রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪.৫ শতাংশ পোশাক খাত থেকে আসে। এ খাতে কর্মরত ৪০ লাখ শ্রমিক। তাদের ৬০ শতাংশই নারী। অথচ, পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নের দিকটি অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে। আবার প্রতিযোগিতামূলক বাজার পরিস্থিতি ও পোশাক খাতে অটোমেশনের প্রভাবে অনেক কর্মী চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন।
বর্তমানে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় অনেক কর্মী পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারছেন না। অথচ, এই খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে নারী কর্মীদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পুষ্টি উন্নয়নে জোর দেওয়ার জরুরি। এতে পোশাক খাতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা শুধু নয়, টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সহজ হবে।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সংলাপে এসব অভিমত ব্যক্ত করেন পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা।
দেশের বিজনেস কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে। পোশাক শিল্পের টেকসই উন্নয়নে নারী শ্রমিকদের কল্যাণে করণীয় ও সুপারিশ তুলে ধরতে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। সংলাপ সঞ্চালনা করেন লাইটক্যাসল পার্টনার্সের বিজনেস কনসালট্যান্ট সামিহা আনোয়ার।
এতে বক্তব্য রাখেন—বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. সেলিম হোসেন, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. এম মাসরুর রিয়াজ, লাইটক্যাসল পার্টনার্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন, দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট পরিচালক আইনি ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্সের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, বাংলাদেশে ইউএনডিপির বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস স্পেশালিস্ট ডা. মেহরুনা ইসলাম চৌধুরী, নিউ এইজ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা, বিজনেস ইনেশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) সিইও ফেরদৌস আরা বেগমসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এটা সত্য যে, কিছু কারখানার মালিক এবং স্টেকহোল্ডার নারী শ্রমিকদের কল্যাণে নিজের খরচে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যা সত্যি প্রসংশনীয়। তবে, অধিকাংশ মালিক শ্রমিকদের কল্যাণে তেমন উদ্যোগ নেননি। ’লাইটক্যাসল বুনন ২০৩০ ও ল্যান্ডস্কেপিং সমীক্ষা’য় এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
বক্তারা আরও বলেন, পোশাক খাতে উৎপাদন বাড়াতে ন্যায়সঙ্গত মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের সুস্থতা ও পুষ্টি উন্নয়নের দিকটি উপেক্ষা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ নিলে নারী কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এতে তাদের কাজের স্পৃহা বাড়বে। বাড়বে উৎপাদনশীলতা।
সংলাপে প্রতিযোগিতামূলক বাজার বিবেচনায় বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে: পোশাক খাতে বেশ ক্রমবর্ধমান অটোমেশনের প্রভাবে শ্রমিকদের চাকরি হারানোর আশঙ্কা, এই খাতে জেন্ডার বৈষম্য বৃদ্ধি, নারী কর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি, তাদের আর্থিক খাতে কম অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা।
অনুষ্ঠানে ’পোশাক খাতে নারী কর্মীদের স্বাস্থ্য, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং সামাজিক অধিকার’ শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট কনসালট্যান্ট ড. জুলিয়া আহমেদ। এছাড়া, ’গার্মেন্ট কর্মীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, আপস্কিলিং এবং রিস্কিলিং’ শীর্ষক আরেকটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন রেডিমেড গার্মেন্ট (আরএমজি) বিশেষজ্ঞ মো. জামাল উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. সেলিম হোসেন বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য পোশাক খাতে নারী শ্রমিকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি পোশাক খাতকে দেশের ‘অর্থনীতির মেরুদণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং এ খাতের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রসঙ্গত: ‘বুনন ২০৩০’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এইচএম ফাউন্ডেশন। প্রকল্পটি এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় 'অপরাজিতা: বাংলাদেশে কাজের ভবিষ্যতের সম্মিলিত প্রভাব' শীর্ষক উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে নারী পোশাক শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ জীবিকা রক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে।
’বুনন ২০৩০’ শিরোনামে এক উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফেকচেরার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই খাত থেকে রপ্তানির পরিমাণ ৪৬.৯৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি।