ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান বিভিন্ন সময়ে মুছে ফেলার চক্রান্ত হয়েছিল, অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার অবদানকে খাটো করার চেষ্টা করা হলেও ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভাষাশহিদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র থাকাকালে শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রসংগঠন গঠন করে এবং সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলে ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, উপমহাদেশে একমাত্র ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ, যা আমরা পেয়েছি; যার সব অবদানই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।
বাঙালির যা কিছু প্রাপ্তি, তা আওয়ামী লীগই দিয়েছে, দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন, একটি বিজাতীয় ভাষা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার যে চেষ্টা, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমা দেখলেও কিন্তু ইতিহাসের অনেক কিছু জানার সুযোগ রয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। অনেক জ্ঞানি-গুণী বুদ্ধিজীবীর বক্তব্য ছিল—তিনি (বঙ্গবন্ধু) আবার ভাষা আন্দোলেন কী ভূমিকা রেখেছিলেন? তিনি তো জেলে ছিলেন। তো, জেলে ছিলেন কেন? ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দেওয়া এবং এই বাংলাদেশের মানুষের কথা বলতে গিয়েই তো তিনি বারবার জেলে গেছেন।
‘পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্রটা গঠন হয়েছিল, সেখানে এই পূর্ববঙ্গের মানুষেরই অবদান ছিল। তখনকার মুসলিম লীগ কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো সিট পায়নি, আর সেটার ওপর ভিত্তি করেই পাকিস্তান সৃষ্টি। আমরা ৫৬ ভাগ ছিলাম বাঙালি, অথচ আমাদেরই অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র। তাদের শাসনভার আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই ১৯৪৮ সাল থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিবাদ শুরু করেন। এজন্য তিনি বারবার গ্রেপ্তার হন। বন্দি থাকাকালীন অবস্থায় তিনি যোগাযোগ রাখতেন। তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী যদি পড়েন, দেখবেন—গোপনে তিনি কীভাবে হাসপাতালে দেখা করতেন এবং দিকনির্দেশনা দিতেন।’
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান কী ছিল, তা জানতে তৎকালীন পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পড়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা যে রিপোর্ট লিখত, সেখানে ভাষা আন্দোলনে তিনি কী কী কাজ করতেন, তা স্পষ্ট রয়েছে। রিপোর্টের প্রথম খণ্ডেই অনেক কিছু জানতে পারবেন।
তিনি বলেন, ইতিহাস বিকৃত করা এবং বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করা বাংলাদেশে এক শ্রেণির মানুষের মজ্জাগত সমস্যা। এখনো যা কিছু করেন, তা তাদের ভালো লাগে না। কোনো ভালো কাজই তাদের পছন্দ হয় না। এরাই কিন্তু বাংলাদেশের বদনাম ছড়ায়। যাহোক, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে যে মুছে ফেলার চক্রান্ত হয়েছিল, এখন তো আর মুছতে পারবে না। এটা স্বীকার করে না যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস ঘোষণা করা, ছুটি ঘোষণা, শহিদ মিনার তৈরি করার প্রকল্প করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। ভাষা আন্দোলন থেকে যে চেতনা, তার থেকেই আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আসে। জাতির পিতা এটি তার আত্মজীবনীতেও লিখেছেন—১৯৫২ সালে শুরু হওয়া আন্দোলন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।’
তিনি বলেন, জাতির পিতার অবদানকে খাটো করার চেষ্টা করা হলেও ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না। তিনি (বঙ্গবন্ধু) তো থেমে থাকেনি। যতবার গ্রেপ্তার করেছে, আবার তিনি বেরিয়ে আন্দোলন করেছেন।
এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। অথচ, তারা নানান উপায়ে বঙ্গবন্ধুকে মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে চলে যায় আমাদের পতাকা। ইনডেমনিটি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করেছে। খুনিদের পুনর্বাসন করে নানা জায়গায় পদায়ন করেছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে তুলে দিয়েছে আমাদের দেশের পতাকা।
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. নুরুল হুদা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।