখ মোড়ক উন্মোচনে অংশ নেন।