জাতীয়

মানুষের সেবায় ভীতিমুক্ত থেকে কাজ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন মানুষের সেবা করার জন্য। আমি কোনো রাজনৈতিক নেতা নই, নির্বাচনও করিনি। মানুষের সেবায় আমি নিরপেক্ষ ও ভয়-ভীতিমুক্ত থেকে কাজ করব।’

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজে কক্সবাজার জেলায় কর্মরত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জেলা ও বিভাগীও পর্যায়ের চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ মতবিনিময় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে দিকনির্দেশনা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। 

কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল সভায় কক্সবাজারে চিকিৎসাসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়নে জেলাবাসীর দাবি উপস্থাপন করেন। 

দুপুরে কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ অডিটোরিয়ামে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আরেকটি সভা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের মনোযোগের সাথে পড়াশোনা করার মাধ্যমে প্রথমত ভালো চিকিৎসক হতে হবে। এর সাথে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সৎ ও আদর্শিক মানসিকতা নিয়ে ডাক্তারি পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করতে হবে। আমরা শুধু হাজার হাজার ডাক্তার চাই না, আমরা চাই, ভালো ডাক্তার—এই কথাটির অর্থ শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে।

সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন যে, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নির্মাণকাজ অচিরেই শুরু করা হবে।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সফর করেন। সফরের প্রথম দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ওজিএসবি’র ৫০তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) এবং ৩২তম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের সহোযোগিতা চান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন। চিকিৎসকদের জন্য যা করতে হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে আমি সেভাবেই ব্যবস্থা নেবো।’

সফরের দ্বিতীয় দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে চিকিৎসক অধ্যক্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন। সেখানে তিনি দেশের সব মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। মন্ত্রী তার বক্তব্যে চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কক্সবাজার শহরের হসপাতাল সড়কে অবস্থিত ইউনিয়ন হসপিটাল লিমিটেড এবং ২৫০ শয্যার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল আকস্মিক পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবুল হোসেন মো. মঈনুল আহসান, বিভাগীয় পরিচালক (চট্টগ্রাম) ডা. মো. মহিউদ্দিন এবং কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা উপস্থিত ছিলেন। 

পরিদর্শনকালে বেসরকারি হাসপাতালটির বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। হাসপাতালটি লাইসেন্সের পরিধিবহির্ভূতভাবে আইসিইউ, সিটি স্ক্যান মেশিন, অপারেশন থিয়েটার ও পোস্ট অপারেটিভ রুম পরিচালনা করছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালটির এ অংশগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে উক্ত অননুমোদিত আইসিইউ এবং পোস্ট অপারেটিভ রুমে ভর্তি করা রোগীদের জরুরী ভিত্তিতে জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। 

পরবর্তীতে মন্ত্রী কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, মহিলা মেডিসিন বিভাগ, সিসিইউ, শেখ রাসেল নবজাতক সেবা ইউনিটে রোগী ও দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন। মন্ত্রী হাসপাতালেই সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।

সফরের শেষ দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী সকালে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জরুরি বিভাগ, আউটডোর ও ইনডোরে রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

এর পর মন্ত্রী রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়ন উপ- স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে চিকিৎসা ও পরিবার পরিকল্পনা সেবার চিত্র প্রত্যক্ষ করেন।