জাতীয়

ছুটির দিনে জমজমাট হাতিরঝিল

ছুটির দিন মানেই ঘোরাঘুরি, প্রাণ খুলে আড্ডাবাজি, খাওয়া-দাওয়া সর্বোপরি মন-প্রাণ খুলে আনন্দ করা। বিভিন্ন জাতীয় ও ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীবাসী বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে। শিশু, বাবা-মা, বৃদ্ধ সবাই এ সময় খোলা আকাশের নিচে, প্রকৃতির সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে আবারো ফিরে যান নীড়ে।

ঈদ, পূজা, বাংলা নববর্ষ, পয়লা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের মতো আজ মহান ভাষা শহিদ দিবসেও হাজারো মানুষ ঘুরতে বের হয়েছেন। তারা বেছে নিয়েছেন বইমেলা, শহিদ মিনার, চারুকলা, রমনা পার্ক, চিড়িয়াখানা, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবন, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রকে।

আজকের বিশেষ এই দিনটিতে সকাল থেকেই রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সের মানুষের উপচেপড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভিড় কমেনি বরং বেড়েছে।

বিশেষ দিনগুলোর মতো আজও রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হাতিরঝিল হয়ে ওঠেছে লোকে লোকারন্য। সকাল থেকেই বিনোদনপ্রেমীরা আসতে শুরু করেছেন এখানে। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে পুরো হাতিরঝিল এলাকা হয়ে ওঠেছে উৎসবমুখর।

২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতিরঝিল প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এরপর গত ১১ বছরে হাতিরঝিলের সড়কপাড়ের গাছগাছালি বড় হয়েছে। বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে হাতিরঝিলের চাহিদা বেড়েছে রাজধানীবাসীর কাছে। ঝিলের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত ঘুরে ঘুরে দেখার জন্য চক্রাকার বাস সার্ভিস নামানো হয়েছে। পানিতে চলছে ওয়াটার বাস। যাতে চড়ে পুরো হাতিরঝিলের সৌন্দর্য দেখতে পারেন এখানে আসা মানুষেরা।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) হাতিরঝিলে দেখা গেছে, নানা সাজে, নানা ঢঙে, সাতা-কালো পোশাক পরে ঘুরতে এসেছেন বিনোদনপ্রেমীরা। অনেকে চক্রাকার বাসে করে ঘুরেছেন পুরো হাতিরঝিল। কেউ বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওয়াটার বাসে চড়ে ঘুরছেন লেকে। উপভোগ করছেন পুরো হাতিরঝিলের সৌন্দর্য। বাড়তি আনন্দে ভাসছে শিশু-কিশোররা। বাড়তি খুশি মা-বাবার হাত ধরে ঘুরতে আসা শিশুরা। তাদের হাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খেলনা-বেলুন।

পরিবার-সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন জানান, আমার বাসা মালবাগ এলাকায়। বিশেষ দিনগুলোতে সুযোগ পেলেই বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করি। আজ সকালে সন্তানদের নিয়ে বইমেলায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এসেছি হাতিরঝিলে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে ঘুরবো। ওয়াটার বাসেও চড়বো।

হাতিরঝিল ওয়াটার বাসে চড়বে, এই খুশিতে ছোট্ট শিশু রোদসী ঘাটে অপেক্ষা করছে। তাকে বেশ উত্তেজিত মনে হলো। এক হাতে বড় ধরনের একটা বেলুন, অন্য হাতে বাবার হাত ধরে থাকা ৬ বছরের রোদসী বলে, বাবা মায়ের সঙ্গে নৌকায় ঘুরবো, অনেক মজা হবে। তারপর আইসক্রিম খাবো। তবে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা মানুষের চেয়ে সন্ধ্যায় মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হবে বলে জানান মহানগর প্রজেক্টের উল্টোপাশের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী দ্বীন ইয়ামিন।

তিনি বলেন, বিকেল থেকে মানুষ আসা বাড়বে। থাকবে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত। সবসময় তাদের ব্যবসা মোটামুটি ভালো চললেও বিশেষ দিন ও ছুটির দিনে ব্যবসা ভালো হয়।

হাতিরঝিলে ১০-১২ জন যুবকের সঙ্গে দেখা হয়েছে, যারা ঘুরতে আসা মানুষের ছবি তুলে দেন। এমনি একজন সামিন বলেন, ঘুরতে আসা মানুষদের ছবি তুলে দেই। প্রতি ছবি ৫ টাকা করে নিচ্ছি। তবে কেউ বেশি ছবি তুললে কমও নিচ্ছি। অনেকে ৫০-১০০টা ছবিও তোলেন। ছবি তোলা শেষ করে মেমোরি কার্ড বা ব্লুটুথের মাধ্যমে সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেন।  ডিএসএলআর ক্যামেরায় ছবি তুলে যা আয় হয়, তাতে ভালোই আছেন বলেও জানান সামিন।