জাতীয়

মসজিদের জমি দখল, যা বললেন জমিমালিক সাবিনা মমতাজ

রাজধানীর শরীফবাগ জামে মসজিদের কো‌নও জমি দখল হয়‌নি দাবি করে মালিকদের একজন সাবিনা মমতাজ বলেছেন, তার পরিবার প্রথম থেকেই এই মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও অনুদান দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা জমি তো দখল করিইনি, বরং মসজিদের পূর্বদিকে ৫ ফুট জায়গা আমার পরিবার ছেড়ে দিয়েছি, যা মসজিদ কমিটি ও এলাকার সকলের জানা। মসজিদ কমিটির তৎকালীন সভাপতি, সেক্রেটারি ও অন্যান্য সদস্য শাহাবুদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হেলাল উদ্দিন ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মসজিদের পূর্বদিকের সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়। 

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান জমিমালিক সাবিনা মমতাজ।

সংবাদ সম্মেলনে সাবিনা মমতাজ বলেন, টাকার অভাবে এক পর্যায়ে মসজিদের জমি রেজিস্ট্রেশন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। তখন আমার পরিবার এককালীন ২২ লাখ টাকা অনুদানের চেক দেয় এবং মসজিদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়। মসজিদটি আল্লাহর রহমতে আলোর মুখ দেখতে পায়। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মসজিদের বিভিন্ন প্রয়োজনে অনুদান দিয়ে আসছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, সে মসজিদের বাথরুমগুলো তাদের দেয়াল পর্যন্ত নিয়ে আছে, যার জন্য দুর্গন্ধে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মসজিদ কমিটি রাজউকের নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে মূল মসজিদ ভবনটি মমতাজ পরিবারের পশ্চিম পাশের দেয়াল পর্যন্ত ও মসজিদের উত্তর পাশের কালাম সাহেবের সীমানা প্রাচীর ওপর পর্যন্ত নির্মাণ করে। কালাম সাহেবের ছেলে আফরোজ এই ব্যাপারে রাজউকে অভিযোগ দায়ের করেন।

সাবিনা বলেন, মসজিদের নামে যে পরিমাণ জায়গা রেজিস্ট্রি হয়েছে তার চেয়ে বেশি জায়গা দখল নিয়ে মসজিদ ভবনটি নির্মাণ করা হয়। অথচ কমিটি প্রচার করে যে, জায়গা কম আছে অর্থাৎ জমি কম আছে বলে যেন আশপাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি মসজিদের নামে দখল করতে পারে।

তার পরিবার রাজউক থেকে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া নিজ ভূমিতে ৮ বোনের টাকায় বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, তখন থেকেই মসজিদ কমিটির দুষ্টু মহলটি মসজিদের সম্মুখে একাধিক প্রবেশ পথ থাকা সত্বেও সাবিনার জমির ওপর দিয়ে রাস্তা বের করার জন্য পবিত্র মসজিদকে ব্যবহার করে নানা ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকেন।

সা‌বিনার দাবি, স্বার্থান্বেষী মসজিদ কমিটি পবিত্র মসজিদকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে এর ভেতরে সুপারমার্কেট প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এজন্য মসজিদের সম্মুখে একাধিক প্রবেশ পথ থাকা সত্বেও মুসল্লিদের যাতায়াতের নাম করে ও মসজিদকে ব্যবহার করে আমার জমির মধ্য দিয়ে রাস্তা বের করার পাঁয়তারা করছে।

রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নানাভাবে প্ররোচিত করে ভবনের কাজ বন্ধ ও ভবনটি ভাঙার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দাবি করে তিনি বলেন, ২৭ এপ্রিল ২০২২ রাজউকের অনুমোদিত নকশা, রাজউককে জমা দিতে বলেন। ২৮ এপ্রিল ২০২২ রাজউক অনুমোদিত নকশার ফটোকপি জমা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নকশার কপিটি কমিটির প্রধান রাজউকের কাউকে মেনেজ হাতিয়ে নেয়, যা আইনের পরিপন্থী।

