জাতীয়

ট্রেনে ঈদযাত্রা: শেষ দিনে স্বস্তিতে ঘরমুখো মানুষ

ঈদের এক দিন বাকি। প্রিয়জনদের সাথে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়া ঘরমুখো মানুষের সুবিধার্থে নিয়মিত ট্রেনের পাশাপাশি স্পেশাল ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ট্রেনে ঈদযাত্রায় চতুর্থ দিনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে সঠিক সময়ে রেল ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

এবার ঈদযাত্রার শুরু থেকেই ট্রেনে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছেন ঘরমুখো মানুষ। নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়ায় এবং টিকিট ছাড়া কাউকে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে না দেওয়ায় ঈদযাত্রার শেষ দিনে এসেও ভোগান্তি ছাড়া বাড়ি ফিরছেন যাত্রীরা। রোববার (১৬ জুন) সকালে কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র দেখা যায়।

এদিন সকাল থেকে কমলাপুরে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের চাপ ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই চাপ কমতে থাকে। এছাড়া প্রতিটি ট্রেনকেই প্রায় নির্দিষ্ট সময়ে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যেতে দেখা যায়। ফলে ভোগান্তি ছাড়াই ট্রেনে চড়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন যাত্রী।

সকাল ১০টায় কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেসের। ট্রেনটি ১০টা ৫ মিনিটে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যায়। সোনার বাংলা ও পারাবাত এক্সপ্রেসসহ সব ট্রেন সঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে।

ঢাকা রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত সবগুলো ট্রেন যথা সময়ে ছেড়ে গেছে। যাত্রীরা নিরাপদে স্বস্তিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন। অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ যাত্রীর চাপ কম।

রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম শিশির বলেন, ট্রেনে আজ ঈদ যাত্রার চতুর্থ দিন ছিল। সকালে ধূমকেতুসহ বিকেল পর্যন্ত যে সমস্ত ট্রেন যে সময়ে ছাড়ার কথা ছিল, তা সে সময়েই ছেড়ে গেছে। কোন ট্রেন এক মিনিটও বিলম্বে ছাড়েনি।

তিনি আরও বলেন, যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে ও সঠিক সময়ে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পেরেছে। সঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়তে পারায় যাত্রীরা স্বস্তি বোধ করেছেন। যাত্রীরা তাদের কাঙ্খিত আসনে বসতে পেরেছে। আগামীকাল ৫ম  ও শেষ দিনেও ট্রেনের যে সূচি রয়েছে, সে অনুযায়ী যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন বলে আশা করছি।

বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেনে ঈদযাত্রা গত ১২ জুন থেকে শুরু হয়েছে। এরই সাথে ‘ঈদ স্পেশাল’ ট্রেনও চলাচল করছে। আগামী ১৭ জুন দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদ যাত্রার প্রথম দিন ১২ জুন রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কিছুটা বিলম্বে ছেড়ে যায়। গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারও প্ল্যাটফর্ম এলাকায় যেন কোনও টিকিটবিহীন ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ঈদযাত্রায় ট্রেনের যাত্রীদের ভোগান্তি নিরসনে প্ল্যাটফর্ম এলাকায় প্রবেশমুখে র‌্যাব, পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) কন্ট্রোলরুম স্থাপন করেছে।

প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের মুখে ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনারদের (টিটিই) যাত্রীদের টিকিট চেক করতে দেখা গেছে। যাদের টিকিট নেই, তারা নির্ধারিত কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। তারপর যাত্রীরা প্ল্যাটফর্ম হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ট্রেনে উঠছেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বুধবার থেকে ২০টি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল শুরু করে। ঈদযাত্রার ভিন্ন ভিন্ন দিনে চলাচল করছে এসব ট্রেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের ট্রেন যাত্রার সুবিধার্থে এই ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঈদুল আজহায় চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (১, ২, ৩ ও ৪) চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (৫ ও ৬) ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা, ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (৭ ও ৮) চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ-চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল (৮ ও ৯) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে ১২ জুন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ও ঈদের পরে সাত দিন চলাচল করবে।

এছাড়া পার্বতীপুর ঈদ স্পেশাল (১৫ ও ১৬) জয়দেবপুর-পার্বতীপুর-জয়দেবপুর রুটে আগামী ১৩-১৫ জুন (৩ দিন) ও ঈদের পরে ২১-২৩ জুন (৩ দিন) চলাচল করবে।

অন্যদিকে, শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১১ ও ১২) ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব বাজার, শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (১৩ ও ১৪) ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ, গোর-এ-শহীদ ঈদ স্পেশাল (১৭ ও ১৮) পার্বতীপুর-দিনাজপুর-পার্বতীপুর, গোর-এ-শহীদ ঈদ স্পেশাল (১৯ ও ২০) ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও রুটে শুধু ঈদের দিন চলাচল করবে।