সাবিনা মমতাজ জানান, কমিটি প্রধান জিডিতে দাবি করেন যে আমার বাবা জীবিত থাকাবস্থায় বাড়ির পাশ দিয়ে মুসল্লিদের চলার পথ দিয়েছিলেন। এখানে উল্লেখ্য, আমার বাবা ২০০৭ সালে ইন্তেকাল করেছেন। অথচ শরীফবাগ মসজিদ ২০১৬ সালে জায়গা কিনে ও প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহলে ২০০৭ সালে মৃত ব্যক্তি কীভাবে ২০১৬ সালের তৈরি মসজিদের মুসল্লিদের চলার পথ দিলেন? এতেই প্রমাণিত হয়, তাদের সব অভিযোগ মিথ্যা। তাছাড়া তাদের স্বপক্ষে কোনও প্রকার ডকুমেন্টও দেখাতে তারা ব্যর্থ হন।

তিনি বলেন, মসজিদ কমিটি ২৮ জুলাই ২০২২-এ আমাদের জায়গার ব্যাপারে অভিযোগ করে থানায় জিডি করেন। পরবর্তীতে সবুজবাগ থানা কর্তৃপক্ষ জিডির প্রতিবেদন সিএমএম আদালতে জমা দেন, যাতে সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সিএমএম আদালতের সার্টিফাইড কপি সাংবাদিকদের সম্মুখে প্রদর্শন করেন, যাতে সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে মাননীয় সিএমএম আদালত রায় দিয়েছিলেন।

সাবিনা বলেন, ৪ আগস্ট ২০২২-এ স্থানীয় এমপির নির্দেশে সবুজবাগ থানায় এক বৈঠকে সকল প্রকার আলোচনা শেষে মসজিদ কমিটির এক উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান দাঁড়িয়ে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা এতদিন একটা বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলাম যে মসজিদের জায়গার পরিমাণ কম আছে। আসলে আমি দেখেছি মসজিদ যে পরিমাণ জমি রেজিস্ট্রি করেছে তার চেয়ে বেশি জায়গা তারা দখল করে মসজিদ নির্মাণ করেছে। আর সাবিনা মমতাজের জমিতে কখনও কোন রাস্তা ছিল না এবং এখনো নেই। মসজিদ তার কাছে কোনও জায়গা পাবে না’।

সাবিনা বলেন, মসজিদ কমিটির প্রধানের নির্দেশে ১০/১২ জনের এক সন্ত্রাসী দল ২৮ মার্চ ঠিক ইফতারের সময় অতর্কিত হামলা করে। এতে আমাদের ৮ বোনের একজন গুরুতরভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক।

পূর্বেও বেশ কয়েকবার তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে সে চক্রটি এবং জোরপূর্বক জমি দখল ও অবৈধভাবে সাইনবোর্ড লাগানোর চেষ্টা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে আমার পরিবার আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন এবং ভয়ে আছেন, কখন আবার হামলা হয়!

ওই ঘটনার পর প্রাণভয়ে, আত্মরক্ষার্থে এবং নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে ভবনের দক্ষিণ দিকে নিজেদের অরক্ষিত জায়গায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন জানিয়ে সাবিনা বলেন, কিন্তু সেদিন সকালে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে অনেক অনুনয়-বিনয় করে দেয়াল না ভাঙার অনুরোধ করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত না করে জোরপূর্বক সীমানা দেয়াল ভাঙার আদেশ দেন। এবং দেয়ালটির কিছু অংশ অবৈধভাবে ভেঙে দেন।

সাবিনা মমতাজ বলেন, যারা এই ভূমি দস্যুতা, জবর দখল হুমকিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে এবং এলাকার অস্থিরতার নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের নিকট দাবি জানাচ্ছি।